মালদা, 6 মার্চ: যে সময় সাগরদিঘি উপনির্বাচনের মডেল সামনে রেখে রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে সিপিএম-কংগ্রেস, ঠিক সেই সময় বন্ধুরই ঘর ভাঙল আরেক বন্ধু ৷ সেই ছবি ধরা পড়েছে চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৷ রবিবার সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন লাল শিবিরের জনপ্রতিনিধি ৷ এনিয়ে শোরগোল পড়েছে জেলা থেকে রাজ্যস্তরে ৷
মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজনৈতিক সমীকরণটা অদ্ভুত (Malda News) ৷ আঠারোর পঞ্চায়েত নির্বাচনে 18 আসনের এই পঞ্চায়েতে কংগ্রেস আটটি, তৃণমূল 7টি ও সিপিএম 3টিতে আসনে জয় লাভ করেছিল ৷ ভোটের পর বাম-কংগ্রেস মিলে এখানে বোর্ড গঠন করে ৷ বাইশে শুরু হয়ে যায় অনাস্থার খেলা ৷ তৃণমূলের আনা অনাস্থায় সমর্থন জানিয়েছিলেন বাম ও কংগ্রেসের 11 জন সদস্য ৷ বোর্ড গড়ে তৃণমূল ৷ এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সিপিএমের সদস্য জাকির হোসেন যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে ৷ তুলে দিয়েছেন একাধিক প্রশ্ন ৷
জাকির হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই সিপিএমের সঙ্গে জড়িত ৷ তাঁর স্ত্রী 5 বছর এই পঞ্চায়েতে সিপিএমের প্রধান ছিলেন ৷ কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর কিসমতপুর বুথের এই সদস্য বলেন, "একজন সদস্য হিসাবে কাজ করতে গিয়ে পঞ্চায়েতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছিল ৷ মানুষের কাজ ঠিকমতো করতে পারছিলাম না ৷ আগামিদিনে কংগ্রেসের হয়ে মানুষের কাজ করাই আমার লক্ষ্য ৷ সিপিএমে আর ভালো লাগছিল না ৷ তাছাড়া কংগ্রেসের সুদিন ফের ফিরে আসছে ৷ সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৷ চাঁচল চিরদিনই কংগ্রেসের মাটি ৷ কংগ্রেসে না-থেকে এখানে মানুষের কাজ করা যাবে না ৷ তাই আমি কংগ্রেসে যোগ দিলাম ৷"
এই প্রসঙ্গেই কংগ্রেসের চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সভাপতি আনজারুল হক জনি বলছেন, "আমাদের এবং সিপিএমের এখন একটাই লক্ষ্য, বাংলা থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করা ৷ আমাদের নীতি ও আদর্শ ভালো লেগেছে বলেই জাকির হোসেন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন ৷ আমরা দলের উপরমহলে বলে দিয়েছি, কোনও পঞ্চায়েতে কংগ্রেস কিংবা সিপিএম নেতৃত্ব মনে করলে ভোটে জোট করতে পারে ৷ তাতে কোনও দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বাধা দিতে পারবে না ৷ মানুষ যা চাইবে, সেটাই হবে ৷"
আরও পড়ুন: সাগরদিঘির মডেলেই পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জোটে বাম-কংগ্রেস ? স্পষ্ট ইঙ্গিত সেলিম-সুজনদের
ভোটের আগে বন্ধুর হাতে নিজেদের ঘর ভাঙা নিয়ে সিপিএমের চাঁচল এরিয়া কমিটির সম্পাদক হারুণ আল রশিদ বলছেন, "কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে এখনও কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি ৷ তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কংগ্রেস এসব কাজ করছে ৷ কংগ্রেসকে আমরা বলব, জোটের স্বার্থে এসব দুর্নীতিগ্রস্থদের নিজেদের দলে জায়গা দেওয়া উচিত নয় ৷ তৃণমূল ও বিজেপিকে ঠেকাতেই গোটা রাজ্যে সিপিএম আর কংগ্রেসের জোট হচ্ছে ৷ সেই সময় দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের দলে নেওয়া ঠিক নয় ৷ কংগ্রেসের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের বিষয়টি দেখা উচিত ৷”
বিষয়টি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের মিডিয়া ইনচার্জ সৌম্য আইচ রায় বলেন, " এটা সম্পূর্ণ স্থানীয় বিষয় ৷ আমরা এমন কাজ কখনও করি না ৷ চাইও না ৷ চাঁচলের এই বিষয়টি আমাদের জানা নেই ৷ আমাদের এটা খতিয়ে দেখতে হবে ৷ তবে কংগ্রেস কখনই সম-মনোভাবসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের ঘর ভাঙাতে চায় না ৷"