মালদা, 16 অক্টোবর: দিনভর নাটকের পর অবশেষে হরিশ্চন্দ্রপুরে খুন হওয়া মহিলার দেহ শনাক্ত হল ৷ সোমবার সন্ধের মুখে মালদা মেডিক্যালের মর্গে মৃতদেহ শনাক্ত করেছেন তাঁর মা এবং বোন ৷ এই ঘটনায় ক্রমশ রহস্য দানা বাঁধছে ৷ সোমবার বিকেলেই মৃতদেহ চিনতে অস্বীকার করেন মৃতার স্বামী ৷ আর আজকেই তাঁর মা এবং বোন দেহ শনাক্ত করেছেন ৷ যার পরে তদন্ত নয়া মোড় আসতে পারে বলে মনে করছে তদন্তকারী আধিকারিকরা ৷ তবে, আজ আর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে না ৷ আগামিকাল ময়নাতদন্ত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷
আজ বিকেলেই চাঁচলের এক যুবক মালদা মেডিক্যালে আসেন ৷ তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী গত বুধবার থেকে নিখোঁজ ৷ ও বাপের বাড়ি যাবে বলে বেরিয়েছিল ৷ কিন্তু, বাপের বাড়ি থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে খবর দেয় ৷ পুলিশের সঙ্গেই আমি মেডিক্যালে আসি ৷ মৃতদেহ দেখি ৷ কিন্তু এটি আমার স্ত্রীর দেহ নয় ৷”
ওই যুবক মেডিক্যাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই চাঁচল থেকে সেখানে উপস্থিত হন মা ও মেয়ে ৷ তাঁরা দু’জনেই মৃতদেহ দেখেন ৷ দেহের বিভিন্ন চিহ্ন দেখে দু’জনেই মৃতদেহ শনাক্ত করেন ৷ পুলিশকেও তাঁরা জানান, দেহটি তাঁদের বাড়ির মেয়ের ৷ উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে মৃত মহিলার মা বলেন, “এই মৃতদেহ আমার মেয়ের ৷ জ্বালিয়ে দেওয়ায় মুখ দেখে মেয়েকে চিনতে পারিনি ৷ তবে দেহের বিভিন্ন জায়গায় চিহ্ন দেখে আমি নিশ্চিত, এই দেহ আমার মেয়েরই ৷ গতকাল রাতে ফেসবুক থেকে আমি বিষয়টি জানতে পারি ৷ বুধবার থেকে মেয়ের কোনও সন্ধান পাচ্ছিলাম না ৷ আমার জামাই স্ত্রীর মৃতদেহ চিনতে অস্বীকার করেছে ৷ এটা ওর ব্যাপার ৷ কিন্তু, মেয়ে বাড়ি থেকে কীভাবে এত দূরে গেল ? সেটাই বুঝতে পারছি না ৷’’ তবে, এই ঘটনায় কারও উপরে তিনি সন্দেহ করছেন কি না ? এই প্রশ্ন জানান, ‘‘আমি কাউকে সন্দেহ করছি না ৷ কারণ, কোনও প্রমাণ আমার কাছে নেই ৷ সেটা পুলিশ বের করবে ৷”
আরও পড়ুন: অ্যাসিডে ঝলসানো মুখ, ধানখেতে উদ্ধার মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ; পাশে ছড়িয়ে কনডোম !
মৃত মহিলার বোনের দাবি, “এটা আমার দিদিরই মৃতদেহ ৷ ওর হাত-পা আর পেটে দাগ ছিল ৷ এই দেহেও সেসব অবিকল রয়েছে ৷ জামাইবাবু কেন দিদির মৃতদেহ চিনতে অস্বীকার করল, সেটা বলতে পারব না ৷ আমাদের বাড়ি 9 কিলোমিটার দূরে ৷ তবে দিদির সঙ্গে জামাইবাবুর অশান্তি ছিল ৷ কথায় কথায় দিদিকে মারত ৷ আজ নিয়ে ছ’দিন ধরে দিদি নিখোঁজ ৷ কিন্তু জামাইবাবু আমাদের সেই খবর দেয়নি, পুলিশেও জানায়নি ৷ গতকাল সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ আমরা খবর পাই, দিদিকে খুন করা হয়েছে ৷ দিদি বুধবার আমাদের বাড়ি যায়নি ৷ 22 দিন আগে গিয়েছিল ৷ জামাইবাবু মিথ্যে কথা বলছে ৷”
এদিকে গ্রামবাসীদের মারফৎ জানা দিয়েছে, ছ’বছর আগে মৃতার বিয়ে হয়েছিল ওই যুবকের সঙ্গে ৷ তাঁদের কোনও সন্তান হয়নি ৷ এ নিয়ে প্রায়শই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ লেগে থাকত ৷ বুধবার থেকে তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ অবশেষে শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রায় 50 কিলোমিটার দূরে ধানখেতের পাশ থেকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় রবিবার সকালে ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই ঘটনায় মৃতের মাকে থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হবে ৷ আগামিকাল মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে ৷ মৃত্যুর আগে ওই মহিলার সঙ্গে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল কিনা, ময়নাতদন্তের পরেই তা জানা যাবে ৷”