মালদা, 13 মার্চ : রান্না করতে দিতে হবে৷ এই দাবিতে স্কুলে তালা বন্ধ করে পড়ুয়াদের ক্লাসরুম থেকে বের করে দিল সাতটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা৷ এই ঘটনার জেরে আজ স্কুলে এসে ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে পড়ুয়াদের৷ মিড-ডে মিলের খাবারও জোটেনি তাদের৷ ঘটনাটি ঘটেছে গাজোলের দেওতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজে মোলানিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে যায় পুলিশ৷ বিবদমান দুই পক্ষ সহ স্কুল কর্তৃপক্ষকেও ডেকে পাঠানো হয় BDO-এর দপ্তরে৷ সব পক্ষকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন BDO৷ পরে তিনি জানান, সমস্যা আপাতত মিটে গিয়েছে৷ আগামীকাল থেকে স্কুলে স্বাভাবিকভাবেই ক্লাস হবে৷ এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও আভাস মিলেছে৷ সেই আভাস দিয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরাই৷ তবে এনিয়ে শাসকদলের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
বাজে মোলানিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে মিড-ডে-মিলের রান্না করে আসছে বিশেষ একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ৷ তবে কিছুদিন ধরেই এলাকার আরও সাতটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ওই স্কুলে মিড-ডে-মিল রান্না করার দাবি জানিয়ে আসছে ৷ এই দাবিতে এর আগেও ওই সাতটি গোষ্ঠীর সদস্যরা স্কুলে তালা মেরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন৷ সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি৷ তাই নিজেদের দাবিতে আজ তারা ফের স্কুলে তালা মেরে দেন৷ শিক্ষকরা বিকল্প চাবি দিয়ে স্কুল খুলে পঠনপাঠন শুরু করেন৷ সেই খবর পেয়ে কিছুক্ষণ পরেই স্কুলে চলে আসেন বিক্ষোভকারী মহিলারা৷ তাঁরা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের বের করে ফের স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেন ৷
গত 17 বছর ধরে এই স্কুলে মিড-ডে-মিল রান্নার দায়িত্বে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, "এই স্কুলে আমরা একটি দল 17 বছর ধরে মিড-ডে-মিলের রান্না করে আসছি৷ এখন আরও অনেক দল বলছে, তারা রান্না করবে৷ আগে আমরা গাছের গোড়ায় অনেক কষ্টে রান্না করতাম৷ মাসে 400 টাকা পেতাম৷ এখন গ্যাস হয়েছে, মাসে তিন হাজার টাকা করে পাচ্ছি৷ এখন ভালো সময় এসেছে বলে অন্যরা রান্না করতে চাইছে ৷ আজ ওরা স্কুলে তালা লাগিয়ে দেয় ৷ আমরা কোনও দলকে এখানে ঢুকতে দেব না৷" BDO-র সঙ্গে আলোচনার পর বিরোধী গোষ্ঠীর এক সদস্য লক্ষ্মী সরেন বলেন, "আমরা তৃণমূল করি৷ যারা স্কুলে রান্না করছে তারাও তৃণমূলের ৷ ওরা আমাদের রান্না করতে দেয় না৷ আমরা ওই স্কুলে রান্না করতে চাই৷ নিজেদের দাবিতে এর আগেও আমরা স্কুলে তালা মেরে বিক্ষোভ দেখিয়েছি৷ এলাকার বিধায়ক ও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি৷ তাই আজ আমরা ফের স্কুলে তালা মেরে দিই ৷ পুলিশ প্রশাসন গিয়ে আমাদের BDO অফিসে নিয়ে আসে ৷ BDO জানিয়েছেন, আগামী মাস থেকে আমাদের রান্না করতে দেওয়া হবে৷"
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ জানান, "মিড-ডে-মিল রান্না নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হচ্ছে৷ এর আগেও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর মহিলারা স্কুলে তালা মেরে দেয়৷ আজও সেই ঘটনা ঘটেছে৷ এর জেরে আজ স্কুলে ক্লাস করানো যায়নি৷ মিড-ডে-মিলের খাবারও পড়ুয়াদের দেওয়া যায়নি৷ আমরা গোটা ঘটনা BDO ও SI-কে জানিয়েছি৷ পরবর্তীতে DI-কেও বিষয়টি জানাব৷" এপ্রসঙ্গে গাজোলের BDO নবীন চন্দ্রা বলেন, "ওই স্কুলের সমস্যা নিয়ে আজ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে৷ আশা করা যাচ্ছে দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে৷ আগামীকাল থেকে নির্দিষ্ট গতিতেই স্কুল চলবে৷"