মালদা, 26 মে : গতকাল রাতেই মুম্বই থেকে ফিরেছেন মানিকচকের বাসিন্দা । তিনি মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন । জানা যায়, তিনি কোরোনা আক্রান্ত । তাই দেরি না করে রাতেই তাঁকে পুরাতন মালদার নারায়ণপুরের কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করা হয় । কিন্তু, আজ সকালে উঠেই চক্ষু চড়কগাছ হাসপাতালের কর্মীদের । ওই রোগীকে সারা হাসপাতালের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না । সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের তরফে যোগাযোগ করা হয় মানিকচক থানায় ৷ তৎপর হয় পুলিশও ৷ মানিকচকের নারায়ণপুর এলাকায় ওই শ্রমিকের বাড়ি ৷ বাড়িতে ঢোকার আগেই পুলিশের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে ফের হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ বাড়িতে বিবি রয়েছেন, তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন ওই কোরোনা আক্রান্ত রোগী । পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের বলেন, গতকাল তাঁকে জোর করে ধরে আনা হয়েছিল ৷ তাঁর সঙ্গে জামাকাপড় কিংবা টাকাপয়সা কিছুই ছিল না ৷ সেসব আনতেই আজ সকালে হাসপাতালের পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাড়ি রওনা দেন ৷ ওই ব্যক্তি কীভাবে মানিকচক গেলেন, রাস্তায় কতজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷
অন্যদিকে, কোয়ারানটিন সেন্টারে খাবার ও পানীয় জল না পেয়ে আজ BDO অফিসের সামনে ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ দেখায় পরিযায়ী শ্রমিকরা ৷ দীর্ঘক্ষণ ধরে BDO-র সঙ্গে কথা বলার দাবি জানালেও তাদের সঙ্গে কথা বলেননি ব্লক প্রশাসনের কোনও কর্তা ৷ ক্ষিপ্ত শ্রমিকরা কোয়ারানটিন সেন্টারে ফিরে না গিয়ে হাঁটা দেয় বাড়ির পথে ৷ ঘটনায় আতঙ্কিত হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দারা ৷
এদিকে কোয়ারানটিন সেন্টারে খাবার, পানীয় জল কিংবা অন্যান্য পরিষেবা না পেয়ে আজ দুপুরে সেন্টারে থাকা প্রায় 50জন শ্রমিক হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ৷ তাদের অভিযোগ, তারা যখন ভিনরাজ্য থেকে ফিরে এসেছিল, তখন প্রশাসনের তরফে তাদের বলা হয়েছিল সেন্টারে গ্রাম পঞ্চায়েত সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবে ৷ সেন্টারে প্রত্যেকের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে ৷ লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে ৷ যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে ৷ কিন্তু হরিশ্চন্দ্রপুর হাইস্কুলের ওই কোয়ারানটিন সেন্টারে এখনও পর্যন্ত কোনও কিছুরই ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ পঞ্চায়েতের তরফে একদানা খাবার দেওয়া হয়নি ৷ শুধু তাই নয়, সেন্টারে পানীয় জলেরও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ তাই আজ তারা BDO-র সঙ্গে দেখা করতে ব্লক অফিসে যায় ৷ কিন্তু ঘণ্টাখানেক ধরে বিক্ষোভ দেখালেও ব্লক প্রশাসনের কোনও আধিকারিক তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি ৷ উলটে পুলিশ এসে তাদের বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার হুমকি দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের ৷
ওই সেন্টারে থাকা এক পরিযায়ী তপন সাহা বলেন, "আমরা কয়েকজন মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম ৷ পাঁচদিন আগে এখানে এসেছি ৷ কিন্তু এখানে আমাদের পঞ্চায়েতের তরফে কোনও খাবার দেওয়া হচ্ছে না ৷ অথচ আমাদের বলা হয়েছিল, পঞ্চায়েত থেকেই আমাদের খাবার দেওয়া হবে ৷ এখানে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই ৷ বাধ্য হয়ে বাড়ির লোকজন আমাদের খাবার দিয়ে যাচ্ছে ৷ সেখানেও আর এক ঝামেলা দেখা দিয়েছে ৷ এলাকার লোকজন প্লেটে করে আমাদের খাবার খেতে দেবে না ৷ প্লেটের মধ্যে নাকি কোরোনা ভাইরাস আছে ৷ এলাকার সবাইকে সুরক্ষা দিতেই আমরা এই সেন্টারে এসেছি ৷ এলাকার মানুষ সেটা বুঝতে পারছে না ৷ ব্লক প্রশাসনও আমাদের দেখছে না ৷ প্রতিদিন সেন্টারে ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকরা আসছে ৷ তাদের কার শরীরে কী আছে আমরা জানি না ৷ কারও শরীরে কোরোনা ভাইরাস থাকলে আমরাও সংক্রমিত হয়ে যাব ৷ আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে আমাদের লালারস পরীক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি ৷ কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কর্ণপাত করছে না ৷ তাই আজ আমরা ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে বাধ্য হয়েছি ৷ আমরা BDO-র সঙ্গে কথা বলতে চাই ৷"
এদিকে ঘণ্টাখানেক ধরে বিক্ষোভ দেখানোর পরও ব্লক প্রশাসনের কোনও কর্তা কিংবা আধিকারিক এই শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেননি ৷ এরপরই ক্ষিপ্ত শ্রমিকরা কোয়ারানটিন সেন্টারে না গিয়ে নিজের নিজের বাড়ি চলে যান ৷ এনিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রিসবা খাতুনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ তবে BDO অনির্বাণ বসু বলেন, "কে বা কারা এই শ্রমিকদের মধ্যে গুজব ছড়ায়, কোয়ারানটিন সেন্টারে থাকলে প্রতিদিন প্রতি শ্রমিককে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে ৷ আজ ব্লক অফিসের সামনে এসে শ্রমিকরা টাকার দাবি করেন ৷ তাঁদের বুঝিয়ে বলা হয়, এমন কোনও নির্দেশিকা নেই ৷ তবে ওই কোয়ারানটিন সেন্টারে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের যে খাবার দেওয়া হচ্ছে না, তা আমার জানা ছিল না ৷ আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি ৷ শ্রমিকরা আজ সেন্টারে ফিরে না গিয়ে নিজেদের বাড়ি চলে গেছেন ৷ তাঁরা যাতে সঠিকভাবে হোম কোয়ারানটিনে থাকেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷"