মালদা, 25 জানুয়ারি: জেলার ক্ষুদ্র শিল্পপতিদের উৎসাহ দিতে বাম জমানাতেই মালদা শহরের এক প্রান্তে তৈরি হয়েছিল ফুড পার্ক ৷ মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোর দিতে সেই সময় এই পার্ক তৈরি করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী শৈলেন সরকার ৷ বর্তমানে সেই পার্কের একাংশে রয়েছে পুলিশ সুপারের দফতর ৷ ঠিক সেখানেই আজ একটি আচার ও সস তৈরির কারখানায় হানা দিয়েছিল খাদ্য সুরক্ষা দফতর ৷ ওই কারখানায় হানা চালিয়ে চোখ কপালে উঠেছে ওই দফতরের আধিকারিকদের ৷ আপাতত ওই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা (Department of Food Safety sealed factory) ৷ কারখানা থেকে বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে ৷
ফুড পার্কের ওই কারখানায় হানা দিয়ে খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নজরে পড়ে, সেখানে সস তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বেআইনি রং ৷ আচারের উপকরণ যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনও ব্যাপারই নেই ৷ সব কিছুই পড়ে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ৷ সস তৈরির টম্যাটো খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে ৷ বেশ কিছু টম্যাটো পচেও গিয়েছে ৷ নামী কোম্পানির মাদকের বোতলে লেবেল সেঁটে বিক্রি করা হচ্ছে সেই সস ৷ মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া বেশ কিছু সস ও আচারের বোতলও নজরে আসে আধিকারিকদের ৷ তাঁরা প্রতিটি জিনিসের নমুনা সংগ্রহ করেন ৷ কারখানার সমস্ত নথিপত্রও খতিয়ে দেখেন ৷
এ নিয়ে খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে চাননি ৷ তবে সূত্রের খবর, চলতি মাসে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা জেলায় 14টি অভিযান চালিয়েছেন ৷ তার মধ্যে রয়েছে একাধিক কারখানা, রেস্তরাঁ, খাবারের দোকান, এমনকী রাস্তার ধারে থাকা ধাবাও ৷ চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত তাঁরা 17টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খাদ্য সুরক্ষা বিধিতে মামলা রুজু করেছেন ৷ কিছু নামি রেস্তরাঁর লাইসেন্সও সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে ৷ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, জেলাশাসকের নির্দেশে এমন অভিযান চলতে থাকবে ৷
জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া বলেন, "মানুষের জীবন নিয়ে আমরা কাউকে ছেলেখেলা করতে দেব না ৷ তার জন্য খাদ্য সুরক্ষা দফতর কিংবা পুলিশই নয়, একাধিক দফতরকে ময়দানে নামানো হয়েছে ৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রতি মাসে 32টি স্পেশাল ড্রাইভ চালানো হবে ৷ শুধু দুই শহরই নয়, অভিযান চলবে জেলা জুড়ে ৷ অপরাধের মান যাচাই করে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷ অনেকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে ৷ অনেক কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ মানুষের জীবন নিয়ে খেলার অভিযোগে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়েছে ৷ মানুষ টাকা খরচ করে খাবার কিনে খান ৷ সুতরাং মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া ব্যবসায়ীদের কর্তব্য ৷ মানুষ যাতে সুরক্ষিত খাবার থেকে পারে, সেকথা মাথায় রেখে আগামীতেও এমন অভিযান চলবে ৷"
আগামিকাল সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) ৷ আগামিকাল শহরের কোনও রেস্টুরেন্টে পা ফেলার জায়গা থাকবে না ৷ প্রতি বছরই এই ছবি দেখা যায় ৷ তার আগে খাদ্য সুরক্ষা দফতরের এই অভিযানকে স্বাগত জানাচ্ছেন সবাই ৷
আরও পড়ুন: বৈধ লাইসেন্স নেই, মালদা শহরে একাধিক পানীয় জলের কারখানা সিল করল খাদ্য সুরক্ষা দফতর