মালদা, 1 মার্চ: কোনও বিধায়ক না, হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়কে (Haimanti Ganguly) চাঁচলে দু’দিন লুকিয়ে রেখেছিলেন রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ৷ বুধবার ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় সেই দাবি করেছেন উত্তর মালদার সাংসদ বিজেপির খগেন মুর্মু (BJP MP Khagen Murmu) ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই মন্ত্রীর কথায় জেলা তৃণমূলের (Trinamool Congress) নেতারাও ভুয়ো নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এই মহিলাকে চাঁচলে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করেছেন ৷ যদিও সাংসদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তাদের বক্তব্য, সাংসদ যদি এতই জেনে থাকেন, তবে তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করছেন না কেন ?
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের যোগ গত বৃহস্পতিবারই সামনে আসে ৷ সেদিন আলিপুর আদালত থেকে বেরোনোর সময় এই মামলায় ধৃত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের মুখেই শোনা গিয়েছিল যে চাকরি বিক্রির মোটা অংকের টাকা এই মডেলের কাছে জমা রয়েছে ৷ এরপর থেকেই হৈমন্তীকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় গোটা রাজ্যে ৷ কিন্তু তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসতেই যেন কর্পূরের মতো উবে যান হৈমন্তী ৷ এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷
সেই হৈমন্তীই নাকি টানা দু’দিন চাঁচলে লুকিয়ে ছিলেন ৷ আজ ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “হৈমন্তী এখানে দু’দিন ছিলেন ৷ ব্যক্তি নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই ৷ কিন্তু যারা চাকরি চোর, যারা চাকরি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে, বেকারদের সর্বনাশ করছে, তাদের বাইরে থাকার কোনও অধিকার নেই ৷ আজ যারা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধরা পড়ছে, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই টাকার পাহাড় উদ্ধার হচ্ছে ৷ এই টাকা কোথা থেকে এল ? তৃণমূল দলটা চোরে ভর্তি ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘হৈমন্তীকে এখানে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রী ৷ তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও মন্ত্রীর কথায় হৈমন্তীর থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন ৷ 26 ও 27 ফেব্রুয়ারি তিনি চাঁচলে ছিলেন ৷ আমি জেনেছি, তিনি একটি হোটেলে ছিলেন ৷ তৃণমূলের ভিতর থেকেই আমার কাছে এই খবর এসেছে ৷”
জেলা বিজেপি (BJP) সূত্রে খবর, হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় যে দু’দিন চাঁচলে ছিলেন, তার উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সাংসদ খগেন মুর্মুর হাতে রয়েছে ৷ তবে হৈমন্তী চাঁচলের একটি হোটেলে উঠলেও পরে তিনি একটি বাড়িতে চলে যান ৷ ওই বাড়ির সদস্যরা একটি ধর্মগুরুর শিষ্য ৷ গৃহকর্তা ঋত্বিক হিসেবে মানুষকে দীক্ষাও দেন ৷ সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷
যদিও সাংসদের অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে ঘাসফুল শিবির ৷ চাঁচল-1 নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি শেখ আফসার আলির বক্তব্য, বিষয়টি হতাশাজনক ৷ একজন সাংসদ কোনও অভিযোগ করলে তার উপযুক্ত প্রমাণ হাতে থাকা উচিত ৷ সাংসদের উচিত ছিল, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে চাঁচল থানায় এফআইআর করা ৷ কিন্তু তা না করে তিনি হাওয়ায় অভিযোগ ভাসিয়ে দিয়েছেন ৷ তাঁর আরও দাবি, ‘‘তাঁর কাছ থেকে আমরা যথাযথ তথ্য আশা করছি ৷ এভাবে চাঁচলবাসীকে ভ্রান্তির মধ্যে রাখা তাঁর উচিত হয়নি ৷ হৈমন্তী এখানে আসেননি ৷ তাহলে তার কোনও প্রমাণ থাকত ৷ সাংসদ যা বলেছেন, তা ডাহা মিথ্যে ৷”
একই বক্তব্য তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীরও ৷ তিনি বলেন, “খগেনবাবু এত জানলে থানায় অভিযোগ জানাচ্ছেন না কেন ? উনি কথায় কথায় ইডি আর সিবিআই বলছেন ৷ তাঁর আগে আইপিসি আর সিআরপিসি জানা উচিত ৷ এফআইআর করতে গেলে ইডির দরকার হয় না ৷ আমি যদি খগেনবাবুর নাম না করে কোনও অভিযোগ করি, সেটা কি ভালো হবে ?”
আরও পড়ুন: 11 রাজ্যে 104টি সংস্থার মালকিন হৈমন্তী ! তথ্যতালাশ কেন্দ্রীয় সংস্থার