মালদা, 9 জুলাই : মালদার গাজোলে স্ট্রং রুমের ভিতরে রাখা ব্যালটে তৃণমূলের হয়ে ছাপ্পা মারছেন প্রিসাইডিং অফিসার ৷ ডিউটি শেষ হয়ে গেলেও তিনি রবিবার দুপুর পর্যন্ত যে স্কুলে স্ট্রং রুম তৈরি করা হয়েছে, তারই একটি ঘরে বসে রয়েছেন ৷ এক প্রশাসনিক কর্তার বিরুদ্ধে এই মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ শনিবার রাত থেকেই তিনি স্ট্রং রুমের গেটের সামনে পাহারায় বসে রয়েছেন ৷ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন-সহ দলের আরও অনেকে ৷ এনিয়ে শোরগোল পড়েছে গাজোলজুড়ে ৷
এবারের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গাজোল বিধানসভা কেন্দ্র এলাকার স্ট্রং রুম করা হয়েছে হাজি নাকু মহম্মদ হাইস্কুলে ৷ রবিবার ভোর পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন বুথের ব্যালট বক্স জমা দিয়েছেন ভোটকর্মীরা ৷ বিজেপির অভিযোগ, শনিবার ভোটপর্বের সময় দেদার ছাপ্পা, বুথ জ্যাম, রিগিং, ব্যালট বক্স নিয়ে পালানোর পরেও ভোটে জেতার ভরসা পাচ্ছে না তৃণমূল ৷ তাই প্রশাসনের সহায়তায় এবার তারা স্ট্রং রুমেও ব্যালট বক্সে ছাপ্পা দেওয়া পেপার ঢোকাচ্ছে ৷ আরও গুরুতর অভিযোগ, শুধু তৃণমূলের লোকজনই নয়, সেই কাজ করছেন খোদ প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে স্ট্রং রুমের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের একাংশও ৷
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই টুইট করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য ৷ অন্যদিকে, স্ট্রং রুম পাহারা দিতে দিতেই এদিন খগেন মুর্মু জানান,“তৃণমূলের বুথ দখল, ছাপ্পা, ব্যালট বক্স চুরি ইত্যাদির প্রতিবাদে গতকাল রাত 11টা থেকে আমরা এখানে ধরণায় বসেছি ৷ হাজি নাকু মহম্মদ হাইস্কুলের স্ট্রং রুমেও একাধিক বেআইনি কাজ করছে শাসকদল ৷ এই স্ট্রং রুম থেকে 83 নম্বর বুথের ব্যালট বক্স উধাও হয়ে গিয়েছে ৷ অথচ গতকাল রাতে 83 নম্বর বুথের ভোটকর্মীরা ব্যালট বক্স রিসিভিং সেকশনে জমা দিয়েছেন ৷ জমা পড়ার পর স্ট্রং রুম থেকে ব্যালট বক্স গেল কোথায়? এনিয়ে বিডিও এবং জয়েন্ট বিডিএকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা কিছু বলতেই পারছেন না ৷ এখনও পর্যন্ত 83 নম্বর বুথের ব্যালট বাক্সের খোঁজ নেই ৷ আসলে ওটা তৃণমূলের ঘরে চলে গিয়েছে৷ ছাপ্পা মারার পর ওই ব্যালট বাক্স এখানে নিয়ে আসা হবে ৷"
আরও পড়ুন: রাজীবা সিনহার পদত্যাগের দাবিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে বিক্ষোভ বিজেপির
খগেনবাবু আরও জানান, লোপাট হওয়া ওই ব্যালট বক্স যাতে কেউ ফের স্ট্রং রুমে ঢোকাতে না-পারে, তার জন্য তাঁরা পাহারা দিচ্ছেন৷, তাঁর দাবি, 217 নম্বর বুথের পোলিং স্টাফ এবং প্রিসাইডিং অফিসার এই স্কুলের 116 নম্বর রুমে গতকাল রাতে ব্যালট বক্স খুলে, ফাঁকা করে নতুন ব্যালট পেপারে ছাপ্পা মারছিলেন ৷ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ব্যালট বক্সই ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল ৷ নতুন ব্যালট পেপারে ছাপ্পা মেরে তিনি ওই ব্যালট বক্সে ভরছিলেন ৷ সেই ছবি আমাদের কাছেও রয়েছে৷ আসলে পঞ্চায়েতই এমন একমাত্র সংস্থা, যেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা খরচ হয় ৷ সেই টাকা চুরির জন্য তৃণমূলের সঙ্গে প্রিসাইডিং অফিসারও ছাপ্পা ব্যালট বক্সে ভরছিলেন ৷ গাজোলের 253টি বুথের সঙ্গে গোটা রাজ্যে পুনর্নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছেন খগেন মুর্মু ৷
যদিও এনিয়ে প্রশাসন কিংবা শাসকদলের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসির সঙ্গেও ৷