ETV Bharat / state

Durga Puja 2023: রতুয়ার কাহালায় একইসঙ্গে পূজিত হয় দুর্গা-চণ্ডী

Durga and Chandi are Worshiped Simultaneously in Malda: দেবী দুর্গা এবং চণ্ডীর আরাধনা একইসঙ্গে ৷ মালদার কালাহা গ্রামের এই পুজো ৷ মূল মন্দিরের 20 ফুট নিচে পূজিত হন পাতালচণ্ডী ৷ আর তার উপরে দেবী দুর্গার আরাধনা হয় ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 21, 2023, 7:28 PM IST

মালদা, 21 অক্টোবর: গায়ে পুরনো গন্ধ সে অর্থে লেগে নেই ৷ কিন্তু, অভিনবত্ব রয়েছে ৷ এখানে একইসঙ্গে পূজিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা এবং চণ্ডী ৷ দোতলা মন্দিরের উপরে চলছে দুর্গাপুজো ৷ নীচে হচ্ছে পাতালচণ্ডীর আরাধনা ৷ 1967 সাল থেকে এভাবেই পুজো হচ্ছে মালদার রতুয়ার কাহালা গ্রামে ৷ যদিও এই দুর্গাপুজোর জন্ম 1964 সালে ৷

1964 সালে কাহালা গ্রামের কিছু বাসিন্দা দুর্গাপুজোর শুরু করেন ৷ তাঁরা সবাই মূলত মৈথিলী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ৷ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন শক্তিরঞ্জন মিশ্র ৷ বিপুল সম্পত্তির অধিকারী ৷ কোনও কারণে তাঁর সঙ্গে দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের বিবাদ হয়েছিল ৷ মনক্ষুন্ন হয়ে শক্তিবাবু নিজের আমবাগানের দেড় বিঘা জমিতে নির্মাণ করেন একটি মন্দির ৷ ঠিক করেছিলেন, তিনি নিজে ওই মন্দিরে দুর্গাপুজো করবেন ৷ পুজো শুরুও করেছিলেন তিনি ৷ 1967 সালে গ্রামের দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাঁর মন কষাকষি দুর হয় ৷ সেবছরই ওই পুজো উঠে আসে তাঁর তৈরি মন্দিরে ৷

কিন্তু, তারপরেও মানসিক শান্তি পাননি শক্তিরঞ্জন মিশ্র ৷ 1980 সালে তিনি তীর্থ ভ্রমণে বেরোন ৷ উত্তর ভারতের নানা তীর্থে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ৷ সেই সময় কোনও এক পাহাড়ে তাঁর সঙ্গে এক সন্ন্যাসীর পরিচয় হয় ৷ নিজের মনোকষ্ট শক্তিবাবু তাঁকে খুলে বলেন ৷ ওই সন্ন্যাসী শক্তিবাবুকে একটি অষ্টধাতুর চণ্ডীমূর্তি দেন ৷ তাঁকে বলেন, দুর্গামন্দিরের গর্ভগৃহের অন্তত 20 ফুট নীচে চণ্ডীর ওই মূর্তি স্থাপন করতে হবে ৷ মূর্তি স্থাপনের আরও অনেক পদ্ধতির কথা শক্তিবাবুকে জানান তিনি ৷ কিন্তু, অত জটিল বিষয় শক্তিবাবু আয়ত্ত করতে পারেননি ৷

তিনি সন্ন্যাসীর কাছে আর্জি জানান, মূর্তিটি তাঁকেই স্থাপন করে দিতে হবে ৷ শক্তিবাবুর আর্জি উপেক্ষা করতে না পেরে ওই সন্ন্যাসী কাহালা গ্রামের মন্দিরের নীচে সেই চণ্ডীমূর্তি স্থাপন করেন ৷ তখন থেকেই ওই মন্দিরে একসঙ্গে হয়ে আসছে দুর্গা ও পাতালচণ্ডীর পুজো ৷ দুর্গাপুজো বছরে একবার হলেও চণ্ডীপুজো চারবার হয়ে থাকে ৷

আরও পড়ুন: খড়গপুরের প্রেমবাজারের পুজো মণ্ডপে ঘুমর নাচ

এই মন্দিরেই মৃত্যু হয়েছিল ওই সন্ন্যাসীর ৷ তাঁর ইচ্ছেতে মন্দির চত্বরে একটি নিমগাছের নীচে তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হয় ৷ দু’বছর পর মারা যান শক্তিবাবুও ৷ শুধু তাঁরা দু’জনই নন, এই গ্রামে দুর্গাপুজোর স্থপতিদের কেউই আর বেঁচে নেই ৷ এই পুজো শুরু হয় মহালয়া শেষে প্রতিপদ তিথি থেকে ৷ সেদিন থেকে মহাপঞ্চমী পর্যন্ত ধুমধাম করে চলে শুধুই পাতালচণ্ডীর পুজো ৷ মহাষষ্ঠীতে দুর্গার বোধন হয় ৷ দশমী পর্যন্ত একইসঙ্গে পুজো চলে দুর্গা ও চণ্ডীর আরাধনা ৷ দশমীতে দুর্গাপ্রতিমাকে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ফুলহরে বিসর্জন দেওয়া হয় ৷

বর্তমান পুজো কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য নারায়ণ মিশ্র জানালেন, “এই পুজো কাহালা সর্বজনীন দুর্গাপুজো হিসাবে পরিচিত ৷ 1964 সালে গ্রামের স্কুলের পাশে পুজোর প্রবর্তন করেছিল এলাকারই কয়েকটি পরিবার ৷ পাঁচ বছর পর পুজো এই মন্দিরে উঠে আসে ৷ এই পুজোয় বলি প্রথা রয়েছে ৷ সপ্তমী ও অষ্টমী তিথিতে একটি করে ছাগবলি হয় ৷ নবমীতে শতাধিক বলি দেওয়া হয় ৷ প্রথম থেকেই কুমোরটুলির শিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করেন ৷ এবার প্রতিমা বানিয়েছেন কার্তিক পাল ৷ পুজো উপলক্ষে মন্দিরের পাশে মেলা বসে, এবারও বসেছে ৷ গ্রামেরই বাসিন্দা শক্তিবাবুর উদ্যোগে এই মন্দিরের নীচেই 1980 সাল থেকে শুরু হয়েছে চণ্ডীপুজো ৷ সেই পুজোও সমানভাবে চলছে ৷”

মালদা, 21 অক্টোবর: গায়ে পুরনো গন্ধ সে অর্থে লেগে নেই ৷ কিন্তু, অভিনবত্ব রয়েছে ৷ এখানে একইসঙ্গে পূজিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা এবং চণ্ডী ৷ দোতলা মন্দিরের উপরে চলছে দুর্গাপুজো ৷ নীচে হচ্ছে পাতালচণ্ডীর আরাধনা ৷ 1967 সাল থেকে এভাবেই পুজো হচ্ছে মালদার রতুয়ার কাহালা গ্রামে ৷ যদিও এই দুর্গাপুজোর জন্ম 1964 সালে ৷

1964 সালে কাহালা গ্রামের কিছু বাসিন্দা দুর্গাপুজোর শুরু করেন ৷ তাঁরা সবাই মূলত মৈথিলী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ৷ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন শক্তিরঞ্জন মিশ্র ৷ বিপুল সম্পত্তির অধিকারী ৷ কোনও কারণে তাঁর সঙ্গে দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের বিবাদ হয়েছিল ৷ মনক্ষুন্ন হয়ে শক্তিবাবু নিজের আমবাগানের দেড় বিঘা জমিতে নির্মাণ করেন একটি মন্দির ৷ ঠিক করেছিলেন, তিনি নিজে ওই মন্দিরে দুর্গাপুজো করবেন ৷ পুজো শুরুও করেছিলেন তিনি ৷ 1967 সালে গ্রামের দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাঁর মন কষাকষি দুর হয় ৷ সেবছরই ওই পুজো উঠে আসে তাঁর তৈরি মন্দিরে ৷

কিন্তু, তারপরেও মানসিক শান্তি পাননি শক্তিরঞ্জন মিশ্র ৷ 1980 সালে তিনি তীর্থ ভ্রমণে বেরোন ৷ উত্তর ভারতের নানা তীর্থে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ৷ সেই সময় কোনও এক পাহাড়ে তাঁর সঙ্গে এক সন্ন্যাসীর পরিচয় হয় ৷ নিজের মনোকষ্ট শক্তিবাবু তাঁকে খুলে বলেন ৷ ওই সন্ন্যাসী শক্তিবাবুকে একটি অষ্টধাতুর চণ্ডীমূর্তি দেন ৷ তাঁকে বলেন, দুর্গামন্দিরের গর্ভগৃহের অন্তত 20 ফুট নীচে চণ্ডীর ওই মূর্তি স্থাপন করতে হবে ৷ মূর্তি স্থাপনের আরও অনেক পদ্ধতির কথা শক্তিবাবুকে জানান তিনি ৷ কিন্তু, অত জটিল বিষয় শক্তিবাবু আয়ত্ত করতে পারেননি ৷

তিনি সন্ন্যাসীর কাছে আর্জি জানান, মূর্তিটি তাঁকেই স্থাপন করে দিতে হবে ৷ শক্তিবাবুর আর্জি উপেক্ষা করতে না পেরে ওই সন্ন্যাসী কাহালা গ্রামের মন্দিরের নীচে সেই চণ্ডীমূর্তি স্থাপন করেন ৷ তখন থেকেই ওই মন্দিরে একসঙ্গে হয়ে আসছে দুর্গা ও পাতালচণ্ডীর পুজো ৷ দুর্গাপুজো বছরে একবার হলেও চণ্ডীপুজো চারবার হয়ে থাকে ৷

আরও পড়ুন: খড়গপুরের প্রেমবাজারের পুজো মণ্ডপে ঘুমর নাচ

এই মন্দিরেই মৃত্যু হয়েছিল ওই সন্ন্যাসীর ৷ তাঁর ইচ্ছেতে মন্দির চত্বরে একটি নিমগাছের নীচে তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হয় ৷ দু’বছর পর মারা যান শক্তিবাবুও ৷ শুধু তাঁরা দু’জনই নন, এই গ্রামে দুর্গাপুজোর স্থপতিদের কেউই আর বেঁচে নেই ৷ এই পুজো শুরু হয় মহালয়া শেষে প্রতিপদ তিথি থেকে ৷ সেদিন থেকে মহাপঞ্চমী পর্যন্ত ধুমধাম করে চলে শুধুই পাতালচণ্ডীর পুজো ৷ মহাষষ্ঠীতে দুর্গার বোধন হয় ৷ দশমী পর্যন্ত একইসঙ্গে পুজো চলে দুর্গা ও চণ্ডীর আরাধনা ৷ দশমীতে দুর্গাপ্রতিমাকে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ফুলহরে বিসর্জন দেওয়া হয় ৷

বর্তমান পুজো কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য নারায়ণ মিশ্র জানালেন, “এই পুজো কাহালা সর্বজনীন দুর্গাপুজো হিসাবে পরিচিত ৷ 1964 সালে গ্রামের স্কুলের পাশে পুজোর প্রবর্তন করেছিল এলাকারই কয়েকটি পরিবার ৷ পাঁচ বছর পর পুজো এই মন্দিরে উঠে আসে ৷ এই পুজোয় বলি প্রথা রয়েছে ৷ সপ্তমী ও অষ্টমী তিথিতে একটি করে ছাগবলি হয় ৷ নবমীতে শতাধিক বলি দেওয়া হয় ৷ প্রথম থেকেই কুমোরটুলির শিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করেন ৷ এবার প্রতিমা বানিয়েছেন কার্তিক পাল ৷ পুজো উপলক্ষে মন্দিরের পাশে মেলা বসে, এবারও বসেছে ৷ গ্রামেরই বাসিন্দা শক্তিবাবুর উদ্যোগে এই মন্দিরের নীচেই 1980 সাল থেকে শুরু হয়েছে চণ্ডীপুজো ৷ সেই পুজোও সমানভাবে চলছে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.