মালদা, 11 জুন : লকডাউন বন্ধ করে দিয়েছিল উপার্জনের রাস্তা৷ বাড়িতে যা সঞ্চিত ছিল, তাও প্রায় ফুরিয়ে গিয়েছিল৷ অবসাদ কাটাতে মদে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু মদ্যপান সংসারে ডেকে এনেছিল আরও বড় বিপদ৷ প্রায় প্রতিদিনই এনিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে বাধত বচসা৷ গতকাল ঝামেলা চরমে ওঠে৷ মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রী ও ছেলের মাথায় লোহার তালা দিয়ে আঘাত করেন ৷ ধারালো হাঁসুয়া হাতে নিয়ে তাড়া করেন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাড়ি ছেড়ে দৌড়ে কোনওরকমে প্রাণ বাঁচান মা ও দুই সন্তান৷ রাতেই তিনজন স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে গোটা ঘটনা খুলে বলেন৷ পুলিশকর্মীরা তিনজনকে নিয়ে হাজির হন বাড়িতে৷ পৌঁছে দেখেন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ব্যক্তি৷ গতকাল রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার ব্লকের শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাদিয়াঘাট এলাকায়৷ মৃত ব্যক্তির নাম লালবাহাদুর চৌধুরি (53)৷ পেশায় বেসরকারি বাসের চালক ৷ মাদিয়াঘাট গ্রামের বাসিন্দা৷
মালদা-রতুয়া রুটে তিনি বাস চালাতেন৷ লকডাউন শুরু হওয়ার পর জেলায় বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি বাস পরিষেবা৷ লালবাহাদুরের কাজকর্মও বন্ধ হয়ে যায়৷ বাস বন্ধ থাকায় মালিক লকডাউনে তাঁকে কোনও টাকা দিতে পারেননি৷ বর্তমানে জেলায় কিছু বেসরকারি বাস চলাচল শুরু করলেও তাঁর মালিক এখনও বাস পথে নামাননি৷ এদিকে প্রায় তিনমাসে জমানো সব টাকাপয়সা শেষ হয়ে গিয়েছিল৷ কোনও পথ চোখের সামনে দেখতে না পেয়ে সম্প্রতি মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি৷ তাঁর মদ্যপানের জেরে পরিবারে দেখা দেয় নতুন ঝামেলা৷ প্রায় প্রতিদিনই আকণ্ঠ মদ্যপান করে বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়তেন তিনি৷ স্ত্রী রঞ্জনা তাঁর কাছে সংসারের খরচ চাইলে ঝামেলা আরও বড় আকার নিত৷
গতকাল রাতেও তিনি মদ্যপান করে বাড়ি ফেরেন৷ সেই সময় তাঁর মেয়ে কবিতা টিভি দেখছিল৷ তা দেখেই মেয়েকে বকাবকি করতে শুরু করেন তিনি৷ তখন রঞ্জনা ও তাঁর ছেলে নৃপেন কবিতার পাশে দাঁড়ালে লালবাহাদুর লোহার একটি ভারী তালা দিয়ে স্ত্রী ও ছেলের মাথায় আঘাত করেন৷ এরপর বারান্দায় রাখা একটি ধারালো হাঁসুয়া নিয়ে তিনজনকে তাড়া করেন৷
নৃপেন জানায়, "বাবার এই মূর্তি দেখে আমরা রক্তাক্ত অবস্থাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়াতে শুরু করি৷ কোনওরকমে কয়েক কিলোমিটার দূরে মিলকি পুলিশ ফাঁড়িতে পৌঁছাই৷ পুলিশকর্মীদের সব কথা খুলে বলি৷ পুলিশ আমাদের প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সেখানে আমাদের চিকিৎসার পর পুলিশকর্মীরা আমাদের নিয়ে বাড়িতে যান৷ তখন দেখি, বাড়ির সামনে ভিড়৷ ভিতরে গিয়ে দেখি, ঘরের ভিতর গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় বাবার দেহ ঝুলছে৷ পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে মিলকি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বাবাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷"
মিলকি ফাঁড়ির পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে৷ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে৷ তবে পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, লকডাউনে মানসিক স্থিতি হারিয়েই লালবাহাদুর মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ তার জেরে এই ঘটনা৷