মালদা, 7 নভেম্বর : আর আফিম নয়, এবার ব্রাউন সুগারের ব্যবসায় মেতেছে মালদা জেলার মাদক ব্যবসায়ীরা ৷ তার জন্য তৈরি হয়েছে নতুন করিডোর ৷ পুরুষদের সঙ্গে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে মহিলারাও ৷ আরও বড় বিষয়, শুধু পাচারের ক্ষেত্রেই নয়, মাদক তৈরির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠছে মালদা জেলা ৷ সব মিলিয়ে উদ্বেগে জেলা পুলিশ ৷ যদিও পুলিশের দাবি, এই ব্যবসার শিকড় উপড়ে ফেলার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ এক্ষেত্রে কোনও রেয়াত করা হবে না মহিলাদেরও ৷ যদিও এনিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি পুলিশ সুপার ৷
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮০ লাখ টাকার মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১ জনকে ৷ তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে ৷ কিন্তু কেন জাল টাকা কারবারে জেলার শীর্ষে থাকা মালদা মাদক কারবারের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠছে? পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মালদা জেলার বেশিরভাগ ব্লকে প্রচুর পরিমাণে পোস্ত চাষ হত ৷ পোস্তর ফল থেকে তৈরি আফিমের লোভেই ঝুঁকি নিয়েও সেই চাষ করত মাদক কারবারীরা ৷ মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে গরিব কৃষকদের সেই চাষের কাজে লাগানো হত ৷ সেই চাষিদের জমিতেই চলত পোস্ত চাষ ৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেআইনি এই চাষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয় জেলা পুলিশ ও প্রশাসন ৷ এই মুহূর্তে জেলার কোথাও সেই চাষ হচ্ছে না ৷ পুলিশের বক্তব্য, এই মুহূর্তে কোনও চাষি কিংবা কারবারীর ঘরে পোস্ত গাছের কোনও অংশই মজুত নেই ৷ ফলে তারা বিকল্প মাদক কারবারের সন্ধান চালাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই ৷ তারই ফলশ্রুতিতে জেগে উঠেছে ব্রাউন সুগারের ব্যবসা ৷ এই জেলায় ব্রাউন সুগার আমদানির দু'টি রুট তৈরি হয়েছে ৷ প্রথমত, কারবারীরা পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড থেকে এই মাদক আমদানি করছে ৷ কারণ, এখনও সেই রাজ্যের কিছু চর এলাকায় পোস্তর চাষ করা হচ্ছে ৷ তবে কারবারীদের পছন্দের রুট হল সিকিম ও নাগাল্যান্ড ৷ এই দুই রাজ্য থেকেই মূলত ব্রাউন সুগার মালদায় ঢুকছে ৷ সেই মাদক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মালদা সহ অন্যান্য জেলা ও রাজ্যে ৷
তবে শুধু কারবারই নয়, এই জেলার কালিয়াচকের বিভিন্ন এলাকায় আফিমের রস থেকে তৈরি হচ্ছে ব্রাউন সুগার ৷ সেই মাদক রস নিয়ে আসা হচ্ছে ভিন রাজ্য থেকে ৷ এই ঘটনায় চিন্তিত জেলা পুলিশ ৷ ইতিমধ্যে হানা দিয়ে এমন একটি কারখানা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ এই কারবারে এখন নেমে পড়েছে মহিলারাও ৷ সম্প্রতি পুলিশ দুই মহিলা মাদক কারবারীকে গ্রেপ্তার করেছে ৷ জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক মহিলাই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে ৷
এনিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ৷ তবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা এই জেলা থেকে মাদক ব্যবসার শিকড় উপড়ে ফেলার কাজ শুরু করেছেন ৷ তার জন্য তাঁদের নজরে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী ও মধ্যবর্তী দালালরা ৷ এখন মেয়েরাও এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে ৷ এটা উদ্বেগের ৷ তবে পুলিশ এই ব্যবসা বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর ৷ সেক্ষেত্রে কাউকে বেয়াত করা হবে না ৷