মালদা, 2 মার্চ: এমনটাও হয় ! গ্রামবাসীর টাকাপয়সা, সোনাদানা তো বটেই, গ্রামের এক বধূকেও কি না লোপাট করে দিল প্রতারক জাদুকর (Fraud Magician eloped with Housewife) ! ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শান্তিপুর গ্রামে ৷ বউ হারিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন স্বামী ৷ ঘটনায় স্তম্ভিত পুলিশও ৷
মালদা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের অধীনস্ত শান্তিপুর গ্রামটি সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সীমানায় অবস্থিত ৷ গ্রামের 100 শতাংশ মানুষই হতদরিদ্র ৷ শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত তাঁরা ৷ সেই গ্রামেই নাকি হানা দিয়েছিল এক জাদুকর ! সাতদিন গ্রামে ছিল সে ৷ প্রতি রাতে সাইকেলের খেলা দেখাত ৷ আর দিনের বেলায় আলাপ জমাত সরল ও সাদাসিধে মানুষগুলোর সঙ্গে ৷ কাউকে বলত, বাড়ির উঠোনে সোনা পুঁতে রাখতে হবে ! তাহলেই নাকি বাড়িতে সুখ, শান্তি আসবে ! আবার কাউকে বলত, অপদেবতার হাত থেকে বাড়ি রক্ষা করতে হবে ! সে মন্ত্র পড়ে বাড়ি বেঁধে রাখবে ! কিন্তু, তার জন্য খরচ করতে হবে ৷ এভাবে কারও কাছ থেকে 2 হাজার, তো কারও কাছ থেকে 3 হাজার টাকা আদায় করেছে সে ৷
দিনসাতেক এভাবে গোটা গ্রামকে বোকা বানানোর পর হঠাৎই উধাও হয়ে যায় সেই জাদুকর ৷ তখনই লোকে বুঝতে পারে, আদতে সে ছিল ভণ্ড ৷ গ্রামবাসীর দাবি, গ্রাম ছাড়ার সময় এলাকার বধূকেও ফুসলিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে ওই ভণ্ড জাদুকর ৷ ওই বধূর নাম খুকি মল্লিক রায় ৷ বয়স 23 বছর ৷ এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷
এদিকে, স্ত্রীকে খুঁজে পেতে খুকির স্বামী, পেশায় শ্রমিক প্রসেনজিৎ রায় বৃহস্পতিবার মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ তিনি বলেন, "ওই জাদুকর গ্রামে থেকে সাতদিন ধরে সাইকেলের খেলা দেখিয়েছিল ৷ সেই খেলা শেষ হতেই রবিবার বিকেলে ও আমার বউকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে ৷ চারদিক খুঁজেও কোথাও বউকে পাইনি ৷ পরে জানতে পারি, ওই যাদুকর আমার বউকে নিয়ে পালিয়েছে ! বউকে ফিরে পেতে আজ আমি মালদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ গ্রামের আরও অনেকের কাছ থেকে ও টাকা আর সোনা হাতিয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: হৈমন্তীকে চাঁচলে দু’দিন লুকিয়ে রাখেন রাজ্যের মন্ত্রী, বিস্ফোরক বিজেপি সাংসদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভণ্ড জাদুকর গ্রামবাসীর কাছে যেন সাক্ষাৎ ভগবান হয়ে উঠেছিল ! প্রতি রাতে তাকে খাওয়ানোর জন্য লাইন লাগাতেন গ্রামের মেয়ে, বউরা ৷ মহিলারা তার পায়ে পড়ে হত্যেও দিতেন ৷ এমনই এক প্রতারিত মহিলা বিন্দু রায় বলেন, "ঘর বাঁধা আর পরিবারের উন্নতির কথা বলে ওই জাদুকর আমার সোনার দুল মাটিতে পুঁতে রাখে ৷ একথা কাউকে বলতে বারণ করেছিল ৷ গ্রামের একটা বউকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে ও ৷ সেই খবর পেয়ে মাটি খুঁড়ে দেখি, আমার সোনার দুল নেই ! শুধু আমি নই, আরও এক পড়শির কাছ থেকে সোনা, অন্য একজনের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে পালিয়েছে ওই জাদুকর ৷ আরও অনেকের কাছ থেকে অনেক কিছু নিয়েছে ৷ আমরা ওই জাদুকরের শাস্তি চাই ৷ আমরা চাই, আমাদের গ্রামের বউকে উদ্ধার করা হোক ৷" ইতিমধ্যেই ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ প্রাথমিকভাবে তাদের অনুমান, ওই ভণ্ড জাদুকর নদিয়া জেলার কোনও একটি এলাকার বাসিন্দা ৷