ETV Bharat / state

মালদা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে খুনে 50 লাখের সুপারি দলেরই এক নেতার !

টার্গেট ঠিক সেই সময়ই সামনের দিকে ঝুঁকতে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় শ্যুটার ৷ গুলি কানের নীচ ঘেঁষে বেরিয়ে যায় ৷ প্রাণে বেঁচে যান মালদা বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা ৷ তাঁকে খুন করার জন্য দলের নেতা নিতাই মণ্ডল 50 লক্ষ টাকার সুপারি দিয়েছিলেন 19 বছরের শার্প শ্যুটার ভাইপোকে ৷ সপ্তাহখানেক আগে এই ভাইপোকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ পাশাপাশি ধরা পড়ে তার সঙ্গী আরও 6 সুপারি কিলার ৷ তাকে রগড়েই পৌঁছনো গেল কাকা অবধি ৷ শনিবারই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে ৷ অবশ্য তিনি গোটা বিষয়টিই তৃণমূল ও প্রশাসনের যোগসাজশ বলে অভিযোগ করেছেন !

author img

By

Published : May 1, 2021, 5:33 PM IST

Updated : May 1, 2021, 6:30 PM IST

মালদায় গ্রেফতার বিজেপি নেতা ৷
মালদায় গ্রেফতার বিজেপি নেতা ৷

মালদা, 1 মে : জনসভায় তাঁকে কপালে গুলি করে খুনের ছক ছিল ৷ কিন্তু টেবিলের উপর প্লেটে রাখা মিষ্টি খেতে সামনের দিকে ঝুঁকতেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি বেরিয়ে যায় কানের একটু নিচ দিয়ে ৷ কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যান মালদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা ৷ দলীয় প্রার্থীকে খুনের জন্য 50 লাখের সুপারি দিয়েছিলেন পুরাতন মালদার বিজেপি নেতা নিতাই মণ্ডল ৷ প্রাথমিক তদন্তে তা জানতে পেরেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ গোটা ঘটনার পিছনে ছিল অনেক বড় ছক ৷ ধৃত নিতাই মণ্ডল এদিন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগকে তৃণমূল ও প্রশাসনের যোগসাজশ বলে দাবি করেছেন ৷ যদিও জেলা বিজেপি সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "এটা ঘৃণ্যতম অপরাধ ৷ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় ৷ পুলিশ তার নিজের কাজ করবে ৷"

কিন্তু দলীয় প্রার্থীকে খুন করানোর মতো চক্রান্ত কেন করতে গেলেন নিতাইবাবু ৷ তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরাতন মালদা ব্লকে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা করার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে নিতাইবাবুরই ৷ তিনি ভেবেছিলেন, দল তাঁকে এই পরিশ্রমের মূল্য দেবে ৷ মালদা কেন্দ্রে তাঁকেই প্রার্থী করা হবে ৷ কিন্তু এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব গোপালচন্দ্র সাহার নাম ঘোষণা করায় তাঁর স্বপ্ন ভাঙে ৷ দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তিনি ৷ তখনই তিনি যোগাযোগ করেন তাঁর ভাইপো আকাশ মণ্ডলের সঙ্গে ৷ বয়স মাত্র 19 বছর হলেও আকাশ সাহাপুর এলাকার কুখ্যাত সমাজবিরোধী ৷ এর আগেও সে একাধিকবার জেল খেটেছে ৷ মদ্যপান-সহ যাবতীয় নেশা রয়েছে তার ৷ মার্চ মাসে এলাকারই একটি নেশা মুক্তি কেন্দ্রে তাকে রাখা হয়েছিল ৷

মালদায় গ্রেফতার বিজেপি নেতা ৷

পুলিশ সূত্রে খবর, গোপালবাবুকে খুন করার জন্য নিতাইবাবু আকাশের সঙ্গে কথা বলেন ৷ তিনি তাকে জানান, এর জন্য তিনি 50 লক্ষ টাকার সুপারি দিতে রাজি ৷ এরপরই আকাশ তার পুরোনো সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে সাহাপুর বাগানপাড়ার বাসিন্দা বিট্টু মজুমদার ৷ এভাবেই একজোট হয় ছ’জন ৷ সবাই সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা ৷ এরপর যোগাযোগ করা হয় কালিয়াচকের শার্প শ্যুটার সাহেব ঘোষের সঙ্গে ৷ সে রাজি হয় ৷ কিন্তু গোপালবাবুকে খুন করার তেমন সুযোগ পাচ্ছিল না তারা ৷ শেষ পর্যন্ত নিতাইবাবুই তাদের জায়গা বাতলে দেন ৷ ঠিক হয়, 18 এপ্রিল সাহাপুরে ঝন্টু মোড়ে গোপালবাবুকে দলীয় কার্যালয়েই গুলি করা হবে ৷ সেদিন তাঁর ওই কার্যালয়ে সভা করার কথা ছিল ৷ এলাকার রাস্তাঘাট চেনা থাকায় গুলি করার পর পালাতেও সুবিধে হবে ৷ অপারেশন সফল করতে ওই এলাকায় কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার ছকও কষেন নিতাইবাবু ৷

নির্দিষ্ট দিনে সভাস্থলে হাজির হয় সাতজনই ৷ ঠিক ছিল গোপালবাবুকে প্রথমে গুলি করবে সাহেব ৷ তার নিশানা ফসকালে দ্বিতীয় গুলি চালাবে বিট্টু ৷ কোনও গোলমাল হলে এই দু’জনকে উদ্ধার করার দায়িত্বে ছিল বাকি পাঁচজন ৷ তারাও ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল ৷ সাহেবের নিশানাও ছিল অব্যর্থ ৷ গোপালবাবুর কপাল লক্ষ্য করেই গুলি চালায় সে ৷ ঠিক সেই সময়ই গোপালবাবু সামনের প্লেটে থাকা মিষ্টি খেতে একটু ঝুঁকে পড়েন ৷ সেকারণেই গুলি লাগে তাঁর ডানদিকের কানের নীচে ৷ গুলি তাঁর মেরুদণ্ড ঘেঁষে থেমে যায় ৷ এতে মেরুদণ্ডে সামান্য আঘাত ছাড়া আর কিছু হয়নি তাঁর ৷ স্পাইনাল কর্ডেও আঘাত লাগেনি ৷ এদিকে গুলি চালিয়ে সবাই পালিয়ে যেতেই এলাকায় ফের বিদ্যুৎ ফিরে আসে ৷

আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থীকে গুলিকাণ্ডে ছয় সুপারি কিলার গ্রেফতার

তদন্ত চালিয়ে গত 23 এপ্রিল জেলার বিভিন্ন জায়গা, এমনকি বিহার থেকে মালদা থানার পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত ছ’জনকে গ্রেফতার করে ৷ তারা হল বিট্টু চৌধুরী (20), বাড়ি সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক নম্বর বিমল দাস কলোনিতে, আকাশ মণ্ডল (19), একই পঞ্চায়েতের ছাতিয়ান মোড়ে বাড়ি, অর্জুন ওরফে শম্ভু ঘোষ (43), বাড়ি সাহাপুর কালীবাগান এলাকায়, সায়ন সাহা (19), বাড়ি ওই এলাকার ছোট কাদিরপুর গ্রামে, বিকাশ হালদার (21), বাড়ি মালদা শহরের মিশনঘাট এলাকায় এবং সুমন ঘোষ (21), বাড়ি ইংরেজবাজার থানার খাসিমারি গ্রামে ৷ কিন্তু সুমন সাহাপুরে শ্বশুরবাড়িতেই থাকত ৷ এদের জেরা করে গ্রেফতার করা হয় 19 বছরের সাহেবকে ৷ লাগাতার জেরায় শেষ পর্যন্ত উঠে আসে নিতাইবাবুর নাম ৷ গতকাল রাতে মালদা থানার পুলিশ নিতাই মণ্ডলকে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে ৷ একইসঙ্গে বিট্টুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয় ৷ এই ঘটনায় পুলিশ তিনটি পাইপগান, একটি কার্তুজের খোল ও দু'টি তাজা কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ নিতাই মণ্ডলের থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে 64 হাজার টাকা ৷ আজ নিতাইবাবুর বিরুদ্ধে 448, 326, 307, 120b, 34 IPC এবং অস্ত্র আইনের 25/27 ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ পাঁচদিনের হেফাজতে চেয়ে আজ তাঁকে জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷

আরও পড়ুন: মালদায় বিজেপি প্রার্থীকে গুলিকাণ্ডে গ্রেফতার 19 বছরের শার্প শ্যুটার

পুলিশি জেরায় নিতাই মণ্ডল জানিয়েছেন, গোপালবাবুকে খুন করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না ৷ তিনি শুধু তাঁকে ভয় দেখিয়ে নমিনেশন থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছিলেন ৷ কিন্তু আকাশরা পুলিশকে জানিয়েছে, নিতাই তাদের তিনটি প্ল্যান ঠিক করে দিয়েছিলেন ৷ প্রথমে গোপালবাবুকে ভয় দেখাতে হবে ৷ তাতে কাজ না হলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে তাঁকে অপহরণ করতে হবে ৷ কোনও প্ল্যান কাজ না করলে তাঁকে সরিয়ে দিতে হবে ৷ তারা প্রথমে গোপালবাবুকে ভয় দেখাতে শূন্যে গুলিও চালায় ৷ কিন্তু মদের ঘোরে কোথায় গুলি চালিয়েছে তা তারা জানে না ৷ তবে 50 লাখ সুপারির মধ্যে অগ্রিম বাবদ তারা নিতাইয়ের কাছ থেকে 5 লাখ টাকা পেয়েছে ৷

আরও পড়ুন: মালদায় বিজেপি প্রার্থীকে গুলির ঘটনায় ধৃত দলেরই নেতা

পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া আজ বলেন, “মালদা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে গুলি কাণ্ডে মূল ষড়যন্ত্রকারী নিতাই মণ্ডল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এই চক্রে জড়িত সবাইকেই আমরা গ্রেফতার করেছি ৷” বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছিলাম ৷ আমাদের দলের কেউ যদি এই জঘন্য কাজে যুক্ত থাকে, তারও কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন ৷ আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাইছি ৷ পুলিশ যখন নিতাই মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে, তার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও কারণ রয়েছে ৷ পুলিশ নিজের কাজ করবে ৷ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় ৷”

আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনাস্থলে অদূরে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, উঠছে প্রশ্ন

এদিকে ধৃত নিতাই মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূল এবং প্রশাসন একজোট হয়ে আমাকে ফাঁসাচ্ছে ৷ আমি নির্দোষ ৷ তদন্তেই সব উঠে আসবে ৷” তাঁর ভাইপো আকাশের বক্তব্য, “আমাদের বন্দুকের সামনে ভয় দেখিয়ে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করিয়েছে পুলিশ ৷ আমরা এই কাজ করিনি ৷ কে করেছে, জানি না ৷”

মালদা, 1 মে : জনসভায় তাঁকে কপালে গুলি করে খুনের ছক ছিল ৷ কিন্তু টেবিলের উপর প্লেটে রাখা মিষ্টি খেতে সামনের দিকে ঝুঁকতেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি বেরিয়ে যায় কানের একটু নিচ দিয়ে ৷ কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যান মালদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গোপালচন্দ্র সাহা ৷ দলীয় প্রার্থীকে খুনের জন্য 50 লাখের সুপারি দিয়েছিলেন পুরাতন মালদার বিজেপি নেতা নিতাই মণ্ডল ৷ প্রাথমিক তদন্তে তা জানতে পেরেছে মালদা থানার পুলিশ ৷ গোটা ঘটনার পিছনে ছিল অনেক বড় ছক ৷ ধৃত নিতাই মণ্ডল এদিন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগকে তৃণমূল ও প্রশাসনের যোগসাজশ বলে দাবি করেছেন ৷ যদিও জেলা বিজেপি সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "এটা ঘৃণ্যতম অপরাধ ৷ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় ৷ পুলিশ তার নিজের কাজ করবে ৷"

কিন্তু দলীয় প্রার্থীকে খুন করানোর মতো চক্রান্ত কেন করতে গেলেন নিতাইবাবু ৷ তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরাতন মালদা ব্লকে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা করার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে নিতাইবাবুরই ৷ তিনি ভেবেছিলেন, দল তাঁকে এই পরিশ্রমের মূল্য দেবে ৷ মালদা কেন্দ্রে তাঁকেই প্রার্থী করা হবে ৷ কিন্তু এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব গোপালচন্দ্র সাহার নাম ঘোষণা করায় তাঁর স্বপ্ন ভাঙে ৷ দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তিনি ৷ তখনই তিনি যোগাযোগ করেন তাঁর ভাইপো আকাশ মণ্ডলের সঙ্গে ৷ বয়স মাত্র 19 বছর হলেও আকাশ সাহাপুর এলাকার কুখ্যাত সমাজবিরোধী ৷ এর আগেও সে একাধিকবার জেল খেটেছে ৷ মদ্যপান-সহ যাবতীয় নেশা রয়েছে তার ৷ মার্চ মাসে এলাকারই একটি নেশা মুক্তি কেন্দ্রে তাকে রাখা হয়েছিল ৷

মালদায় গ্রেফতার বিজেপি নেতা ৷

পুলিশ সূত্রে খবর, গোপালবাবুকে খুন করার জন্য নিতাইবাবু আকাশের সঙ্গে কথা বলেন ৷ তিনি তাকে জানান, এর জন্য তিনি 50 লক্ষ টাকার সুপারি দিতে রাজি ৷ এরপরই আকাশ তার পুরোনো সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে সাহাপুর বাগানপাড়ার বাসিন্দা বিট্টু মজুমদার ৷ এভাবেই একজোট হয় ছ’জন ৷ সবাই সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা ৷ এরপর যোগাযোগ করা হয় কালিয়াচকের শার্প শ্যুটার সাহেব ঘোষের সঙ্গে ৷ সে রাজি হয় ৷ কিন্তু গোপালবাবুকে খুন করার তেমন সুযোগ পাচ্ছিল না তারা ৷ শেষ পর্যন্ত নিতাইবাবুই তাদের জায়গা বাতলে দেন ৷ ঠিক হয়, 18 এপ্রিল সাহাপুরে ঝন্টু মোড়ে গোপালবাবুকে দলীয় কার্যালয়েই গুলি করা হবে ৷ সেদিন তাঁর ওই কার্যালয়ে সভা করার কথা ছিল ৷ এলাকার রাস্তাঘাট চেনা থাকায় গুলি করার পর পালাতেও সুবিধে হবে ৷ অপারেশন সফল করতে ওই এলাকায় কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার ছকও কষেন নিতাইবাবু ৷

নির্দিষ্ট দিনে সভাস্থলে হাজির হয় সাতজনই ৷ ঠিক ছিল গোপালবাবুকে প্রথমে গুলি করবে সাহেব ৷ তার নিশানা ফসকালে দ্বিতীয় গুলি চালাবে বিট্টু ৷ কোনও গোলমাল হলে এই দু’জনকে উদ্ধার করার দায়িত্বে ছিল বাকি পাঁচজন ৷ তারাও ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল ৷ সাহেবের নিশানাও ছিল অব্যর্থ ৷ গোপালবাবুর কপাল লক্ষ্য করেই গুলি চালায় সে ৷ ঠিক সেই সময়ই গোপালবাবু সামনের প্লেটে থাকা মিষ্টি খেতে একটু ঝুঁকে পড়েন ৷ সেকারণেই গুলি লাগে তাঁর ডানদিকের কানের নীচে ৷ গুলি তাঁর মেরুদণ্ড ঘেঁষে থেমে যায় ৷ এতে মেরুদণ্ডে সামান্য আঘাত ছাড়া আর কিছু হয়নি তাঁর ৷ স্পাইনাল কর্ডেও আঘাত লাগেনি ৷ এদিকে গুলি চালিয়ে সবাই পালিয়ে যেতেই এলাকায় ফের বিদ্যুৎ ফিরে আসে ৷

আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থীকে গুলিকাণ্ডে ছয় সুপারি কিলার গ্রেফতার

তদন্ত চালিয়ে গত 23 এপ্রিল জেলার বিভিন্ন জায়গা, এমনকি বিহার থেকে মালদা থানার পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত ছ’জনকে গ্রেফতার করে ৷ তারা হল বিট্টু চৌধুরী (20), বাড়ি সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক নম্বর বিমল দাস কলোনিতে, আকাশ মণ্ডল (19), একই পঞ্চায়েতের ছাতিয়ান মোড়ে বাড়ি, অর্জুন ওরফে শম্ভু ঘোষ (43), বাড়ি সাহাপুর কালীবাগান এলাকায়, সায়ন সাহা (19), বাড়ি ওই এলাকার ছোট কাদিরপুর গ্রামে, বিকাশ হালদার (21), বাড়ি মালদা শহরের মিশনঘাট এলাকায় এবং সুমন ঘোষ (21), বাড়ি ইংরেজবাজার থানার খাসিমারি গ্রামে ৷ কিন্তু সুমন সাহাপুরে শ্বশুরবাড়িতেই থাকত ৷ এদের জেরা করে গ্রেফতার করা হয় 19 বছরের সাহেবকে ৷ লাগাতার জেরায় শেষ পর্যন্ত উঠে আসে নিতাইবাবুর নাম ৷ গতকাল রাতে মালদা থানার পুলিশ নিতাই মণ্ডলকে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে ৷ একইসঙ্গে বিট্টুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয় ৷ এই ঘটনায় পুলিশ তিনটি পাইপগান, একটি কার্তুজের খোল ও দু'টি তাজা কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ নিতাই মণ্ডলের থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে 64 হাজার টাকা ৷ আজ নিতাইবাবুর বিরুদ্ধে 448, 326, 307, 120b, 34 IPC এবং অস্ত্র আইনের 25/27 ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ পাঁচদিনের হেফাজতে চেয়ে আজ তাঁকে জেলা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷

আরও পড়ুন: মালদায় বিজেপি প্রার্থীকে গুলিকাণ্ডে গ্রেফতার 19 বছরের শার্প শ্যুটার

পুলিশি জেরায় নিতাই মণ্ডল জানিয়েছেন, গোপালবাবুকে খুন করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না ৷ তিনি শুধু তাঁকে ভয় দেখিয়ে নমিনেশন থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছিলেন ৷ কিন্তু আকাশরা পুলিশকে জানিয়েছে, নিতাই তাদের তিনটি প্ল্যান ঠিক করে দিয়েছিলেন ৷ প্রথমে গোপালবাবুকে ভয় দেখাতে হবে ৷ তাতে কাজ না হলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে তাঁকে অপহরণ করতে হবে ৷ কোনও প্ল্যান কাজ না করলে তাঁকে সরিয়ে দিতে হবে ৷ তারা প্রথমে গোপালবাবুকে ভয় দেখাতে শূন্যে গুলিও চালায় ৷ কিন্তু মদের ঘোরে কোথায় গুলি চালিয়েছে তা তারা জানে না ৷ তবে 50 লাখ সুপারির মধ্যে অগ্রিম বাবদ তারা নিতাইয়ের কাছ থেকে 5 লাখ টাকা পেয়েছে ৷

আরও পড়ুন: মালদায় বিজেপি প্রার্থীকে গুলির ঘটনায় ধৃত দলেরই নেতা

পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া আজ বলেন, “মালদা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে গুলি কাণ্ডে মূল ষড়যন্ত্রকারী নিতাই মণ্ডল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এই চক্রে জড়িত সবাইকেই আমরা গ্রেফতার করেছি ৷” বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানাচ্ছিলাম ৷ আমাদের দলের কেউ যদি এই জঘন্য কাজে যুক্ত থাকে, তারও কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন ৷ আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাইছি ৷ পুলিশ যখন নিতাই মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে, তার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও কারণ রয়েছে ৷ পুলিশ নিজের কাজ করবে ৷ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় ৷”

আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনাস্থলে অদূরে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, উঠছে প্রশ্ন

এদিকে ধৃত নিতাই মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূল এবং প্রশাসন একজোট হয়ে আমাকে ফাঁসাচ্ছে ৷ আমি নির্দোষ ৷ তদন্তেই সব উঠে আসবে ৷” তাঁর ভাইপো আকাশের বক্তব্য, “আমাদের বন্দুকের সামনে ভয় দেখিয়ে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করিয়েছে পুলিশ ৷ আমরা এই কাজ করিনি ৷ কে করেছে, জানি না ৷”

Last Updated : May 1, 2021, 6:30 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.