মালদা, ১৪মে : কোরোনা সংক্রমণের মধ্যেই হামলা চালাচ্ছে গঙ্গা ৷ মানিকচক ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে গঙ্গার অল্প বিস্তর ভাঙন ৷ ফলে কোরোনার সংক্রমণের পাশাপাশি উচ্ছেদের আতঙ্কে ভুগছে গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা ৷ শুখা মরশুমে গঙ্গার এই ছবি আসন্ন বর্ষায় কী হতে পারে, ভাবতে পারছে না কেউ ৷ ভাঙনরোধের কাজ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর ৷ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ৷
লকডাউনের মধ্যেই সম্প্রতি মানিকচকের গোপালপুর ও ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নদী তীরবর্তী এলাকায় ছোবল মারতে শুরু করে গঙ্গা ৷ ভাঙনে প্রতিদিন নদীর পাড় অল্প অল্প করে কেটে যাচ্ছে ৷ গঙ্গা এগোচ্ছে বাঁধের দিকে৷ অথচ বছরের এই সময় নদীভাঙন হয় না বললেই চলে ৷ এলাকাবাসীর বক্তব্য, এই ঘটনার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দায়ী৷ দুই সরকারই গঙ্গার ভাঙনরোধে উদাসীন৷ শুখা মরশুমে কাজ করা হয় না৷ 2014 সালে শেষবারের মতো মানিকচক ব্লকে ভাঙনরোধের কাজ হয়েছিল ৷ কেন্দ্রীয় সরকারই সেই কাজ করে ৷ কিন্তু সেই শেষ, তারপর থেকে কাজ প্রায় বন্ধ ৷ কয়েকদিন আগে ভূতনি চরের হীরানন্দপুরে সেই কাজ শুরু হলেও তা চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে ৷
ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দা কার্তিক দাস বলেন, “আগে গ্রাম অনেক দূরে ছিল ৷ গঙ্গায় কাটতে কাটতে সেই গ্রাম অনেকটা সরে এসেছে ৷ 2014 সালে শেষবারের মতো ভাঙনরোধের কাজ হয় ৷ এই কাজ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের চাপানউতোরে আমরা ভুগেই চলেছি ৷ আমাদের এলাকা কাটতে কাটতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ৷ আমরা চাই, কাজ যে’ই করুক ৷ আমাদের এলাকাকে রক্ষা করতে ভাঙনরোধের কাজ করে দিতে হবে ৷ পাঁচবার গঙ্গাভাঙনের শিকার হয়েছি ৷ এবার বাঁচতে চাই ৷ দুই সরকারকেই জোড়হাত করে বলছি, আমাদের বাঁচানো হোক ৷ বৈশাখেও নদীর ভাঙন চলছে৷ এখনই ভাঙনরোধের কাজ শেষ না হলে মানিকচক, ধরমপুর, গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সহ নদীতীরের বেশ কিছু এলাকার মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়বে ৷” একই বক্তব্য গণেশ ঘোষের৷ তিনি বলেন, “নদীতে এখনও ভাঙন চলছে ৷ প্রতি বছর এমনই হয় ৷ আগে দু’বার বাড়ি ভেঙেছে ৷ আবার ভাঙতে পারে ৷ ভাঙনরোধের কাজ নিয়ে শুধু চুরিই হয় ৷ 2014 সালে শেষ কাজ হয়েছে ৷ এখন কাজ শুরু হলে ভালো হবে ৷ আর বর্ষায় কাজ হলে ফের চুরি হবে ৷ আমরা চাই, যে সরকারই হোক না কেন, নদী বাঁধার কাজ ভালো করে করা হোক ৷”
গঙ্গার অকাল ভাঙনের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন এলাকার বাসিন্দা, CPIM-র জেলা কমিটির সদস্য দেবজ্যোতি সিনহা ৷ তিনি বলেন, “নদী নিয়েই আমরা বেঁচে আছি৷ এখন গঙ্গা ও ফুলহরের ভাঙন ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে৷ গত পুজোর সময় মানিকচকের শঙ্করটোলা এলাকায় ফুলহরের বিশাল অংশ ধসে গিয়েছে৷ আর 15 দিনের মধ্যে বর্ষা চলে আসছে৷ তাতে ওই এলাকার প্রায় চার কিলোমিটার বসে যাওয়া এলাকা যদি মেরামত না হয়, তাহলে মানিকচক বন্যাকবলিত হবে ৷ ডোমহাটে নদী বাঁধের কাছে চলে এসেছে৷ ভাঙনরোধের কাজ নিয়ে কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই ৷ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির শুখা মরশুমে কাজ করা হল না ৷ কোনও সরকারি এই কাজে এগিয়ে আসেনি ৷ এতে বেশ কয়েকটি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷ শুধুমাত্র হীরানন্দপুরে এই কাজ শুরু হয়েছে৷ সেখানে কাজের নামে টাকা লুট চলছে ৷ এখন মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর খেলা শুরু হয়েছে ৷”
মানিকচকের বাসিন্দা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “গঙ্গাপাড়ের 40 কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধের কাজের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের ৷ মুখ্যমন্ত্রী বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে গঙ্গার ভাঙনরোধের কাজ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার দ্বিচারিতা করছে ৷ তারা কোনও কাজ শুরু করেনি৷ শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভূতনি চরে ভাঙনরোধের কাজ শুরু করা হয়েছে৷ শঙ্করটোলায় কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে৷ গোপালপুরের কিছু এলাকায় ভাঙন চলছে৷ বাঁধের কাছে গঙ্গা চলে এসেছে৷ সেই কাজ সেচ দপ্তর করবে৷ লকডাউনে ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না৷ তবুও সব নিয়মবিধি মেনে ভাঙনরোধের কাজ চলছে৷”
কয়েক দশকের গঙ্গা ভাঙন বদলে দিয়েছে মালদা জেলার মানচিত্রটাই৷ মানিকচক, কালিয়াচক ১ ও ৩ ব্লক নদীভাঙনে বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে৷ ভিটেছাড়া হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ ৷ এবার অকাল মরশুমে ফের ছোবল মারছে গঙ্গা ৷ বর্ষায় কী হবে, সবার অজানা৷