মালদা, 22 ফেব্রুয়ারি : বর্ষা আসে৷ ঘুম ওড়ে মালদা জেলার গঙ্গাপাড়ের মানুষের ৷ রাতের নৈঃশব্দ ভেঙে যায় পাড় ভাঙার শব্দে ৷ এমনও দিন গেছে যখন ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে ৷ গত কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতি বর্ষাতেই এই ছবি ধরা পড়েছে কালিয়াচক 3 ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ৷ গঙ্গাভাঙনে ভিটেছাড়া হতে হয়েছে অনেক মানুষকে ৷ এখানে বড়লোক-গরিবের ভেদাভেদ নেই ৷ গঙ্গার গ্রাসে ভিটে হারিয়েছেন এলাকার বিধায়কও ৷ ভাঙন ঠেকাতে এলাকার মানুষ ছুটেছে রাজ্য থেকে কেন্দ্রের দরবারে ৷ এই কাজ রাজ্য সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয় ৷ এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারও বেশ কিছু বাধায় সেই কাজ পুরোপুরি করতে পারছিল না৷ শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়েছে কেন্দ্র৷ গতকাল ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করতে আসে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের নেতৃত্বে থাকা 18 সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল৷ দলটি এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাঙন বিধ্বস্ত পারলালপুর, পার অনুপনগর এলাকা পরিদর্শন করে ৷ সেই দলের সঙ্গে ছিলেন ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের জেনেরাল ম্যানেজারও ৷
গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বর্ষায় গঙ্গা পাড় কাটছে কালিয়াচক 3 ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ৷ মূলত সেখানকার পারলালপুর ও পার অনুপনগর গ্রাম গঙ্গাভাঙনের কবলে পড়েছে৷ প্রতি বছরই গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছে প্রচুর কৃষিজমি, অসংখ্য বাড়ি৷ একইভাবে গঙ্গার ভাঙনে পড়েছে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্লকের হোসেনপুর ও কুলিদিয়ারা গ্রাম৷ এসব গ্রামের মানুষজন নিজেদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে গঠন করেছে ‘হোসেনপুর-পারলালপুর গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি’ ৷ এই কমিটির নেতৃত্ব গঙ্গার পাড় বাঁধাইয়ের জন্য একাধিকবার রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে ৷ তাদের দাবি, ফরাক্কা ব্যারেজের ডাউনস্ট্রিমে 14 কিলোমিটার এলাকায় নদীপাড় বোল্ডার পিচিং করতে হবে ৷ কিন্তু এই কাজের জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থ ৷ রাজ্য সরকারের একার পক্ষে সেই কাজ করা সম্ভব নয় ৷ তাই এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই তাকিয়ে ছিল ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকার মানুষ ৷
গতকাল সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের নেতৃত্বে 18 সদস্যের এক প্রতিনিধি দল কালিয়াচক 3 ব্লকের পারলালপুর ও পার অনুপনগর গ্রামের ভাঙন প্রবণিত এলাকা পরিদর্শন করে ৷ দলের সদস্যরা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই দুই গ্রামের গঙ্গাপাড় পরিদর্শন করেন ৷ ভাঙনের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করেন ৷ পরে তাঁরা হোসেনপুর ও কুলিদিয়ারা গ্রাম দু'টিও পরিদর্শন করেন ৷ বিকেলে তাঁরা ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টে একটি বিশেষ বৈঠক করেন ৷ বৈঠকে ডাকা হয় হোসেনপুর-পারলালপুর গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আসিফ ইকবালকেও ৷ রাতে আসিফ সাহেব বলেন, "সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের প্রতিনিধিরা গঙ্গা ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন ৷ তাঁরা মেনে নিয়েছেন, এই ভাঙন বিপজ্জনক৷ ভাঙন ঠেকাতে এতদিন তাঁরা ফরাক্কা ব্যারেজের ডাউনস্ট্রিমে 14 কিলোমিটার এলাকার নদীপাড় বোল্ডার পিচিং করার দাবি জানিয়েছেন ৷ কিন্তু ডাউনস্ট্রিমে ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের কাজ করার ক্ষমতা ছিল 6.9 কিলোমিটার৷ আজকের বৈঠকে ওয়াটার কমিশন তাঁকে আশ্বস্ত করেছে, ডাউনস্ট্রিমে 14 কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ করার দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের হাতে দেওয়া হবে ৷ খুব তাড়াতাড়ি ভাঙনরোধের কাজ যাতে শুরু করা যায় তার চেষ্টাও করা হবে ৷ আপাতত আমরা সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি৷”