মালদা, 23 মে: এগরা, বজবজের পর এবার মালদা । সাত সকালে আচমকাই বাজির গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে মালদা শহরে । আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে দু'জনের । জানা গিয়েছে, মৃত রাজু ঋষি ছিলেন পেশায় ভ্যান চালক । ওই গুদাম থেকে কার্বাইড সরানোর কাজ করছিলেন তিনি । সেই সময় আচমকা গুদামের ভিতরে আগুন লাগে । শাটার পড়ে যাওয়ায় ভিতরেই আটকে পড়েন ওই কর্মী । সেখানেই ঝলসে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। খানিক পরেই জানা যায়, গণেশ কর্মকার নামে আরেক শ্রমিকের কোনও খোঁজ নেই ৷ পরে তাঁর দেহেরও হদিশ মেলে৷ এখনও খোঁজ মিলছে না আরও একজনের ৷
মঙ্গলবার সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ শহরের নেতাজি পৌরবাজারে বাবু সাহা নামে এক ব্যবসায়ীর গুদামে হঠাৎ বাজি ফাটার আওয়াজ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপরেই গুদাম থেকে অনর্গল ধোঁয়া বেরোতে দেখেন স্থানীয়রা। এরপরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা দমকল খবর দেন। মিনিট দশেক পরেই ঘটনাস্থলে চলে আসে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। এই মুহূর্তে আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। ঘটনাস্থলে রয়েছেন ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, স্থানীয় কাউন্সিলর শুভময় বসু। নিহতের সংখ্যা কত এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে স্বপন কুমার দাশ, ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার জানিয়েছেন, "আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে মৃতের সঠিক সংখ্যা জানা যাবে ৷" দুটি দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে ৷ পাশাপাশি জানিয়েছেন, আগুনে প্রায় ১৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তবে গুদামে বাজি মজুতের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি ৷
তিনি আরও বলেন, "এই মার্কেটে বিশাল একটি জলাধার রয়েছে৷ সেটা আমাদের খুব কাজে এসেছে৷ এমন জলাধার প্রতিটি বাজারে থাকা প্রয়োজন৷ ধোঁয়াতে সঠিক বোঝা না গেলেও আমাদের অনুমান, মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ বিদ্যুৎ নাকি কার্বাইড, আগুনের উৎস কী, তা এখনও পরিষ্কার নয় ৷ এখানে কতটা বাজি মজুত ছিল, তা জানতে পারিনি৷ তবে কার্বাইডেও বিস্ফোরণ হয় ৷ প্রবল ধোঁয়ায় আমাদেরও দু’জন কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৷ তবে আগুন কোথায় থেকে লাগল, সেটা আমাদের জানার কথা নয় ৷ বাজি মজুত ছিল কিনা তাও আমরা জানি না ৷ কিন্তু কোনও দোকানে বাজি মজুত রাখা উচিত নয় ৷ বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গেও কথা বলব ৷"
আরও পড়ুন: এগরার পর এবার বজবজ, বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত নাবালিকা-সহ 3
ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী জানান, "আগে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য ৷ পরে এনিয়ে যথাযথ তদন্ত করা হবে ৷ কয়েকটি দোকানে আগুন লেগেছে ৷ গুদামে মজুত দাহ্য পদার্থ থেকেই আগুন লাগে ৷ বাজির গুদাম থেকে আগুন লাগেনি ৷ কার্বাইড থেকে আগুনের উৎপত্তি ৷ তবে ঘটনাস্থলের আশেপাশে বাজির দোকান, গুদাম রয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, এক শ্রমিক আগুনের মধ্যে আটকে পড়েছে ৷ সে মারা গিয়েছে কিনা জানি না৷ তবে একটি কথা বলতে পারি, এক্ষেত্রে বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷"
প্রসঙ্গত, 16 মে এগরার বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে স্মৃতি এখনও তাজা । বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পক্ষে 11 জন । এরপর 21 মে বজবজ থানার অন্তর্গত নন্দরামপুর দায়পাড়ায় অবৈধ বাজি কারখানার গোডাউনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের খবর আসে । ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন মা ও মেয়ে-সহ তিনজন । এরপর মঙ্গলবার সাত সকালে মালদা বাজারে বাজির গুদামে আগুন লাগার খবর আরও একবার প্রশাসনকে ফেলেছে প্রশ্নের মুখে ।
উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরে এগরায় অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসে রাজ্য পুলিশ। জানা গিয়েছে, রাজ্য পুলিশের তরফে সাফ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে প্রত্যেক এলাকায় কোথায় কোথায় এই ধরণের বাজি কারখানা গড়ে উঠেছে এবং তা কারা পরিচালনা করছে, তার দিকে নজর রাখা ও প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হবে ।