মালদা, 25 অক্টোবর: তাঁরা তিন বোন ৷ তবে তুতো বোনদের হিসাবে ধরলে মোট সংখ্যাটা দাঁড়ায় 22 ৷ বোনদের মধ্যে ভাব ভালোবাসাও যথেষ্ট ভালো ৷ তাই বড় দুই দিদির পুজো শেষ হওয়ার পরই পুজো নেন ছোট বোন ৷ মঙ্গলবার সেই খাঙালি কালীর পুজো ঘিরে উৎসাহে ভাসছে ইংরেজবাজার ব্লকের কোতওয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের টিপাজানি গ্রাম ৷ প্রায় আড়াইশো বছর ধরে কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে এই পুজো হয় ৷ পারিবারিক এই পুজো বর্তমানে কার্যত বারোয়ারির রূপ নিয়েছে ৷ তবে এখনও একটি পরিবারের তরফেই পুজোর যাবতীয় আয়োজন করা হয় ৷ পুজো উপলক্ষে বসে মেলাও (different kali puja of Malda English Bazar) ৷
টিপাজানি গ্রামের পাশ দিয়ে বইছে কালিন্দ্রী নদী ৷ কথিত রয়েছে, প্রায় আড়াইশো বছর আগে ওই গ্রামের বাসিন্দা, হালদার পরিবারের কর্তা কালীর স্বপ্নাদেশ পান ৷ দেবী তাঁকে নির্দেশ দেন, কালিন্দ্রীর হাহাজান ঘাটে তাঁদের তিন বোনের কাঠামো ভেসে এসেছে ৷ তিনি যেন সেই কাঠামোগুলি তুলে পুজোর ব্যবস্থা করেন ৷ কিন্তু সবচেয়ে ছোট কাঠামোর বাৎসরিক পুজো হবে কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে ৷ সেই নির্দেশ পেয়েই নদীর ঘাটে ছুটে যান ওই ব্যক্তি ৷ দেখেন, সত্যিই তিনটি প্রতিমার কাঠামো ঘাটে ঠেকে রয়েছে ৷ তিনি কাঠামোগুলিকে জল থেকে তুলে আনেন ৷
আরও পড়ুন: প্রাচীন সাধনপীঠ বলিজুড়ি গ্রামে ক্ষ্যাপা কালীর আরাধনা
তবে তাঁর একার পক্ষে তিনটি কাঠামোর পুজো করা সম্ভব ছিল না ৷ তাই বড় দুটি কাঠামো তিনি এলাকারই দু’জনের হাতে তুলে দেন ৷ ছোট কাঠামোটি নিয়ে যান নিজের বাড়িতে ৷ সেই থেকে শুরু খাঙালি কালীর পুজো (Malda Kali Puja) ৷ পরবর্তীতে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি নাকি স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন, খাঙালি কালীরা মোট 22 বোন ৷ বড় দুই বোন হলেন ঝাপড়ি কালী ও ঝুরঝুরিয়া কালী ৷ বর্তমানে হালদার পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম এই পুজোর আয়োজন করছে ৷ দেবীর স্বপ্নাদেশে প্রথম থেকে খাঙালি কালীর প্রতিমা তৈরি করে আসছেন পরিবারের সদস্যরাই ৷
এবার এই পুজোর প্রতিমা বানাচ্ছেন সঞ্জয় হালদার ৷ তিনি বলেন,“খাঙালি কালীদের 22 বোন একই সঙ্গে কালিন্দ্রী নদীতে ভেসে এসেছিল ৷ আমাদের পূর্বপুরুষকে স্বাপ্নাদেশ দিয়ে দেবী পুজো করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ প্রথমবার স্বপ্ন পাওয়ার পরেও আমার পূর্বপুরুষ কোনও গুরুত্ব দেননি ৷ তিনি ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান ৷ তারপরেই তিনি কাঠামোগুলিকে নদী থেকে উদ্ধার করেন ৷ এর মধ্যে বড় বোন ঝাপড়ি কালীকে গ্রামের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ আর বাকি 21 বোন গ্রামের বাইরে আশ্রয় নেন ৷ ধানতলা যেতে পাকা রাস্তার ধারে খাঙালি কালীকে প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ আমাদের বংশের সদস্যরাই সেই পুজো করে আসছেন ৷ পাঁচ প্রজন্ম ধরে আমরা এই পুজো করছি ৷”
আরও পড়ুন: কালিয়াগঞ্জের কালীপুজোয় গেলেই পৌঁছে যাবেন মৌমাছির দেশে
হালদার পরিবারের এক বয়স্ক সদস্য পাঁচু হালদার বলেন,“এই পুজোর বয়স প্রায় আড়াইশো বছর ৷ তিন বোনের মধ্যে বড়, ঝাপড়ি কালী খুব শান্ত ৷ পরের বোন, ঝুরঝুরিয়া কালী খুব রাগী ৷ ওই দুই বোনের পুজো হয় অমাবস্যাতেই ৷ বড় দুই বোনের পুজো হওয়ার পর ছোট বোন খাঙালি কালীর পুজো হয় ৷ এই পুজোয় বলিপ্রথা চালু হয়েছে৷ দেড়শো থেকে দুশো পাঁঠা বলি দেওয়া হয় ৷ মঙ্গলবার রাত 10টা থেকে পুজো শুরু হবে ৷ চলবে বুধবার সকাল 10টা পর্যন্ত (Kali Puja 2022) ৷