মালদা,17 জুলাই: ভোটের পর এবার ফুলহর নদী ভাঙনে বিধ্স্তব হরিশ্চন্দ্রপুর ৷ বর্ষার জলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে ফুলহর নদী ৷ বিপদসীমা থেকে এক মিটার নীচে থাকলেও হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের পাঁচ থেকে সাতটি গ্রাম ইতিমধ্যেই রাত জাগতে শুরু করেছে ৷ কারণ, ফুলহরের ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ জনবসতির 50 মিটারের মধ্যে চলে এসেছে নদী ৷ যে গতিতে নদীর জলস্তর আর ভাঙন বাড়ছে, তাতে যে কোনও সময় গ্রামগুলি বিপন্ন হতে পারে বলে অনুমান করছেন স্থানীয় মানুষজন ৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার নৌকাযোগে এলাকা পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন তৈরি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও ৷ যদিও তাঁর কথায় ভরসা করতে পারছেন না স্থানীয়রা ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের বিডিও বিজয় গিরি জানিয়েছেন, ফুলহর ভাঙনের খবর তাঁরা জেনেছেন ৷ পরিস্থিতির উপর তাঁরা নজর রেখেছেন ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি আছেন ৷ যদিও তাঁর আশ্বাসে ভরসা করতে পারছেন না খোদ তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য অবনী সাহা ৷ তিনি বলেন, "এখানে যেভাবে ফুলহরের প্রচণ্ড ভাঙন হচ্ছে ৷ প্রতি ঘণ্টায় এক থেকে দেড় কাঠা জমি নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে ৷ যে কোনও মুহূর্তে 100টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে৷ গ্রামের কেউ আতঙ্কে তিনদিন ধরে ঘুমোয়নি ৷"
তিনি আরও জানান, বিদ্যুতের পোল নদীর ভাঙনে কেটে যাচ্ছে ৷ অন্ধকারে সাপে কাটারও সম্ভাবনা রয়েছে ৷ কাছাকাছি কোনও হাসপাতাল নেই ৷ কাউকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হলে নদী পেরিয়েই যেতে হবে ৷ রাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে আর উপায় নেই ৷ এখানেই রোগীর মৃত্যু হবে ৷ কারণ, এই খরস্রোতা নদী রাতে পেরনো অসম্ভব ৷ অবনী আরও বলেন," ব্লক প্রশাসন, বিডিওকে গোটা ঘটনা জানিয়েছি ৷ এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কোনও হেলদোল দেখিনি ৷ তবে বিডিও আশ্বাস দিয়েছেন ৷"
আরও পড়ুন: 20 বছরেই গঙ্গায় তলিয়ে যাবে গোটা মালদা ? আতঙ্কে ভাঙনে জেরবার স্থানীয়রা
সোমবার নৌকা করে এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ ফোনে তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছু এলাকায় ফুলহরের পরিস্থিতি সত্যিই বিপজ্জনক ৷ তিনি জেলাশাসক এবং বিডিওকে পুরো বিষয়টি জানাচ্ছেন ৷ বিপন্ন এলাকার মানুষজনকে যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া যায়, তার জন্য তিনি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন ৷
ফুলহরের ভাঙনে এই মুহূর্তে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের কাউয়াডোল, রশিদপুর, উত্তর ভাকুরিয়া, দক্ষিণ ভাকুরিয়া, মিরপাড়া ও তাঁতিপাড়ার পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক ৷ যে কোনও মুহূর্তে গ্রামগুলি নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে ৷ পরিস্থিতি বুঝে নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষিজমি থেকে অপরিণত অবস্থাতেই কেটে নেওয়া হচ্ছে পাট ৷ গ্রামবাসীরাও ঘর ছাড়তে শুরু করেছেন ৷ অনেকে আবার ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার অপেক্ষায় ৷
রশিদপুর গ্রামের মেহেরাফসার বিবি বলছেন, "নদী ফুঁসছে ৷ পাড় কাটছে ৷ তিনদিন আগেই ভয়ে ঘর ছেড়েছি ৷ ডাঙা খুঁজে বেড়াচ্ছি ৷ তিনদিন ধরে পেটে দানাপানি নেই ৷ কোথায় থাকব, কী খাব, বুঝে উঠতে পারছি না ৷ দিনে যেমন হোক কেটে যাচ্ছে ৷ কিন্তু রাতে ঘুমোনো যাচ্ছে না৷ নদীর ভয় তো আছেই, বিষাক্ত পোকামাকড়ের ভয়ও রয়েছে ৷ আমাদের জন্য প্রশাসন একটু ভাবুক ৷"
আরও পড়ুন: ফুলহরের জলে ডুবেছে একাধিক গ্রাম, ক্ষুব্ধ দুর্গত মানুষ