মালদা, 2 জানুয়ারি: “মাটির নীচে চলে যাওয়ার পর কি সরকারি ঘর পাব ! তখন ঘর নিয়ে আমি কী করব ! ওই ঘর তখন আমার কী কাজে লাগবে !”
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (PM Awas Yojana) উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পর প্রথম দফায় 25 হাজার আবেদনপত্র নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করে দিয়েছে মালদা (Malda) জেলা প্রশাসন ৷ কিন্তু এখনও ক্ষোভের আগুনে ফুটছেন পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের হালনা মহম্মদপুর সংলগ্ন ডাকাতপুকুর গ্রামের রণিতা খাতুন ৷
সরকারি ঘর নিয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁর গলা থেকে যেন এক ঝলক আগুন বেরিয়ে এল ৷ বললেন, “যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তাঁদের পরিবারের 2-3 জনের নাম এই যোজনায় আছে ৷ আমাদের ঘর নেই ৷ তালিকায় আমাদের নামও নেই ৷ বিডিও কিংবা পঞ্চায়েত, কেউ আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকায়নি ৷ কিছু বললে বলছে, যখন নাম আসবে, তখন ঘর দেবে ৷’’
এই প্রসঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কিন্তু সেই নাম আসবে কখন ? মরে যাওয়ার পর ! আমরা লোকের দুয়ারে কাজ করে খাচ্ছি ৷ চালচুলো নেই ৷ অথচ আমরা ঘর পাচ্ছি না ৷”
শুধু রণিতাই নন, ডাকাতপুকুর গ্রামের অসংখ্য গরিব মানুষ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে ব্রাত্য বলে অভিযোগ ৷ সরকারি ঘর পেতে তাঁরা অনেকবার স্থানীয় পঞ্চায়েত, এমনকি বিডিও অফিসেও হত্যে দিয়েছেন ৷ কাজ কিছু হয়নি ৷ এনিয়ে ক্ষোভে ফুটছেন তাঁরা ৷ সোমবার গ্রামে তাঁরা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন ৷ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন সাইনুর বিবিও ৷
তিনি বলেন, “যাঁদের দালান বাড়ি আছে, জমি আছে, তাঁদের বাড়িতেই সার্ভে হচ্ছে ৷ তারাই ঘর পাচ্ছে৷ অথচ আমাদের বাড়ি না থাকলেও সেই ঘর পাচ্ছি না ৷ আমরা কী অবস্থায় আছি, না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না ৷ আমাদের কাছে কেউ কোনোদিন এনিয়ে কিছু জানতেও আসেনি ৷ যাঁদের টাকা আছে, তাঁরা টাকা দিয়ে সার্ভে করিয়ে নেয় ৷ আমরা টাকা দিতে পারি না, আমাদের এনকোয়ারিও হয় না ৷”
বঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Elections 2023) প্রায় দোরগোড়ায় ৷ এই সময় সরকারি ঘর নিয়ে মানুষের গণবিক্ষোভ যে মোটেই সুখপ্রদ নয়, তা বিলক্ষণ বোঝেন তৃণমূল (Trinamool Congress) পরিচালিত যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নুর হক ৷ পরিস্থিতি বুঝে বিক্ষুব্ধ মানুষের পাশে থেকেই মন্তব্য করেছেন তিনি ৷
তিনি বলেন, “এই যোজনায় যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য, ঘর না পাওয়ায় তাঁদের ক্ষোভ হওয়া খুব স্বাভাবিক ৷ আমি তাঁদের ক্ষোভকে সমর্থন করি ৷ তাঁদের জন্য আমিও দুঃখিত ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কারও নাম ঢোকানোর অধিকার কোনও পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা প্রধানের নেই ৷ এটা অনেকে জানেন না ৷ অনেকে এনিয়ে মানুষকে ভুলও বোঝায় ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘2018 সালের শেষ দিকে আমরা প্রায় পাঁচ হাজার উপভোক্তার নামে ফর্ম জমা করেছিলাম ৷ কিন্তু তার মধ্যে মাত্র 100 জনের নাম তালিকায় রয়েছে ৷ ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের একজনের নামও এই তালিকায় নেই ৷ আমি বিষয়টি বিডিওর পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি ৷ গরিব মানুষ যাতে কিছুতেই বঞ্চিত না হয়, সেটা সরকারের দেখা উচিত ৷”
আরও পড়ুন: আবাস যোজনায় নাম নেই পাঁচটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি তৃণমূলের