মালদা, 22 জুলাই: মালদার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি জানাল বিজেপি ৷ সেই দাবিতে শনিবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে গেরুয়া শিবির ৷ এদিনের বিক্ষোভে সামিল হন উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু, দলের দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ, উজ্জ্বল দত্ত-সহ আরও অনেকে ৷ দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ ও সিভিককর্মীদের কঠোর শাস্তিও দাবি করেছেন তাঁরা ৷
পুরো বিষয়টি নিয়ে সেখানকার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ এখন জঙ্গলের রাজত্বে পরিণত হয়েছে কি না, জানি না ৷ তবে 12 বছর ধরেই এই রাজ্যে মহিলারা অসুরক্ষিত ৷ এখানে বারবার মহিলারা আক্রান্ত হয়েছেন ৷ গত মঙ্গলবার পাকুয়াহাটে দু’জন মহিলাকে পুলিশের সামনে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়েছে ৷ পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ৷ পুলিশের সামনেই এমন ঘটনা ঘটলে রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়? এ রাজ্যে মহিলারা আক্রান্ত হচ্ছেন, অথচ রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী অন্য রাজ্য নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন ৷ ওখানে তিনি নাকি টিম পাঠাবেন ৷ তিনি বরং এখানে টিম পাঠান ৷"
তাঁর কথায়, বামনগোলা থানার আইসি বলছেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন ৷ কিন্তু কিছু জানেন না ৷ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তার উত্তর দিতে পারেননি ৷ পুলিশ সুপারকে আমার ফোন থেকে একাধিকবার ফোন করেছি ৷ তিনি ফোন ধরেননি ৷ অর্থাৎ, পুলিশ সুপার এখানে জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করছেন ৷ এখানে তৃণমূল এবং সেই দলের মুখ্যমন্ত্রী অন্য রাজ্যের দিকে আঙুল তুলছেন ৷ নিজেদের রাজ্যের দিকে কে আঙুল তুলবে? তাঁরা আগে নিজেদের রাজ্য দেখুন ৷ পাকুয়াহাট পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে ৷ অথচ পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাটক দেখেছে ৷ এই রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা, আত্মমর্যাদা, সম্মান, কিছুই কি নেই? আমরা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি ৷ একইসঙ্গে যে পুলিশ ও সিভিককর্মীরা সেদিন দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের গ্রেফতারির দাবি জানাচ্ছি ৷
আরও পড়ুন: মালদার ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতির অভিযোগ শশীর, সরব বাম-কংগ্রেসও
এদিকে ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ডিএসপির পর এবার পাকুয়াহাট গিয়েছেন পুলিশ সুপার নিজেও ৷ এ নিয়ে তাঁরা এখনও কিছু না জানাননি ৷ তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, 18 জুলাই পাকুয়াহাটে বাস্তবিকই এই ঘটনা ঘটেছিল ৷ পুলিশের বিরুদ্ধে আরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে ৷ অভিযোগ, নির্যাতিতা দুই মহিলাকে আইনি সাহায্য করার পরিবর্তে তাঁদের বিরুদ্ধেই ছিনতাইয়ের মামলা রুজু করে বামনগোলা থানার পুলিশ ৷ এই মুহূর্তে দুই মহিলা জেলা সংশোধনাগারে রয়েছেন ৷
প্রসঙ্গত, পাকুয়াহাটের ঘটনার একটি ভিডিয়ো ক্লিপ শুক্রবার থেকেই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল ৷ 18 তারিখ ওই ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রের খবর ৷ আজ সকালে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব ইটিভি ভারতকে জানান, এই ঘটনায় গতকাল রাতে পুলিশের তরফে সুয়োমোটো মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে ৷ আজ সকালে এ নিয়ে সবার প্রথমে টুইট করেন বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অমিত মালব্য ৷ ঘটনার ভিডিয়ো ক্লিপ দিয়েই টুইট করেছিলেন তিনি ৷ তারপর একে একে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ একাধিক শীর্ষ নেতা এই ঘটনা নিয়ে নিজেদের টুইটার হ্যান্ডেলে সরব হন ৷ দুপুরে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব ৷ বামনগোলা ব্লকটি উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে ৷
আরও পড়ুন: দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ভিডিয়ো নিয়ে সরব বিজেপি, তদন্তে মালদা পুলিশ
এদিকে পুলিশ সূত্রের খবর, যে দুই মহিলার উপর গত মঙ্গলবার এই অত্যাচার হয়েছিল, তাঁরা মানিকচক থানা এলাকার বাসিন্দা ৷ জানা গিয়েছে, সেদিন হাটে একজনের টাকা ছিনতাইয়ের সময় তাঁরা হাতেনাতে ধরা পড়ে যান ৷ এরপরেই তাঁদের উপর জনরোষ আছড়ে পড়ে ৷ দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর পুলিশ কোনওরকমে তাঁদের উদ্ধার করে ৷ কিন্তু তাঁদের আইনি সাহায্য করার জায়গায় বামনগোলা থানার পুলিশ ছিনতাইয়ের মামলা রুজু করে তাঁদের জেলা আদালতে পেশ করে ৷ বিচারকের নির্দেশে বর্তমানে তাঁরা জেলা সংশোধনাগারে বন্দি ৷ এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ যার জেরে জেলা পুলিশ আরও বিড়ম্বনায় পরেছে ৷