মালদা, 9 ডিসেম্বর : 21 দিনে পড়ল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের 122 জন অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলন ৷ তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন স্থায়ী অশিক্ষক কর্মীরাও ফলে এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মবিরতি পালন করছেন মোট 138 জন কর্মী৷ তাঁদের এই আন্দোলন চলাকালীনই পদত্যাগ করেন উপাচার্য স্বাগত সেন৷ সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠমহলে মহলে তিনি মালদায় না ফেরার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ৷ পদত্যাগী উপাচার্যের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ফিনান্স অফিসারও৷ এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরিও৷ ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন পড়ুয়ারা৷ নিজেদের জরুরি কাজে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও প্রতিদিন বিফল হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের৷
আন্দোলনের জেরে আরও যে সমস্যাটি দেখা দিতে শুরু করেছে তা হল, কিছুদিনের মধ্যেই চয়েস বেস্ড ক্রেডিট সিস্টেমে স্নাতকস্তরের পড়ুয়াদের ফার্স্ট সেমেস্টার পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা৷ কিন্তু এখনও সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নমুনাই তৈরি হয়নি৷ নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলপ্রকাশে চূড়ান্ত অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে৷ এই অচলাবস্থার কারণে সমস্যায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা 25টি কলেজের পড়ুয়ারা৷ আজ আন্দোলনকারী সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ শাখার সভাপতি শুভায়ু দাস বলেন, “২1 দিন ধরে আমাদের এই আন্দোলন চলছে৷ এই ২1 দিনের মধ্যে মাত্র একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তাঁর দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন৷ এতে একদিকে যেমন ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়েছেন, অন্যদিকে আমরাও অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি৷ আজ মাসের নয় দিন হয়ে গেল, অথচ এখনও পর্যন্ত আমাদের বেতন হয়নি৷ আমরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম আট হাজার টাকা বেতন পাই৷ ফলে বেতন না পেয়ে আমরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছি৷ এনিয়ে আমরা ফিনান্স অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি৷ তিনি বলছেন, তাঁর কাছে বেতন প্রদান নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ আসছে না৷ তাছাড়া বেতনের দায়িত্ব ফিনান্স অফিসারের একার নয়৷ এক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রারের প্রয়োজন৷ এই লাগাতার কর্মবিরতিতে আমরা সবসময় ছাত্রছাত্রীদের পাশে রয়েছি৷ তাঁদের জন্য আমরা হেল্প ডেস্কও খুলেছি৷ তবে রেজিস্ট্রার অনুপস্থিত থাকায় এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সূচিতে প্রভাব পড়তে পারে৷ সবকিছুর জন্যই দায়ী রেজিস্ট্রার৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেই আলোচনার ভিত্তিতে সমস্ত সমস্যার সমাধান হতে পারে৷”
এই বিষয়ে রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ তবে বেতন না হওয়ার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগী ফিনান্স অফিসার ভাস্কর বাগচি বলেন, “আমি বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক৷ আমাকে ফিনান্স অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল৷ এখানে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সবার বেতন হয়ে থাকে৷ প্রথমে প্রত্যেক কর্মীর স্যালারি স্টেটমেন্ট তৈরি হয়৷ সেই স্টেটমেন্ট খতিয়ে দেখে পাঠানো হয় অ্যাকাউন্টস্ অফিসারের কাছে৷ সেখানে আরেকবার স্টেটমেন্টগুলি পরীক্ষা করা হয়৷ সেখান থেকে ফাইল আমার কাছে আসে৷ আমি সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে পাঠাই রেজিস্ট্রারের কাছে৷ সেখান থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে চেক তৈরির জন্য ফাইল পাঠানো হয়৷ এরপর চেক তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর করার জন্য চেক পাঠানো হয় রেজিস্ট্রারের কাছে৷ তিনি চেকে স্বাক্ষর করলে তবেই তা ব্যাংকে জমা পড়ে৷ তবে রেজিস্ট্রার না থাকার জন্যই কর্মীদের বেতন এখনও হয়নি কিনা তা আমি বলতে পারব না৷”