মালদা, 23 নভেম্বর : 21-র বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন CPI(M) নেতা সুজন চক্রবর্তী। আগামী 26 নভেম্বর ভারত বনধের সমর্থনে সভা করতে আজ মালদায় আসেন তিনি। দুপুরে বৈষ্ণবনগরে সভায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি পুরাতন মালদায় একটি দলীয় সভায় অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন CPI(M)-র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র, দলীয় নেতা বিশ্বনাথ ঘোষ, জামিল ফিরদৌস, প্রণব দাস সহ অন্যান্যরা। এদিনের সভায় সুজনবাবু আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি পুরাতন মালদায় একটি মিছিলও করেন।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের তরফে একাধিক দাবিতে আগামী 26 নভেম্বর দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই ধর্মঘট সফল করতে আজ বৈষ্ণবনগরে জেলা বামফ্রন্টের পক্ষে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে আজ মালদায় আসেন CPI(M)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজ্যের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তার আগে তিনি পুরাতন মালদার ওসমানিয়া হাই মাদ্রাসায় আয়োজিত একটি দলীয় সভায় অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, "এখন মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই। সেই কারণে আমরা মানুষের কাছে আগামী 26 তারিখের ধর্মঘটের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি প্রতিনিয়ত। কারণ, মানুষের বাঁচার লড়াইয়ে লালঝান্ডার কোনও বিকল্প নেই। "
একুশের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে সুজনবাবু বলেন, "এর আগের নির্বাচনে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করার চেষ্টা করেছি। মালদাতেও তাই হয়েছিল। যৌথভাবে লড়াই করে আমরা BJP-র ভোট কমাতে পেরেছিলাম। তৃণমূল পর্যুদস্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে অবশ্য তৃণমূল ঘোড়া কেনাবেচা করেছে অনেক। বামেরা সবসময় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলে। এবারও বামফ্রন্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলবে। তৃণমূল এবং বিজেপিকে পরাস্ত করবে। অন্যদের মতো আমরা জোট করি না। মানুষের বাঁচার লড়াইয়ে আগামী 26 তারিখের ধর্মঘট আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবেই পালন করব।"
কোরোনা পরবর্তী সময়ে মালদা জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সুজনবাবুর মন্তব্য, "এরা কেউ পরিযায়ী শ্রমিক নয়। এরা সবাই আমাদের রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষ। রাজ্যে কাজ পায় না বলে এদের বাইরে যেতে হয়। সেটা এদের দোষ নয়। তৃণমূলের আমলে এই শ্রমিকদের সংখ্যা সাত থেকে আটগুণ বেড়েছে। এই রাজ্যে কলকারখানা কিংবা শিল্পের বারোটা বেজে গিয়েছে। এরা রাজ্যটাকে বন্ধ্যা করে দিয়েছে। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কোরোনার সময় যখন এই শ্রমিকরা বাইরে থেকে ফিরবে, তখন রাজ্য সরকার ভয় পেয়ে গেল। রাজ্য সরকার কোরোনা স্পেশাল বলে দিল। রাজ্য সরকার নিজেদের কোনও দায়িত্ব পালন করল না। কেন্দ্রীয় সরকারও নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেল। আমরা নিজেদের সামর্থ্য মতো এই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই শ্রমিকদের নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে ঘরে ফিরতে হয়েছে। তারা সর্বস্বান্ত হয়েছে। এখানে এসেও তারা কাজ পাচ্ছে না। এভাবে দু'মাস, তিনমাস চলতে পারে। কিন্তু তারপর? তাই বেঁচে থাকতে মানুষ পুঁজি ভাঙছে। আর এখানে পিসি-ভাইপো, ওখানে আদানি-আম্বানিদের সম্পত্তি বাড়ছে। মানুষ এখন বুঝে গিয়েছে, তাদের করণীয় কী।"
মালদা জেলার নদী ভাঙনের সমস্যা নিয়েও এদিন মন্তব্য করেন প্রবীণ এই CPI(M) নেতা। তিনি বলেন, "এনিয়ে একাধিকবার দুই সরকারকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে না। ভাঙন সমস্যা দূর করতে দুই সরকারেরই দায়িত্ব রয়েছে। বাম আমলে আমরা এই ইশুতে সব দলের লোককে সঙ্গে নিয়ে দিল্লি যেতাম। কিন্তু গত 10 বছরে এই সরকার এই ইশুতে সর্বদলীয় প্রতিনিধি নিয়ে দিল্লি যাওয়ার কথা একবারও ভাবেনি। মানুষ সবই দেখছে। 21-র নির্বাচনে BJP আর তৃণমূলের ভরাডুবি হবেই। জিতবে মানুষ। জিতব আমরা ।"