হরিশ্চন্দ্রপুর, 4 অগস্ট : অবশেষে পাঁচ বছর পর শিকলবন্দি দশা ঘুচল সেলিমের । শিকল থেকে মুক্ত হয়ে জামা-প্যান্ট পরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে চেপে চিকিৎসার জন্য বহরমপুর রওনা দিল সে । জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মঙ্গলবার তাকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে পাঠায় হরিশ্চন্দ্রপুর-2 নম্বর ব্লক আধিকারিক । সম্পূর্ণ সরকারি খরচেই সেলিমের চিকিৎসা হবে বলে জানান হরিশ্চন্দ্রপুরের বিডিও ।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বাড়ির সামনে গাছে শিকলবন্দি অবস্থায় ছিল হরিশ্চন্দ্রপুর-2 নম্বর ব্লকের ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের একবালপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর উনিশের সেলিম আখতার । মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে যাতে কোথাও চলে না যায়, তার জন্য তাকে শিকলে বাঁধতে বাধ্য হয়েছিলেন দিনমজুর বাবা জাকির হোসেন । একই রোগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যওয়ায় তিনি হারিয়েছেন স্ত্রী ও বড় ছেলেকে । এখনও তাঁদের সন্ধান পাননি তিনি । তাই মেজো ছেলে সেলিমকে আর যাতে হারাতে না হয় তাই বেঁধে রাখতেন ৷ ছেলেকে সুস্থ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছেন পাঁচ বছর ধরে । চিকিৎসার জন্য দু’বিঘা জমিও বিক্রি করেছেন । কিন্তু তারপরেও ছেলে ঠিক হয়নি । কপর্দকহীন হয়ে ছেলের চিকিৎসা এবং সরকারি সাহায্যের আশায় জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন জাকির। পা ধরে কান্নাকটি করলেও মুখ ফিরে তাকায়নি কেউই ।
সোমবার সেলিমের এই শিকলবন্দি থাকার খবর প্রকাশিত হয় ইটিভি ভারতে । জানা গিয়েছে, এরপরই জেলা প্রশাসনের তরফে সেলিমের বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওকে । তাঁর চিকিৎসার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাও করে প্রশাসন । নির্দেশ পেয়ে সোমবার রাতেই সেলিমের বাড়িতে যান বিডিও বিজয় গিরি ও জয়েন্ট বিডিও কল্লোল দাস ।
আরও পড়ুন : MALDA YOUTH: শিকলবন্দি অবস্থায় জীবন কাটছে হরিশচন্দ্রপুরের সেলিমের
তাঁরা জাকির হোসেনকে জানান, প্রশাসনের তরফে চিকিৎসার জন্য সেলিমকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে । সম্পূর্ণ সরকারি খরচে সেখানে সেলিমের চিকিৎসা হবে ।
মঙ্গলবার সকালে জাকির হোসেনের বাড়িতে গিয়ে একই কথা বলেন এলাকার বিধায়ক তজমুল হোসেনের ভাই তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান । এরপরেই শিকলমুক্ত করে সেলিমকে পরিষ্কার জামা-প্যান্ট পরিয়ে প্রশাসন থেকে পাঠানো অ্যাম্বুলেন্সে প্রথমে স্থানীয় মশালদিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখান থেকে মালদা মেডিকেল হয়ে বহরমপুর নিয়ে যাওয়া হয় ।
ছেলের চিকিৎসার বন্দোবস্ত হওয়ায় জাকির হোসেন বলেন, "শেষ পর্যন্ত আজ ছেলেকে পাঁচ বছর পর চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাচ্ছি । খুব ভাল লাগছে । এতদিন অনেক জায়গায় গিয়েছি কিন্তু কোথাও কাজ হয়নি । শেষ পর্যন্ত জম্বু সাহেব ও সংবাদমাধ্যমের জন্য আমার ছেলে সুচিকিৎসা পেতে চলেছে । সংবাদমাধ্যমের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ।"
আরও পড়ুন : Malda Rape : পড়শির লালসায় অন্তঃসত্ত্বা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, থানায় যেতে বাধা মাতব্বরদের !
সেলিমের দাদু আবদুল হকও নাতির চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়ায় সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "পাঁচ বছর ধরে নাতির জন্য প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেছি । জনপ্রতিনিধিদের হাতে পায়ে ধরেছি । কাজ হয়নি । শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে খবর হতেই প্রশাসনের লোকজন, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে নেতারাও আজ এসেছেন । সরকারিভাবে নাতির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন । আমি খুব খুশি ।"
এদিকে বিডিও বিজয় গিরি জানান, সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সোমবার রাতেই সেলিমের বাড়িতে যাওয়া হয় । সেলিমকে দেখার পর উপরমহলে রিপোর্ট পাঠান হয় । তার ভিত্তিতেই জেলা প্রশাসনের তরফে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে সেলিমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে । সম্পূর্ণ সরকারি খরচে চিকিৎসা হবে । এছাড়াও তার পরিবারকে যাবতীয় সরকারি সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ।