মালদা, 19 অক্টোবর: গঙ্গার প্রলয় ৷ পুজো শেষে ঘর ভাঙতে বাধ্য হলেন কয়েকশো মানুষ ৷ ভিটেহারা হয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন সেই গঙ্গারই পাড়ে ৷ চাইছেন, প্রশাসন তাঁদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক ৷ যদিও প্রশাসনের তরফে এই মুহূর্তে কিছুই জানানো হয়নি ৷
মালদা জেলায় গঙ্গা নদীতে বেশ কিছু চর রয়েছে ৷ তার মধ্যে কিছু চর বসবাসের উপযোগী ৷ প্রায় চার দশক আগে গঙ্গার ধাক্কায় ভিটেমাটি খোয়ানো মানিকচক ব্লকের এমনই সাড়ে পাঁচশো পরিবার নারায়ণপুর চরে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৷ চরের মাটিতে মাথার উপর ছাদ বানিয়েছিলেন ৷ উর্বর পলিমাটি মিশ্রিত জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছিলেন ৷ পরবর্তীতে সেখানে সরকারি প্রাথমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও গড়ে ওঠে ৷
এভাবেই চলছিল তাঁদের জীবন ৷ এবার সেই চরে ভয়ঙ্কর আগ্রাসন চালাচ্ছে গঙ্গা (Erosion in Ganges) ৷ তার তাণ্ডবে ইতিমধ্যে তলিয়ে গিয়েছে কয়েকশো বাড়ি ৷ এমনকী প্রাথমিক স্কুলটিও এখন গঙ্গাগর্ভে ৷ পরিস্থিতি যে আরও খারাপের দিকে এগোচ্ছে, তা বুঝতে বাকি নেই নদী নিয়ে ঘর করা মানুষজনের ৷ তাই সময় থাকতেই তাঁরা নিজেদের গড়া ঘর নিজেদের হাতে ভেঙেই চলে এসেছেন মানিকচক ঘাটে ৷ মালদার মূল ভূখণ্ডে ৷ আপাতত ঘাটের পাশেই আস্তানা গেড়েছেন তাঁরা ৷ তবে এখনও প্রশাসনের কোনও লোকজন কিংবা সাংসদ-বিধায়ক-মন্ত্রীরা তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি ৷

এমনই এক ভাঙন উদ্বাস্তু হরেরাম চৌধুরী বলেন, "নারায়ণপুর চরে প্রায় সাড়ে পাঁচশো পরিবার ছিল ৷ গত 15 দিন ধরে ওখানে গঙ্গার এমন ভাঙন শুরু হয়েছে যে আমরা সবাই দিশেহারা ৷ অনেক বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে ৷ চর থেকে যে ভাঙা বাড়ির কাঠামো নিয়ে আসব তাতেও সমস্যা ৷ নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না ৷ নৌকা পাওয়া গেলেও তার ভাড়া অনেক ৷ আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে সেই ভাড়া বহন করা যাচ্ছে না ৷ ইতিমধ্যে প্রায় তিনশো পরিবার মানিকচক লঞ্চঘাটের পশ্চিমে আস্তানা গেড়েছি ৷ পাঁচদিন ধরে না খেয়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছি ৷ অনেকে ইতিমধ্যে ভিক্ষে করতে বেরিয়ে পড়েছে ৷ কারণ, বাচ্চাদের খাবার নেই ৷ গঙ্গার জল খেয়ে জীবন বাঁচাতে হচ্ছে ৷ এখনও পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসেনি ৷ আমরা চাইছি, আমাদের জন্য একটা কলোনির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক ৷ যাতে আমরা অন্তত মাথাটা গুঁজতে পারি ৷ আমাদের বাচ্চারা যাতে পড়াশোনা করতে পারে ৷" (Erosion in Ganges hits people life in Malda)
আরেক ভাঙন উদ্বাস্তু ফিরোজ আলির বলেন, "চরে আর থাকা যাচ্ছে না ৷ ঘুমের মধ্যেই মানুষজন নিয়ে ঘর গঙ্গায় তলিয়ে যেতে পারে ৷ তাই অনেক মানুষ এখানে চলে এসেছে ৷ কিন্তু এখানে আমাদের খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ গঙ্গার ঘোলা জল বালতিতে রেখে পরে খেতে হচ্ছে ৷ সবচেয়ে বড় কথা, এসে থেকেই দেখছি, গঙ্গা এখানেও অল্পবিস্তর পাড় কাটছে ৷ নেতা-মন্ত্রী অথবা প্রশাসনের কেউ এখানে এখনও আসেনি ৷ আমরা সরকারের কাছে একটাই দাবি করছি, আমাদের জন্য একটা কলোনির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক ৷ আমরা বাঁচতে চাই ৷"
আরও পড়ুন: ঠাকুর জলে পড়তেই ফের ভাঙন শুরু, কালিয়াচকে মন্দির গিলে খেল গঙ্গা
বিষয়টি জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়াকে জানানো হলে তিনি আজই ভাঙন উদ্বাস্তুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মানিকচকের বিডিওকে নির্দেশ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ৷ তিনি আরও জানান, বিপন্ন মানুষজনকে সবরকম প্রশাসনিক সাহায্য করা হবে ৷