মালদা, 10 ডিসেম্বর: গোটা দেশ যখন কৃষক আন্দোলনে উত্তাল। সেই সময় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার শিবিরে ফাঁদে ফেলে চাষিদের শোষণের অভিযোগ উঠছে মালদায়। অভিযোগ, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে চাষিদের থেকে 4 কেজি থেকে 7 কেজি পর্যন্ত ধলতা নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় কৃষকদের বদলে ভিন রাজ্য থেকে আসা চাষিদের প্রাধান্য দিয়ে ধান কিনছে মিলগুলি।
চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সহায়ক মূল্যে চাষিদের থেকে ধান কেনার শিবির করা হয়েছে। এক কুইন্টাল ধানের জন্য 1 হাজার 888 টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের কড়া নির্দেশিকা উপেক্ষা করে 4 কেজি থেকে 7 কেজি পর্যন্ত ধলতা নিচ্ছে মিল মালিকরা। শুধু তাই নয়, স্থানীয় কৃষকদের বদলে পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে আসা কৃষকদের ধান আগে কেনা হচ্ছে। ধান কেনার শিবিরে সরকারি আধিকারিক না থাকায় মিল মালিকরা নিজের ইচ্ছে মতো চাষিদের হয়রানি করছে।
পুরাতন মালদার কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক সরিফুল ইসলাম বলেন, “আজ আমি কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে এসেছি। কিন্তু এখানে ধলতা নেওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে কোনও ধলতা নেওয়া যাবে না। কিন্তু এখানে মিনিমাম 4 কেজি ধলতা নেওয়া হচ্ছে। ধানের একটু কোয়ালিটি এদিক ওদিক হলেই 7 কিলো পর্যন্ত ধলতা কেটে নেওয়া হচ্ছে। পুরাতন মালদার এই কিসান মাণ্ডিতে কোনও সরকারি আধিকারিক নেই। ফলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” একই বক্তব্য আরেক চাষি সাহিদ ইসলামের। তিনি বলেন, “চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়েছে। সেদিন জেলাশাসক, বিডিও এসেছিলেন। সেদিনই তিন কিলো করে ধলতা নেওয়া হয়েছিল। তারপরে আর কোনও সরকারি আধিকারিক আসেনি। এখন মিল মালিকরা নিজের ইচ্ছে মতো ধলতা নিচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী 17 শতাংশ ময়েস্চার থাকলে কোনও ধলতা নেওয়া যায় না। কিন্তু সেই পরিমাণ 14-15 শতাংশ হলেও কমপক্ষে চার কেজি ধলতা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই মালিকরা ধান নামাতে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে। একেকটা বস্তা দেখেশুনে নিতে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। যাতে আর কেউ ধলতা ছাড়া ধান বিক্রি না করতে পারে। এক কথায় চাষিদের ফাঁদে ফেলে শোষণ করা হচ্ছে। আমার ধানে 15.4 শতাংশ ময়েস্চার ছিল, তাতে 4 কেজি ধলতা নেওয়া হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে ক্যামেরার সামনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মিল মালিকরা। তাঁদের দাবি, সরকারিভাবে ধলতা নেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু তাঁদের বাধ্য হয়ে ধলতা নিতে হচ্ছে। সরকার প্রতি কুইন্টাল ধানের জন্য 68 কেজি চাল বুঝে নেয়। ধানে যদি ধূলো থাকে তবে কীভাবে প্রতি কুইন্টাল ধান থেকে ওই পরিমাণ চাল পাওয়া যাবে। সেই কারণেই আমাদের ধলতা নিতে হচ্ছে।