মালদা, 20 অক্টোবর: ষষ্ঠীর সকালে শহর জুড়ে পুজো মণ্ডপগুলিতে হইচই। স্তব্ধ শুধু রবীন্দ্রভবন মোড়। পঞ্চমীর রাতে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে গিয়েছিল মালদার আমরা সবাই ক্লাবের প্যান্ডেল। বৃহস্পতিবার সেই পুজোর পাশে দাঁড়ালেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রশাসনের পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যম মারফৎ খবরটি গিয়ে পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এরপরই মালদার গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীকে ফোন করেন তিনি। এবং জানতে চান বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে ৷ এরপরই এই উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই পুজোর সব দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি। নিজে স্বশরীরে যেতে না পারলেও কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীকে সবটা দেখে নিতে বলেছেন তিনি। উৎসব সকলের জন্য আনন্দ বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। সেখানে এই সংকট কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তাই আগের মতন করে জাঁকজমক করে পুজো করা সম্ভব না হলেও যাতে পুজো বাতিল করতে না হয় উদ্যোক্তাদের সেটাই আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
পঞ্চমীতে উদ্বোধনের কথা ছিল ৷ তার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রতিমা-সহ গোটা প্যান্ডেল ৷ বহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে মালদার রবীন্দ্র ভবন সংলগ্ন ত্রিমোহিনী মোড় এলাকায় ৷ দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ তবে তার আগেই মণ্ডপটি পুরোপুরি পুড়ে যায় ৷ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশ সুপার-সহ জেলা পুলিশের কর্তারা ৷ খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছন কাউন্সিলরও ৷ প্রাথমিক তদন্তে দমকলকর্মীদের অনুমান শর্ট সার্কিট থেকে এই ঘটনা ঘটেছে ৷ এবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় সেখানেই আবার পুজোর উদ্যোগ শুরু হল।
এনেকেই এসে পুজো উদ্যোক্তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ফের লড়াইয়ের উৎসাহ দিচ্ছেন। লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন পুজো উদ্যোক্তারাও। নতুন করে শুরু হয়েছে প্যান্ডেল তৈরির কাজ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করে দেবীর বোধনের লড়াই। পঞ্চমীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায় মালদা শহরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের আমরা সবাই ক্লাবের পুজো মণ্ডপ। দমকলের দুটি ইঞ্জিন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন জেলাশাসক নিতীন সিংঘানিয়া, সদর মহকুমাশাসক পঙ্কজ তামাং-সহ অন্যান্যরা। একদিনের মধ্যে ফের প্যান্ডেল তৈরি করে পুজো করার লড়াইয়ে সামিল ওই পুজো উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সকলে। বাড়িয়ে দিয়েছেন আর্থিক সাহায্যের হাতও।
এদিন সকাল থেকে ওই পুজো মন্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাউন্সিলররা। তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনীষা সাহা মণ্ডল বলেন, “গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। জেলা পুলিশ প্রশাসন আমাদের সাহায্য করছে। পৌরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সকলের সহযোগিতায় নতুন করে পুজোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দুর্গাপুজো বাঙালির আবেগ। সেই জায়গা থেকে সকলে আতঙ্কে রয়েছেন, শোকগ্রস্ত হয়ে রয়েছেন। থানার আইসি হবিবপুর থেকে প্রতিমার ব্যবস্থা করেছেন। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার আর্থিক সাহায্য করেছেন। আমরা ষষ্ঠী শেষ হওয়ার আগেই মায়ের বোধন করব।”
আরও পড়ুন: 104টি পুজোকে বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান সরকারের
পুজো কমিটির সম্পাদক তরুণ ভৌমিক বলেন, “পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুজো মন্ডপ দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। পুজো মন্ডপে আমাদের যে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল, আমরা তা দিয়ে আগুন ছড়িয়ে যেতে দিইনি। পরে দমকল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সকলের সাহায্য নিয়ে আমরা নতুন করে পুজো করার ব্যবস্থা করছি। নিয়ম অনুযায়ী আমরা পুজো করব।”