মালদা, 3 এপ্রিল : বেজায় বিপত্তিতে পড়েছিলেন হরিশচন্দ্রপুরের তুলসিহাটা গ্রামের মহম্মদ নুর আলম ৷ ভাইয়ের নিকাহ উপলক্ষে বিহারের মধুবনী জেলা থেকে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হয় 48 জনের কনেযাত্রীর দল ৷ এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় লকডাউন ৷ আটকে পড়েন কনেযাত্রীরা ৷ সাতদিন ধরে তাঁদের খাবারের জোগাড় করতে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন নুর সাহেব ৷ বাড়ি থেকে প্রায় পালানোর দশা হয় তাঁর ৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হন ৷ পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় BDO-র সঙ্গে । গতকাল ওই গ্রামে যান BDO ৷ তিনিই ভিন রাজ্য থেকে আসা ওই বাসিন্দাদের তথা কনেযাত্রীদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন ৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন নুর আলম ।
গত 22 মার্চ নুর আলমের ভাইয়ের নিকাহ ঠিক হয় বিহারের মধুবনী জেলার বেণিপট্টি পূরবটোলা গ্রামের এক যুবতির সঙ্গে ৷ নিকাহর আসর বসেছিল হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা গ্রামের নয়াটোলা কলাবাড়িতে তথা নুর আলমের বাড়িতেই ৷ সেদিন তাঁর বাড়িতে আসেন ৪৮ জনের কনেযাত্রীর দল ৷ পরদিন রাতে ছিল বউভাতের আসর ৷ সেই অনুষ্ঠান শেষে আরও একদিন নুর আলমের বাড়ি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কনেযাত্রীরা ৷ এর মধ্যেই গত ২৪ মার্চ থেকে কোরোনা মোকাবিলায় রাজ্যে শুরু হয়ে যায় লকডাউন ৷ বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত যান চলাচল ৷ আটকে পড়েন কনেযাত্রীরা ৷ অগত্যা তাঁদের দায়িত্ব নিতে হয় নুর আলমকে ৷ এভাবেই কেটে যায় আরও নয় দিন ৷ স্বাভাবিকভাবেই এতদিন ধরে এতজনের খাবারের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় নুরের পরিবারকে ৷ তাঁরা স্থানীয় সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ নিজেদের সমস্যার কথা জানান ৷ এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরাও ৷ কিন্তু সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি । লকডাউনের বাজারে গ্রামবাসীদের পক্ষেও বিশেষ সাহায্য করা সম্ভব হচ্ছিল না । শেষ পর্যন্ত হরিশচন্দ্রপুর থানায় সমস্যার কথা জানান নুর আলম ৷ পুলিশ বিষয়টি জানায় BDO-কে ৷ BDO আটকে পড়া কনেযাত্রীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন ।
বিয়েতে এসে আটকে পড়া বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ কবরে আলম বলেন, "বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তুলসিহাটা এসেছিলাম ৷ কিন্তু এখানে আসার পর লকডাউন হয়ে যায় ৷ আমরা সবাই সমস্যায় পড়ে গিয়েছি ৷ কোনওরকমে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে ৷ কিন্তু খাবারের সমস্যা হচ্ছিল ৷ গতকাল পুলিশ ও BDO এখানে এসেছিলেন ৷ পঞ্চায়েত প্রধানও আসেন ৷ তাঁরা গ্রামীণ হাসপাতালে আমাদের সবার শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছেন ৷ খাবারের ব্যবস্থাও করে দেবেন বলেছেন ৷ প্রশাসনিক কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের খাবারের কোনও অসুবিধে হবে না ৷"
স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ গুপ্ত বলেন, "লকডাউনের জেরে নুর আলমের বাড়িতে আসা বিহারের কনেযাত্রীরা খুব সমস্যায় পড়েছিল ৷ খবর পেয়ে আমরা কয়েকদিন ওই বাড়িতে সাধ্যমতো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি ৷ কিন্তু এখন আমাদের সেই সামর্থও আর নেই ৷ তাই আমরা গোটা বিষয়টি পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম ৷ গতকাল BDO এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার IC এখানে এসেছিলেন ৷ তাঁরা ওই কনেযাত্রীদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ৷ যতদিন না লকডাউন শেষ হয়, ততদিন কনেযাত্রীদের এখানেই থাকতে বলেছেন তাঁরা ৷ তাঁদের কথা মতো গতকাল প্রত্যেক কনেযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়েছে ৷ প্রশাসনের এই পদক্ষেপে নুর আলমের পরিবার উপকৃত হল ৷"