মালদা, ১২ জুন : কালিয়াচকে ইন্দো-বাংলা সীমান্তে ধৃত চিনা নাগরিককে আদালতে পেশ করা হল ৷ আজ সাতদিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ওই বিদেশিকে জেলা আদালতে পেশ করে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ গতকাল রাতেই ধৃত চিনা নাগরিককে কালিয়াচক থানার অধীনস্থ গোলাপগঞ্জ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ ।
গত ১০ জুন সকালে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের আকন্দবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিক সুলতানপুর গ্রাম থেকে হান জুনেই নামে ৩৬ বছরের চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করে বিএসএফ ৷ পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তার বাড়ি চিনের হুবেই প্রদেশে ৷ তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, দুটি আইফোন, একটি বাংলাদেশি, একটি ভারতীয় ও দুটি চিনা সিমকার্ড, দুটি পেনড্রাইভ, মানি ট্র্যানজাকশন মেশিন, দুটি মাস্টারকার্ড, চিনের মুদ্রা, আমেরিকান ও হংকং ডলার সহ বাংলাদেশি ও ভারতীয় টাকা উদ্ধার করা হয়৷
তাকে জেরা করার সময় জানা যায়, এর আগেও সে একাধিকবার ভারতে এসেছে ৷ হরিয়ানার গুরুগ্রামে তার একটি হোটেলও আছে ৷ তার অংশীদার সান জিয়াং হোটেলটি দেখাশোনা করত ৷ হুবেইয়ে থাকাকালীন সান তাকে ১০-১৫টি ভারতীয় সিমকার্ড পাঠায় ৷ তারপরেই সানকে গ্রেফতার করে লখনউ এটিএস ৷ হানের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করা হয় ৷ শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে জারি হয় ব্লু কর্নার নোটিশ ৷ সেই কারণে সে ভারতীয় ভিসা পাচ্ছিল না ৷ তাই সে বাংলাদেশ থেকে এদেশে অবৈধভাবে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ৷
হান জুনেইকে জেরা করে মারাত্মক তথ্য পেয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও লখনউ এটিএস ৷ ১০-১৫টি নয়, ভুয়ো নথিপত্র দেখিয়ে হান জুনেই অন্তত ১৩০০ ভারতীয় সিমকার্ড চিনে পাচার করেছে ৷ এক্ষেত্রে সে ব্যবহার করেছে একাধিক ব্যক্তিকে ৷ জেরায় হান স্বীকার করেছে, এই সিমকার্ডগুলি তারা ব্যাংক জালিয়াতিতে ব্যবহার করত ৷ এই সমস্ত সিমকার্ড থেকে তারা ভারতীয় ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের ফোন করে তাদের ফোন হ্যাক করত ৷ তারপর তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব করত ৷ কিন্তু শুধুই কি গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েবের জন্য এত সিমকার্ড চিনে পাচার করা হয়েছিল ?
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, হানের ল্যাপটপ ও পেন ড্রাইভে ভারতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক তথ্য পাওয়া গিয়েছে ৷ মিলেছে চিনফান্ড সংক্রান্ত অনেক তথ্যও ৷ এদিকে গতকাল রাতে বিএসএফের তরফে হান জুনেইকে কালিয়াচক থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ম্যারাথন জেরা করতে শুরু করেন অন্তত আটজন আইপিএস পদাধিকারী পুলিশ অফিসার ৷ ধৃতকে সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে আজ মালদা জেলা আদালতে তোলা হয়েছে ৷ তবে খবর মিলেছে, তাকে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য আগামীকালই আদালতে ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন করতে চলেছে লখনউ এটিএস ৷
আরও পড়ুন...কালিয়াচকে ধৃত চিনা নাগরিকের কাছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক তথ্য, চরবৃত্তির সন্দেহ
এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে রাজি হননি পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ৷ ফলে এনিয়ে পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ তবে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত হান জুনেইকে ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য দায়রা বিচারক ৷