মালদা, 25 জুন : চিনা নাগরিক হান জুনেইয়ের জামিনের আবেদন খারিজ করল মালদা জেলা আদালত । তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক রূপেন্দ্রনাথ বসু ৷ আগামী 9 জুলাই বিচারাধীন বন্দিকে ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আটদিনের হেফাজত শেষে আজ ফের মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয় অনুপ্রবেশের দায়ে ধৃত চিনা নাগরিক হান জুনেইকে ৷ তাকে আদালতে পেশ করে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ৷ হেফাজতে থাকাকালীন কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয় এই চিনা নাগরিককে ৷ জেরায় তার কাছ থেকে একাধিক তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে এসটিএফ ৷
গত 10 জুন সকালে অনুপ্রবেশের দায়ে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের আকন্দবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিক সুলতানপুর গ্রাম থেকে হান জুনেইকে গ্রেফতার করে বিএসএফ ৷ তার বাড়ি চিনের হুবেই প্রদেশে ৷ 36 বছর বয়সী হানের হেফাজত থেকে একটি দামি ল্যাপটপ, দুটি আইফোন, একটি বাংলাদেশি সিমকার্ড, একটি ভারতীয় সিমকার্ড, দুটি চিনা সিমকার্ড, একটি পেনড্রাইভ, মানি ট্র্যানজাকশন মেশিন, দুটি মাস্টারকার্ড, আমেরিকান ডলার সহ বেশ ভাল পরিমাণে বাংলাদেশি ও ভারতীয় টাকা উদ্ধার করা হয় ৷
11 জুন রাতে বিএসএফের তরফে তাকে তুলে দেওয়া হয় কালিয়াচক থানার পুলিশের হাতে ৷ জেলা আদালতের মাধ্যমে 18 জুন পর্যন্ত তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার সোনা মসজিদ এলাকা থেকে কীভাবে এদেশে প্রবেশ করেছিল, সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ দেখায় হান ৷ মিলিক সুলতানপুর গ্রামের কাঁটাতারবিহীন অরক্ষিত সীমান্তের সন্ধান সে কীভাবে পেল তা ভাবিয়ে তোলে পুলিশকর্তাদের ৷
তাদের সন্দেহ বাংলাদেশেও হানের কোনও এজেন্ট রয়েছে ৷ সেই অরক্ষিত সীমান্তের কথা হানকে জানিয়েছে ৷ জেরায় হান স্বীকার করে, সে এদেশের প্রায় 1300 সিম কার্ড চিনে সরবরাহ করেছে ৷ এই তথ্যে তদন্তকারীদের সন্দেহ হান চিনের গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করছে ৷ পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই 16 জুন হানকে নিজেদের হেফাজতে নেয় এসটিএফ ৷ ভারতের গুরুগ্রামে একটি হোটেলের মালিক হান ৷ গ্রেপ্তার করার পর বিএসএফ ও পুলিশ তার ল্যাপটপ ও আইফোনের তথ্য খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে ৷
কিন্তু সেসবের পাসওয়ার্ড মান্দারিন ভাষায় থাকায় আনলক করা যায়নি ৷ ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হলেও হান তদন্তকারীদের কোনও সহযোগিতা করেনি ৷ যদিও কলকাতায় মান্দারিন ভাষা জানা একজনের সহযোগিতায় তার ল্যাপটপ ও আইফোনের লক খোলা হয় ৷ তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বেঙ্গালুরুর আলফা ডিজাইন সংস্থার সিস্টেম হ্যাক করার ছক ছিল হানের ৷ এই সংস্থাটি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আউটসোর্স অ্যাসাইনমেন্টর ৷ এতে হানের দিকে ওঠা গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহ আরও জোরালো হয়ে ওঠে ৷
আরও পড়ুন : নেপাল-ভুটানেও সক্রিয় ছিল হানের নেটওয়ার্ক ?
হানের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশে মামলা রয়েছে অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াডের ৷ ইতিমধ্যে তার ব্যবসায়িক সহযোগী সান জিয়াংকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ আগেই জানা গিয়েছিল, হানকেও নিজেদের হেফাজতে নেবে এটিএস ৷ শুধু ওই সংস্থাই নয় হানের খোঁজে ছিল দেশের একাধিক নিরাপত্তা সংস্থাও ৷ এরই মধ্যে আজ এসটিএফের তরফে হানকে জেলা আদালতে পেশ করা হয় ৷