মালদা, 24 অগাস্ট : "প্রধানমন্ত্রী এখন বিদেশ গেছেন । তাই সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, এখন চিদম্বরম নিয়ে পড়ো । আসলে কাশ্মীরের বিজ্ঞাপন সরিয়ে রাখতেই চিদম্বরম ইশুকে এখন সামনে নিয়ে আসা হয়েছে ।" গতকাল দলীয় কর্মসূচিতে মালদায় এসে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ETV ভারতের ক্যামেরায় এই মন্তব্য করলেন CPI(M) নেতা মহম্মদ সেলিম । একাধিক বিষয় নিয়ে ETV ভারতের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি ।
গতকাল দলের বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে ETV ভারতের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বসেন মহম্মদ সেলিম । সেখানে তাঁর গলায় উঠে আসে বিভিন্ন প্রসঙ্গ । চিদম্বরম নিয়ে বলেন, "এখন গোটা দেশে একটাই আলোচনা । সেটা চিদম্বরম । সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, সোশাল মিডিয়ায় এখন সেটাই আলোচনা । আসলে এখন প্রধানমন্ত্রী তিনদিনের জন্য বিদেশে গেছেন । তাই দেশের মানুষ, সংবাদমাধ্যম, CBI-সহ সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, এখন চিদম্বরম নিয়ে পড়ো । চিদম্বরমের বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরেই মামলা চলছে । তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আগাম জামিন নিয়েছেন । চিদম্বরমও আদালতে গিয়েছিলেন । দুর্নীতির প্রশ্নে সরকার যদি কোনও পদক্ষেপ নেয় তবে বলার কিছু নেই । কিন্তু এক্ষেত্রে কী হচ্ছে? এখন CBI একটা খামে সবাইকে চিঠি পাঠাচ্ছে । সেই চিঠিতে বলা হচ্ছে, তুমি BJP-তে যোগ দিলে বহাল তবিয়তে দেশপ্রেমী হয়ে যাবে । আর যদি তুমি BJP-তে যোগ না দাও তবে তুমি হয় দেশদ্রোহী হবে, নয় জেলে যাবে । পিসি-ভাইপোসহ এভাবে সবাইকেই একটা নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, বেশি কথা বোলো না । এই রাজ্যে যেমন পুলিশ ও CID-কে মমতা ব্যানার্জি ও মুকুল বিরোধী দল ভাঙা কিংবা প্রতিবাদ আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন, ঠিক একই কায়দায় অমিত শাহ-মোদি জুটি এসব করে যাচ্ছেন । আমার প্রশ্ন, হঠাৎ রাতারাতি গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হল কেন? আসলে কাশ্মীরের বিজ্ঞাপন পিছনে সরাতেই চিদম্বরমের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে সাধারণ মানুষের সমস্যা পিছনে ফেলে দিতে চাইছে ।"
BJP-র জন্মাষ্টমী কর্মসূচি নিয়েও মন্তব্য করেন CPI(M)-এর এই পোড়খাওয়া নেতা । তিনি বলেন, "আমাদের দেশ ধর্মীয় বৈচিত্রে ভরা । গোটা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশেই ধর্মীয় ছুটি সবচেয়ে বেশি । পৃথিবীর সব ধর্মের আচার এখানে পালন করা হয় । কবি অতুলপ্রসাদ সেন তাই বলেছেন, নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান । কিন্তু সেখানে তিনি আরও বলেছেন, হও ধরমেতে ধীর, হও করমেতে বীর, হও উন্নত শির, নাহি ভয় । কিন্তু সেখানেই যখন ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মেশানো হয়, ধর্মকে রাজনৈতিক সমাবেশের অংশ করে নেওয়া হয়, তখন বিপদ ঘনীভূত হয় । তখন মাথা নত হয়ে যায় । যারা স্বাধীনতায় অংশগ্রহণ করল না, তারা এখন কর্মে নয়, ধর্মে বীর হওয়ার চেষ্টা করছে । তাতে কোনও আপত্তি নেই । কিন্তু তারা কর্মে ধীর হয়ে যাচ্ছে । 45 বছরের মধ্যে দেশে এখন সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব । দেশের অগ্রগতির হার কমছে । এসব ধামাচাপা দিতে ধর্মকে এখন আফিমের মতো বিক্রি করা হচ্ছে ।"
তৃণমূলনেত্রীর "দিদিকে বলো" কর্মসূচির পালটা হিসাবে এখন মেয়রকে জানাও কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য । এর পিছনে অবশ্য কোনও নকল খুঁজে পাচ্ছেন না এই CPI(M) নেতা । তিনি বলেন, "এক চাওয়ালা প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন বলে দিদিও এখন দিঘার দোকানে গিয়ে চা বানাচ্ছেন । গোটা দেশে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হল, মোদিকে শুনুন । চালু হল মন কী বাত । আর দিদি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বললেন, সবাই মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখ । পরে তিনিও বললেন, আমাকে শুনুন । এখন তিনি বিজ্ঞাপন দিয়ে, কার্ড বিলি করে বলছেন, আমাকে বলুন । পৌরসভা, পঞ্চায়েত, কর্পোরেশন সাধারণ মানুষের কথা শোনার জন্যই তৈরি হয়েছিল । সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীকে সেসব কথা বলতে পারেন না । পৌরসভা, কর্পোরেশনকে বলা হয় স্বায়ত্তশাসন । মানুষের সাধারণ সমস্যা শোনার জায়গা । আমাদের সময় গ্রামসভা থেকে শুরু করে কর্পোরেশন সব জায়গাতেই এই শাসন চালু ছিল । কিন্তু ক্ষমতা যখন কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়, তখন সবকিছুই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হবে । নর্দমা পরিষ্কারের জন্যও মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হবে । এখন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বাকিরা সব অপদার্থ । একমাত্র আমিই আছি । অর্থাৎ এখন ব্যক্তিকেই বড় করে দেখানো হচ্ছে । শোভন-বৈশাখি BJP-তে গেল । তারা কি দেশের জন্য BJP-তে গেল? না কি মামলা থেকে বাঁচতে গেল? কিন্তু ওরা দেখাবে, এখন আমরা এক নম্বর দেশপ্রেমী হলাম । আসলে যারা তৃণমূলে গিয়েছিল, তারা সবাই কাটমানি নিতে গিয়েছিল । লুটের টাকা নিতে গিয়েছিল । এখন নিজেদের বাঁচাতে বড় ডাকাত দলে তারা নাম লেখাচ্ছে । কিন্তু মানুষ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না ।"
এই মুহূর্তে CPI(M)-এর যা পরিস্থিতি তাতে কি তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব? আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের নকশা কী হবে? সেলিম বলেন, "একটা কথা কিন্তু মানতেই হবে । BJP কিংবা তৃণমূল, যে দলই হোক না কেন, CPI(M)-কে গালি দেওয়া ছাড়া কারও কোনও উপায় নেই । তারা আবার তলে তলে CPI(M) থেকে লোকজন দলে টানার চেষ্টা করছে । তাতে দুই দলের সম্মানই যেন খানিকটা বাঁচে ।"