মালদা, 26 ডিসেম্বর : একই দড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা যুবক-যুবতি ৷ রতুয়া থানার বাহারাল আটগামা এলাকার ঘটনা ৷ পুলিশের অনুমান, প্রেমঘটিত কারণে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক ও যুবতি ৷ তবে এই ঘটনার পিছনে অনেকে খুনের তত্ত্বও খাড়া করছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷
মৃত যুবকের নাম বিজয় মণ্ডল(২২) ৷ রতুয়ার কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিগোবিন্দপুরের বাসিন্দা ৷ ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন বিজয় ৷ রবিবার দিল্লি থেকে কাজ সেরে ঘরে ফিরেছিলেন ৷ তাঁর বাবা সচিন মণ্ডলের একটি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে ৷ সচিনবাবুর তিন ছেলে ৷ বড় ছেলে অজয়ের বিয়ে দেন এলাকারই আটগামা গ্রামের মালা মণ্ডলের সঙ্গে ৷ পরবর্তীতে মালার বোন রাধার(১৯) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সচিনবাবুর মেজ ছেলে বিজয় ৷
বিজয়ের জ্যাঠা সীতেশ মণ্ডল বলেন, “মেয়ের বাড়ির লোক ভাইপোর এই প্রেম মেনে নিতে পারছিল না ৷ গত হোলিতে এনিয়ে মেয়ের বাবা গন্ধর্ব মণ্ডল ও তার বাড়ির লোকজন বিজয়কে মারধরও করে ৷ তারা এক বাড়িতে দুই মেয়ের বিয়ে দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল ৷ আজ সকালে শুনতে পাই, ভাইপো আর ওই মেয়েটি একইসঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আমবাগানে ঝুলছে ৷ এসে দেখি, যেভাবে ওরা গাছ থেকে ঝুলছে, আত্মহত্যা করলে এমনটা হওয়ার কথা নয় ৷ এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে কিনা তা পুলিশি তদন্তেই জানা যাবে ৷”
এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছে, দিদির শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াতের সুবাদেই বিজয়ের প্রেমে পড়েন রাধা ৷ তিনি মানিকচক কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী ৷ দুই বাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার ৷ বুধবার সকালে এলাকার লোকজন দু’জনকে কাহালা এলাকায় একটি আমবাগানে একই সঙ্গে ঝুলতে দেখেন ৷ স্থানীয়রা দুই পরিবারের পাশাপাশি খবর দেয় রতুয়া থানায় ৷ পুলিশ এসে দেহ দুটিকে উদ্ধার করে ৷
সচিনবাবু বলেন, “দু’দিন আগেই দিল্লি থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছিল বিজয় ৷ সে অসুস্থ ছিল ৷ ওষুধপত্র চলছিল ৷ আজই তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ৷ অন্যান্য দিনের মতো গতকাল রাতেও সবার সঙ্গে খাবার খেয়ে সে ঘুমোতে চলে যায় ৷ আমি পোলট্রি ফার্মে ঘুমোতে গেছিলাম ৷ আজ সকালে ফোন মারফত খবর পাই, ছেলে আত্মহত্যা করেছে ৷ ও যে রাধাকে এত ভালোবাসত তা একবারও আমাকে বলেনি ৷ তবে একবার এনিয়ে কথা উঠেছিল ৷ সেই সময় আমি ওকে বুঝিয়েছিলাম ৷ এরপর সে দিল্লিতে কাজে চলে যায় ৷ ওদের ভালোবাসা এতটা গভীর জানলে আমিই কথাবার্তা বলে ওদের বিয়ে দিয়ে দিতাম ৷”
এদিকে রাধার বাবা গন্ধর্ব মণ্ডল বলেন, “মেয়ে বা বিজয়, কেউই তাদের প্রেমের কথা আমাদের জানায়নি ৷ আমরা ওই বাড়িতে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছি ৷ ওদের প্রেমের কথা জানলে একই বাড়িতে আর এক মেয়ের বিয়ে দিতে আমাদের কোনও আপত্তি ছিল না ৷ এনিয়ে বিজয়ের সঙ্গেও আমার কখনও কিছু হয়নি ৷ ওকে মারধর করার যে অভিযোগ উঠছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে ৷ পুলিশি তদন্তেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে ৷”
রতুয়া থানার OC কুণাল দাস বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমাদের ধারণা, প্রেমঘটিত কারণেই আত্মঘাতী হয়েছে ওই যুবক-যুবতি ৷ দুটি মৃতদেহই ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব নয় ৷ এনিয়ে এখনও দুই পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি ৷ তবে গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু করা হয়েছে ৷”