মালদা, 25 জানুয়ারি : চলতি মাসের 8 জানুয়ারি বাম ও কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বনধে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কালিয়াচকের সুজাপুর ৷ আগুন, বোমা, গুলির ছবি ভাইরাল হয়েছিল দেশজুড়ে ৷ ভাইরাল হয় সেদিন ঘটনাস্থানে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্যও ৷ সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৩ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ ৷ অভিযোগে জড়ানো হয়েছে আরও পাঁচ হাজার মানুষকে ৷ এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছে বাম ও কংগ্রেস ৷ পুলিশের এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটি নীতির বিরুদ্ধে আগামী 28 জানুয়ারি সুজাপুরে সমাবেশ করতে চলেছে জেলা বামফ্রন্ট ৷ সেই সমাবেশে যোগ দেবেন মহম্মদ সেলিম ৷ যোগ দিতে পারেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও ৷ সমাবেশের জন্য ইতিমধ্যেই জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে ৷ যদিও এখনও পর্যন্ত ওই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ কিংবা প্রশাসন ৷ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে সুজাপুর কিংবা কালিয়াচকে বামফ্রন্টকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না ৷ আজ এনিয়ে প্রশাসনকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন এলাকার প্রাক্তন CPI(M) বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষ ৷ তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রশাসন অনুমতি দিক বা না দিক, নির্দিষ্ট দিনেই তাঁরা সুজাপুর কিংবা কালিয়াচকে সমাবেশ করবেন ৷ পারলে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারে ৷ তবে সেদিন কোনও ঘটনা ঘটলে তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনই দায়ী থাকবে ৷
এপ্রসঙ্গে বিশ্বনাথবাবু বলেন, “দেশের আর্থিক নীতি এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে ৷ আর সেসবের বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকে গত 8 জানুয়ারি দেশ জুড়ে ধর্মঘট পালিত হয় ৷ সুজাপুরেও সেদিন মানুষের অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ধর্মঘট পালিত হয়েছে ৷ মানুষের শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটকে সহ্য করতে না পেরে পুলিশ সেদিন অযথা লাঠিচার্জ করে ৷ পুলিশই নিজেদের গাড়িতে আগুন লাগায় ৷ সাধারণ মানুষের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়৷ সেই দোষ পুলিশ বাম ও কংগ্রেসের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করেছিল৷ যদিও সাধারণ মানুষ পুলিশের সেই চেষ্টা সফল হতে দেয়নি ৷ ভিডিয়োতে পুলিশের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ প্রমাণ হয়ে গেছে ৷ এরপরেও পুলিশ সাধারণ গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করে রেখেছে ৷ 33 জনের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করা হয়েছে ৷ আরও পাঁচ হাজার মানুষকে এই ঘটনায় জুড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ পুলিশই সেদিন গোটা ঘটনার জন্য দায়ী ৷"
তিনি আরও বলেন, "সেদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে শুধু কয়েকজন কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়ারকে সাসপেন্ড করে পুলিশ নিজেদের দায় সারতে চাইছে ৷ কিন্তু এর পিছনে পুলিশের আধিকারিকরাও জড়িত রয়েছেন ৷ আমরা চাই, ওই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ পুলিশের কাছে এসব দাবি রাখতে আমরা 28 জানুয়ারি সুজাপুরে সমাবেশ ডেকেছি ৷ সমাবেশে মহম্মদ সেলিম থাকবেন ৷ 30 হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হবেন ৷ সেদিন সেখানে কী ঘটবে তা আমরা বলতে পারব না ৷ কংগ্রেসকেও ওই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৷ কংগ্রেসের নেতৃত্বও সমাবেশে থাকবে৷ ওই সমাবেশে CAA, NRC ও NPR-এর বিরুদ্ধেও আওয়াজ তোলা হবে ৷”
বামেদের ডাকা সমাবেশে পুলিশ ও প্রশাসন এখনও অনুমতি না দেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলমও ৷ তিনি বলেন, “বামফ্রন্টের সমাবেশের জন্য কেন পুলিশ কিংবা প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না তা নিয়ে আজই আমি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব ৷ সুজাপুরের ঘটনা তো অনেকদিন আগেই ঘটে গেছে ৷ এখন সারা রাজ্য জুড়ে বাম-কংগ্রেসের বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে ৷ এখন মানুষের একটাই কর্মসূচি ৷ 'NO NRC, NO NPR ৷' অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশকে শেষ করে দেওয়ার পর সেখান থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে দেশ জুড়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করার জন্য মোদি এবং শাহ এসব করে চলেছেন ৷ একই ইশুতে রাজ্যের শাসকদলও আন্দোলন চালাচ্ছে ৷ তাহলে রাজ্যের পুলিশ সুজাপুরে বামেদের কর্মসূচিতে কেন বাধা দিচ্ছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবে ৷ আসলে ওরা জানে, কংগ্রেস আর বামফ্রন্ট একজোট হলে সুজাপুরে লাখ মানুষের ঢল নামবে ৷ তাহলেই সবাই বুঝে যাবে, মানুষ রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে নেই ৷ এতেই ওরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ৷ 2016 কিংবা 2018 সালে ওরা তার প্রমাণ পেয়েছে ৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও ওরা এখানে শূন্য হবে ৷”