মালদা, 3 ডিসেম্বর : গ্রামের এক পুকুরের ধারে থাকা আমগাছে নাবালক-নাবালিকার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার ৷ ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের নসরপুরে ৷ প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত কারণে এই জোড়া আত্মহত্যা বলে মনে করা হলেও দুই পরিবারের লোকজন তা মানতে নারাজ ৷ ফলে গোটা ঘটনা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা ৷ খবর পেয়ে দেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত ৷ তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ৷
আত্মঘাতী নাবালকের নাম পবিত্র সিংহ ৷ বয়স ১৭ ৷ বাড়ি স্থানীয় কুতুবপুর গ্রামে ৷ ওই গ্রামেরই কিশোরী নিরূপা সিংহ ৷ সে সম্পর্কে পবিত্রর আত্মীয় ৷ আজ তারও মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ নিরূপার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো গতকাল রাতেও খাবার খেয়ে বোনের সঙ্গে এক ঘরে ঘুমোতে চলে যায় সে ৷ আজ সকালে তার মা মনুদেবী দেখেন, বড় মেয়ে ঘরে নেই৷ তিনি মেয়ের খোঁজ শুরু করেন৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, নিরূপার দেহ পবিত্রের সঙ্গে আমগাছে ঝুলছে৷ এদিকে পবিত্রর বাড়ির লোকজন জানিয়েছে, গতকাল দুপুরে মাঠ থেকে ধান ঘরে আনতে বেরিয়েছিল সে৷ জমিতে সে ট্র্যাক্টরে ধান বোঝাই করে৷ কিন্তু তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না৷ সকালে সবাই পবিত্রর ঝুলন্ত দেহের কথা জানতে পারে৷ নসরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজেন সিংহ প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে সবার আগে দু’জনকে গাছে ঝুলতে দেখেন৷ তিনি গ্রামবাসীদের সেই খবর দেন৷ দুই বাড়ির লোকজনেরই দাবি, পবিত্রর সঙ্গে নিরূপার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে কেউ জানে না৷ তাদের কখনও একসঙ্গে ঘুরতেও দেখা যায়নি৷ দু’জনের মধ্যে কখনও এমন কোনও আচরণ কারোর চোখে পড়েনি৷
পবিত্রর বাবা দুলাল সিংহ ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক৷ তিনি কিছু বলতেই পারছেন না৷ কোনওরকমে বলেন, “সকালে ফোন মারফৎ এই খবর পাই৷ প্রথমে আমি এতে গুরুত্ব দিইনি৷ পরে ফের ফোন পেয়ে আমি এখানে এসে দেখি, ঘটনা ঠিক৷ ছেলে রাতে ঘরে না ফেরায় অনেক চেষ্টা করে তাকে ফোন করি৷ কিন্তু সে ফোন তোলেনি৷ ছেলে কেন এই সিদ্ধান্ত নিল জানি না৷ আমি কিছুই বলতে পারব না৷” নিরূপার বাবা তুতেন সিংহও গোটা বিষয়টি নিয়ে হতবাক৷ তিনি বলেন, “আমি কিছুই জানি না৷ আজ দেখছি, মেয়ে আমের গাছে ফাঁসি দিয়েছে ৷ কেন সে এমন কাজ করল বুঝেই পাচ্ছি না৷ ওদের মধ্যে কোনও সম্পর্কের কথাও জানতাম না৷” আত্মঘাতী দু’জনেরই এক আত্মীয় নিত্যানন্দ সিংহ বলেন, “ছেলে-মেয়ে দু’জনেই খুব ভালো ছিল৷ ওদের মধ্যে প্রেম ছিল কি না কেউ জানি না৷ ওরাও কখনও সেকথা কাউকে বলেনি৷ আজ ওদের কাণ্ড দেখে আমরা সবাই হতবাক৷ ওরা যদি বলত, তারা নিজেদের ভালোবাসে তবে আমরাই ওদের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতাম৷ কিন্তু যদি ওরা সেকথা কাউকে না বলে, তবে কে কী করতে পারবে?”