মালদা, 13 মে : রেললাইনের ধার থেকে পাওয়া গিয়েছিল 19 বছরের এক যুবকের মৃতদেহ । তদন্তে দুর্ঘটনার তত্ত্ব খাড়া করেছিল পুলিশ । যদিও মৃত যুবকের মা ও বাবা দাবি করেন দুর্ঘটনা নয়, খুন করা হয়েছে তাঁদের সন্তানকে । তাঁদের সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল পুলিশ । কিন্তু তারপরও না কি খুনিরা ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করেছে । গতকাল সেই অভিযোগ নিয়ে ফের পুলিশের দ্বারস্থ হলেন মৃত যুবকের মা ।
পুরাতন মালদা পৌরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের চিতোরপুরের বাসিন্দা বিপ্লব মণ্ডল পেশায় টোটোচালক । বছরখানেক আগে এলাকারই একজন মেয়েকে বিয়ে করেন । তাঁর বাবা অনন্ত মণ্ডল পেশায় সবজি বিক্রেতা । মা সীমা মণ্ডল গৃহবধূ । বিপ্লব ছিলেন তাঁদের একমাত্র সন্তান । অন্য দিনের মতো 13 মার্চের সকালেও টোটো নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি । সেদিন রাতে বিপ্লব আর বাড়ি ফেরেননি । অনেক সন্ধান করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি । বন্ধ ছিল তাঁর মোবাইল ফোনও । পরদিন সকালে পুরাতন মালদা রেল জংশনের পাশে তাঁর টোটো দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা । তখন ফের বিপ্লবের মোবাইলে ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তাঁরা । রেলপুলিশ সেই ফোনের উত্তর দেয় । রেলপুলিশ জানায়, রেললাইনের ধারে গুরুতর জখম অবস্থায় বিপ্লব পড়ে রয়েছেন । সেই খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন বিপ্লবকে উদ্ধার করে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করেন । পরদিন ভোরে বিপ্লবের মৃত্যু হয় ।
এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে বিপ্লব নেশায় আসক্ত ছিলেন । তিনি প্রায়শই নেশা করার জন্য রেললাইনের ধারে যেতেন । 13 মার্চ রাতেও তিনি নেশা করেছিলেন । ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার উল্লেখ রয়েছে । তাই সম্ভবত নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তিনি রেললাইনে পড়ে গিয়ে আঘাত পান । আর তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর । যদিও বিপ্লবের পরিবারের লোকজন দাবি করে আসছিলেন, দুর্ঘটনা নয়, এটা খুন । কেউ বা কারা বিপ্লবকে বেধড়ক মারধর করে রেললাইনের ধারে ফেলে দিয়েছে । তবে পরিবারের লোকজনের এই দাবিকে বিশেষ আমল দেয়নি পুলিশ ।
বিপ্লবের মা সীমা মণ্ডল জানান, কয়েকদিন আগে কোর্ট স্টেশন এলাকায় তাঁর সঙ্গে উমেদ আলি নামে একজনের দেখা হয় । তিনি উমেদকে চিনতেন না । উমেদ নিজে এসে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করে । ইংরেজবাজারের মহদিপুর এলাকায় তার বাড়ি । সে তাঁকে জানায়, বিপ্লবকে তারাই খুন করেছে । তার সঙ্গে ছিল মিঠুন, জনি, পবন ও বাপি নামে আরও চারজন । সে তাঁকে জানায়, 50 হাজার টাকা দিলে সে পুলিশের কাছে সব কথা খুলে বলবে । আর টাকা না দিলে বিপ্লবের মতো তাঁদেরও খুন করবে । 3 মে তিনি উমেদকে 20 হাজার টাকা দেন । পরদিন তিনি ফের উমেদকে 30 হাজার টাকা দেন । এর মধ্যে 45 হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন তিনি । তার প্রমাণও রয়েছে । উমেদ তাঁকে জনৈক বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করার নির্দেশ দিয়েছিল । কিন্তু সেই টাকা পাওয়ার পর 9 মে উমেদ ফের তাঁর থেকে 50 হাজার টাকা চায় । সে বিপ্লবের মা কে ভয় দেখিয়ে বলে, টাকা না দিলে সে পুলিশের কাছে গিয়ে বলবে মিঠুন, জনি, পবন ও বাপিকে খুন করার জন্য এই টাকা দিয়েছেন । তিনি বুঝতে পারেন তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছে উমেদ । তাই গতকাল গোটা ঘটনা জানিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি ।
মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, সীমা মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । তবে, এখনও পর্যন্ত উমেদ আলিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি । তার খোঁজ চলছে ।