ETV Bharat / state

Panchayat Election 2023: সংখ্য়ালঘু এলাকাকে তফসিলি জাতি মহিলা আসনের জন্য সংরক্ষণ ! ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি - মালদা

মালদার একটি সংসদ এলাকাকে তফসিলি জাতি মহিলা আসনের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ অথচ, ওই সংসদের 100 শতাংশ ভোটারই সংখ্য়ালঘু ! নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের প্রতিবাদে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রামবাসীর ৷

controversy before Panchayat Election 2023 after a minority village of Malda chosen to be reserved for Scheduled Caste Women seat
ভোটের আগেই বিতর্ক
author img

By

Published : Apr 7, 2023, 2:01 PM IST

আজব কাণ্ড

মালদা, 7 এপ্রিল: এ এক আজব কাণ্ড ! যে সংসদ এলাকার 100 শতাংশ বাসিন্দাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, সেই সংসদকেই তফসিলি জাতি মহিলা আসনের জন্য সংরক্ষিত করে বসে আছে নির্বাচন কমিশন ! অতএব, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট করাতে হলে এই কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী আনতে হবে এলাকার বাইরে থেকে ! আর তেমনটা ঘটলে তাঁরা সকলে মিলে ভোট বয়কট করবেন ! স্পষ্ট একথা জানিয়ে দিয়েছেন পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটপুর ও ছোটপুর ভেস্টপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা ৷ তাঁদের অভিযোগ, একটি সংসদকে ভেঙে দু'টি করতে গিয়েই গন্ডগোল করেছে নির্বাচন কমিশন ৷ এ নিয়ে প্রশাসনের নানা স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি ৷ কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংরক্ষণ নিয়ে আর কোনওরকম সংশোধন করা হবে না ৷ নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ ৷

বিধানসভা নির্বাচন তালিকার 189 অংশে রয়েছে ছোটপুর ও ছোটপুর ভেস্টপাড়া ৷ এখানে মোট ভোটার রয়েছেন 876 জন ৷ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের নাম সাধইল ছোটপুর প্রাইমারি স্কুল ৷ বুথ নম্বর 98 ৷ ভোটদাতারা মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের 2 নম্বর সংসদে রয়েছেন ৷ পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসন নম্বর যথাক্রমে 16 এবং 34 ৷ সংশ্লিষ্ট 867 জন ভোটারের প্রত্যেকেই সংখ্যালঘু ৷ অথচ, এই বুথকেই এবার তফসিলি জাতি ও মহিলা সংরক্ষিত করা হয়েছে ! (প্রসঙ্গত, তফসিলি জাতি ও উপজাতি হিন্দুর সম্প্রদায়ের আওতাভুক্ত ৷)

গ্রামের বাসিন্দা সাবির আলি বলছেন, "আমি শুনেছি, এবার না কি আমাদের গ্রামের কাউকে এই আসনে প্রার্থী করতে দেওয়া হবে না ! কেন, তা বলতে পারব না ৷ সারাজীবন গ্রামের প্রার্থীদেরই ভোট দিয়ে এসেছি ৷ হঠাৎ করে শুনছি, এই সংসদ নাকি তফসিলি জাতির মহিলা সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে ৷ অথচ এই গ্রামে একজনও তফশিলি জাতির মানুষ নেই ৷ আমরা এর প্রতিবাদে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷"

আর এক গ্রামবাসী মহম্মদ ওবাইদুল শেখ জানাচ্ছেন, "বিষয়টি নিয়ে আমরা বিডিওর কাছে গিয়েছিলাম ৷ তাঁকে সব জানিয়েছি ৷ এই সংসদে সকলেই সংখ্য়ালঘু ভোটার ৷ একজনও হিন্দু ভোটার নেই ৷ বিডিও বলছেন, তিনি কিছু করতে পারবেন না ৷ যা করার জেলাশাসক করবেন ৷ গ্রামের কয়েকজন জেলাশাসকের সঙ্গেও দেখা করেছেন ৷ কিন্তু, তিনিও কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ৷ গ্রামের কেউ যদি ভোটে প্রার্থী না হতে পারেন, তাহলে এবার আমরা ভোট দেব না ৷ বাইরের কাউকে আমরা ভোট দেব না ৷"

এলাকার বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য, তৃণমূলের মাসিদুর রহমান বলেন, "নির্বাচন কমিশন এটা খুব বাজে কাজ করেছে ৷ এখানে পুরনো বুথ ভেঙে দু'টি আলাদা বুথ করা হয়েছে ৷ 189 নম্বর অংশের ভোটাররা সকলেই সংখ্য়ালঘু ৷ এখানে তফসিলি জাতিভুক্ত একজনও নেই ৷ তবু এই বুথকে তফসিলি জাতি মহিলা সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ ফলে গ্রামের কোনও মানুষ এবার ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না ৷ পাড়ার লোক বলছেন, তাঁরা অন্য জায়গার প্রার্থী মেনে নেবেন না ৷ তেমন হলে ভোট বয়কট করবেন ৷ বিষয়টি প্রশাসন ও দলীয় নেতাদের জানিয়েছি ৷ সবাই বলছেন, আর কিছু করা যাবে না ! তাহলে এবার এই গ্রামে অন্তত ভোট হচ্ছে না !"

এ নিয়ে জেলাশাসক নিতিন সিংঘানিয়াকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "খসড়া রোস্টার প্রকাশের পর তা নিয়ে অভিযোগ কিংবা আবেদন জানানোর সময় দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই মতো শুনানিও হয়েছে ৷ তখন এই বিষয়ে কেউ কোনও আপত্তি করেননি ৷ কেউ আবেদনও জানাননি ৷ জনসংখ্যার অনুপাত বজায় রেখে রাজ্য নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে ৷ সেই তালিকা সরকারিভাবে নথিভুক্তও হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে এখন আমাদের আর কিছু করার নেই ৷"

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোট করাতে রাজ্য পুলিশেই আস্থা ?

যদিও জেলাশাসকের বক্তব্য মানতে নারাজ আরএসপির জেলা সম্পাদক সর্বানন্দ পাণ্ডে ৷ তিনি বলেন, "ওই বুথে একজনও হিন্দু ভোটার নেই ৷ অথচ ওই বুথটিকে তফশিলি জাতি মহিলা সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ জেলাশাসকের কাছে আমরা এ নিয়ে অভিযোগ করেছিলাম ৷ স্থানীয় নির্বাচন দফতরের বৈঠকেও বিষয়টি তুলেছিলাম ৷ কিন্তু তারা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে দিচ্ছে ৷ তারা বলছে, আমরা কেন এ নিয়ে আগে আপত্তি তুলিনি ৷ কিন্তু, নির্বাচন দফতর যে রোস্টার তৈরি করেছিল, তা তো আমাদের আগে দেওয়া হয়নি ৷ 28 মার্চ ভোটারতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ৷ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমরা সেই তালিকা হাতে পেয়েছি ৷ তখনই বিষয়টি আমাদের নজরে আসে ৷ এটা নির্বাচন দফতরের ব্যর্থতা ৷ আমরা নির্বাচন দফতরে আবেদন জানিয়েছি ৷ তারা কী করবে জানি না ৷ কিন্তু এর জন্য ভোট বয়কট হলে তার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে ৷"

আজব কাণ্ড

মালদা, 7 এপ্রিল: এ এক আজব কাণ্ড ! যে সংসদ এলাকার 100 শতাংশ বাসিন্দাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, সেই সংসদকেই তফসিলি জাতি মহিলা আসনের জন্য সংরক্ষিত করে বসে আছে নির্বাচন কমিশন ! অতএব, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট করাতে হলে এই কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী আনতে হবে এলাকার বাইরে থেকে ! আর তেমনটা ঘটলে তাঁরা সকলে মিলে ভোট বয়কট করবেন ! স্পষ্ট একথা জানিয়ে দিয়েছেন পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটপুর ও ছোটপুর ভেস্টপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা ৷ তাঁদের অভিযোগ, একটি সংসদকে ভেঙে দু'টি করতে গিয়েই গন্ডগোল করেছে নির্বাচন কমিশন ৷ এ নিয়ে প্রশাসনের নানা স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি ৷ কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংরক্ষণ নিয়ে আর কোনওরকম সংশোধন করা হবে না ৷ নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ ৷

বিধানসভা নির্বাচন তালিকার 189 অংশে রয়েছে ছোটপুর ও ছোটপুর ভেস্টপাড়া ৷ এখানে মোট ভোটার রয়েছেন 876 জন ৷ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের নাম সাধইল ছোটপুর প্রাইমারি স্কুল ৷ বুথ নম্বর 98 ৷ ভোটদাতারা মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের 2 নম্বর সংসদে রয়েছেন ৷ পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসন নম্বর যথাক্রমে 16 এবং 34 ৷ সংশ্লিষ্ট 867 জন ভোটারের প্রত্যেকেই সংখ্যালঘু ৷ অথচ, এই বুথকেই এবার তফসিলি জাতি ও মহিলা সংরক্ষিত করা হয়েছে ! (প্রসঙ্গত, তফসিলি জাতি ও উপজাতি হিন্দুর সম্প্রদায়ের আওতাভুক্ত ৷)

গ্রামের বাসিন্দা সাবির আলি বলছেন, "আমি শুনেছি, এবার না কি আমাদের গ্রামের কাউকে এই আসনে প্রার্থী করতে দেওয়া হবে না ! কেন, তা বলতে পারব না ৷ সারাজীবন গ্রামের প্রার্থীদেরই ভোট দিয়ে এসেছি ৷ হঠাৎ করে শুনছি, এই সংসদ নাকি তফসিলি জাতির মহিলা সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে ৷ অথচ এই গ্রামে একজনও তফশিলি জাতির মানুষ নেই ৷ আমরা এর প্রতিবাদে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷"

আর এক গ্রামবাসী মহম্মদ ওবাইদুল শেখ জানাচ্ছেন, "বিষয়টি নিয়ে আমরা বিডিওর কাছে গিয়েছিলাম ৷ তাঁকে সব জানিয়েছি ৷ এই সংসদে সকলেই সংখ্য়ালঘু ভোটার ৷ একজনও হিন্দু ভোটার নেই ৷ বিডিও বলছেন, তিনি কিছু করতে পারবেন না ৷ যা করার জেলাশাসক করবেন ৷ গ্রামের কয়েকজন জেলাশাসকের সঙ্গেও দেখা করেছেন ৷ কিন্তু, তিনিও কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ৷ গ্রামের কেউ যদি ভোটে প্রার্থী না হতে পারেন, তাহলে এবার আমরা ভোট দেব না ৷ বাইরের কাউকে আমরা ভোট দেব না ৷"

এলাকার বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য, তৃণমূলের মাসিদুর রহমান বলেন, "নির্বাচন কমিশন এটা খুব বাজে কাজ করেছে ৷ এখানে পুরনো বুথ ভেঙে দু'টি আলাদা বুথ করা হয়েছে ৷ 189 নম্বর অংশের ভোটাররা সকলেই সংখ্য়ালঘু ৷ এখানে তফসিলি জাতিভুক্ত একজনও নেই ৷ তবু এই বুথকে তফসিলি জাতি মহিলা সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ ফলে গ্রামের কোনও মানুষ এবার ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না ৷ পাড়ার লোক বলছেন, তাঁরা অন্য জায়গার প্রার্থী মেনে নেবেন না ৷ তেমন হলে ভোট বয়কট করবেন ৷ বিষয়টি প্রশাসন ও দলীয় নেতাদের জানিয়েছি ৷ সবাই বলছেন, আর কিছু করা যাবে না ! তাহলে এবার এই গ্রামে অন্তত ভোট হচ্ছে না !"

এ নিয়ে জেলাশাসক নিতিন সিংঘানিয়াকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "খসড়া রোস্টার প্রকাশের পর তা নিয়ে অভিযোগ কিংবা আবেদন জানানোর সময় দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই মতো শুনানিও হয়েছে ৷ তখন এই বিষয়ে কেউ কোনও আপত্তি করেননি ৷ কেউ আবেদনও জানাননি ৷ জনসংখ্যার অনুপাত বজায় রেখে রাজ্য নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে ৷ সেই তালিকা সরকারিভাবে নথিভুক্তও হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে এখন আমাদের আর কিছু করার নেই ৷"

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোট করাতে রাজ্য পুলিশেই আস্থা ?

যদিও জেলাশাসকের বক্তব্য মানতে নারাজ আরএসপির জেলা সম্পাদক সর্বানন্দ পাণ্ডে ৷ তিনি বলেন, "ওই বুথে একজনও হিন্দু ভোটার নেই ৷ অথচ ওই বুথটিকে তফশিলি জাতি মহিলা সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ জেলাশাসকের কাছে আমরা এ নিয়ে অভিযোগ করেছিলাম ৷ স্থানীয় নির্বাচন দফতরের বৈঠকেও বিষয়টি তুলেছিলাম ৷ কিন্তু তারা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে দিচ্ছে ৷ তারা বলছে, আমরা কেন এ নিয়ে আগে আপত্তি তুলিনি ৷ কিন্তু, নির্বাচন দফতর যে রোস্টার তৈরি করেছিল, তা তো আমাদের আগে দেওয়া হয়নি ৷ 28 মার্চ ভোটারতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ৷ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমরা সেই তালিকা হাতে পেয়েছি ৷ তখনই বিষয়টি আমাদের নজরে আসে ৷ এটা নির্বাচন দফতরের ব্যর্থতা ৷ আমরা নির্বাচন দফতরে আবেদন জানিয়েছি ৷ তারা কী করবে জানি না ৷ কিন্তু এর জন্য ভোট বয়কট হলে তার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.