ETV Bharat / state

Jono Sangjog Yatra Ballot: রাস্তাঘাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে তৃণমূলের গোপন ভোটের ব্যালট, 'নাটক' বলছেন দলীয় কর্মীরা - ballot papers of tmc nabojoar yatra scattered

মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে প্রার্থী বাছাইয়ের তৃণমূলের গোপন ভোটের ব্যালট ৷ নবজোয়ার বা গ্রাম জনসংযোগ যাত্রাকে নাটক বলে কটাক্ষ করছেন খোদ দলের কর্মীরাই ৷

Etv Bharat
তৃণমূলের গোপন ভোটের ব্যালট
author img

By

Published : May 10, 2023, 5:54 PM IST

রাস্তাঘাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে তৃণমূলের গোপন ভোটের ব্যালট

মালদা, 10 মে: মাঠজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে দলীয় দস্তাবেজ ৷ এবারের পঞ্চায়েত ভোটে দলের তরফে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে গোপন ভোটের ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল ৷ এই উদ্যোগে খোদ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে 'নবজোয়ার যাত্রা' ৷ প্রার্থী বাছাই করতে কোচবিহারের দিনহাটা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি ৷ প্রতিটি জেলাতেই এক বা একাধিক জায়গায় চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের গোপন ব্যালটে ভোট পর্ব ৷ মালদা জেলাতেও চাঁচল ও ইংরেজবাজারে সেই ভোট পর্ব সম্পন্ন ৷ কিন্তু সেই ভোটেরই হাজার খানেক গোপন ব্যালট এখন শুষ্ক পশ্চিমা বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে ৷ ছড়িয়ে চাঁচল স্টেডিয়ামের মাঠে ৷ শুধু মালদা নয়, এর মধ্যে রয়েছে দুই দিনাজপুরের গোপন ব্যালটও ৷

এই মুহূর্তে অভিষেক রয়েছেন বীরভূমে ৷ কিন্তু যত্র-তত্র ব্যালট ছড়িয়ে পড়ে থাকার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে 42 ডিগ্রি তাপমাত্রার গরম যেন আরও বেড়ে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই ৷ এই ছবি দেখে ক্ষুব্ধ ঘাসফুলের কর্মীরা ৷ তাঁদের বক্তব্য, এভাবে যদি ব্যালট ফেলে দেওয়া হয় তবে প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট নিয়ে এত কীর্তন করার কী ছিল ! গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মালদা জেলায় জনসংযোগ কর্মসূচি করেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ৷ তাঁর গ্রাম জনসংযোগ বা নবজোয়ার কর্মসূচির জোয়ারে গা ভাসাতে দেখা যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ৷ ভোটদানকে কেন্দ্র করে জেলার দুই জায়গায় বিস্তর ঝামেলাও হয়েছে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁবু ছেড়ে বেরিয়ে মঞ্চে উঠতে হয়েছিল খোদ অভিষেককে ৷ নরমে-গরমে কর্মীদের নিয়ন্ত্রণও করতে দেখা যায় তাঁকে ৷ এভাবেই প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট পর্ব সম্পন্ন হয়েছিল জেলায় ৷ কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানেই বুধবার মাঠে ঘাটে সেই ব্যালট ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকায় প্রশ্ন উঠেছে বিস্তর ৷

এ নিয়ে চাঁচল এক নম্বর ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আবু মহম্মদ পারভেজ নুর বলেন, “প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দেখলাম, গত 3 মে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে যে ভোট নিয়েছিলেন, সেই ভোটের ব্যালট পেপার মাঠের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ৷ আমরা শুনেছিলাম, এই ব্যালটগুলি কলকাতা নিয়ে যাওয়া হবে ৷ সেখানেই গণনা হবে ৷ আমাদের রেজাল্টও জানানো হবে ৷ কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ব্যক্তিকে ভোটে প্রার্থী করার জন্যই এই প্রক্রিয়া ৷" যেখানে ব্যালটই রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে, সেখানে কীভাবে এই ভোট গণনা হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতা ৷ শুধু চাঁচল কিংবা উত্তর মালদা নয়, দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের ব্যালটও এখানে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ৷ তাঁর কথায়, এইভাবে আই ওয়াশ না-করলেই ভালো হত ৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে আমরা ধন্ধে ৷ আমরা শুধু সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী দেখতে চাই ৷ এক তৃণমূল কর্মী অমিতকুমার দাস বলেন, “আজ সকালে মাঠে এসে দেখি, যে ব্যালট পেপারে আমরা ভোট দিয়েছি, সেসব মাঠে পড়ে রয়েছে ৷ কেন ব্যালট পেপার মাঠে পড়ে রয়েছে, বুঝতে পারছি না ৷ অনেক কষ্ট করে ভোট দিতে হয়েছিল ৷ সেই ব্যালট পেপার মাঠে পড়ে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগছে ৷ আমার তো মনে হচ্ছে প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটের নামে নাটক চলছে ৷"

ভোটের মুখে এই ঘটনা কটাক্ষের সুযোগ করে দিয়েছে বিরোধীদেরও ৷ চাঁচল এক নম্বর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আঞ্জারুল হক জনি বলেন, “অভিষেক ভোটের মুখে যাত্রা করে স্বচ্ছতা দেখাতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু সেই স্বচ্ছতা কোথায় থাকল? স্বচ্ছতা থাকলে ব্যালট নিশ্চয়ই স্টেডিয়ামে পড়ে থাকত না ৷ আসলে ওরা যা করেছে তা সম্পূর্ণ আইওয়াশ ৷" তৃণমূলেরই একাংশ বলছে, "এটা ভোটের নামে শুধু প্রহসন হয়েছে ৷” বিজেপির চাঁচল ব্লকের কো-কনভেনার প্রসেনজিৎ শর্মার বক্তব্য, “চুরির জন্য গোটা রাজ্যেই তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে ৷ তাদের দলে ভাটা এসেছে ৷ দলে ভাঙন আটকাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবজোয়ারের ডাক দিয়েছেন ৷ এটা পুরোটাই লোক দেখানো আর কর্মীদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টা ৷ কিন্তু এসব করে তাদের কোনও লাভ হবে না ৷ এর আগে তারা কীভাবে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ভোট লুট করেছে, তা সবাই জানে ৷ ওদের দলের ভোটেও লুটপাট, গণ্ডগোল চলছে ৷ আসন্ন ভোটেই মানুষ ওদের সঠিক জবাব দেবে ৷ ওদের সংস্কৃতিই হল টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি করা ৷ প্রার্থী কে হবে, সেটা আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে ৷"

গোটা ঘটনায় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর সাবধানী প্রতিক্রিয়া, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের সঙ্গে একাত্ম হতে এসেছিলেন ৷ তিনি জেলা থেকে চলেও গিয়েছেন ৷ ভোট এবং ব্যালটের বিষয়টির দায়িত্ব একটি এজেন্সির উপর রয়েছে ৷ এই কাজগুলি করার দায়িত্ব এজেন্সির ৷ স্থানীয় নেতাদের বিষয়টি দেখা উচিত ৷ আমি ব্যালট পেপার না-দেখে কোনও মন্তব্য করব না ৷”

আরও পড়ুন: শাহের থেকে পুরনো পাঁচ প্রশ্নের জবাব চাইল তৃণমূল

রাস্তাঘাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে তৃণমূলের গোপন ভোটের ব্যালট

মালদা, 10 মে: মাঠজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে দলীয় দস্তাবেজ ৷ এবারের পঞ্চায়েত ভোটে দলের তরফে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে গোপন ভোটের ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল ৷ এই উদ্যোগে খোদ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে 'নবজোয়ার যাত্রা' ৷ প্রার্থী বাছাই করতে কোচবিহারের দিনহাটা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি ৷ প্রতিটি জেলাতেই এক বা একাধিক জায়গায় চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের গোপন ব্যালটে ভোট পর্ব ৷ মালদা জেলাতেও চাঁচল ও ইংরেজবাজারে সেই ভোট পর্ব সম্পন্ন ৷ কিন্তু সেই ভোটেরই হাজার খানেক গোপন ব্যালট এখন শুষ্ক পশ্চিমা বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে ৷ ছড়িয়ে চাঁচল স্টেডিয়ামের মাঠে ৷ শুধু মালদা নয়, এর মধ্যে রয়েছে দুই দিনাজপুরের গোপন ব্যালটও ৷

এই মুহূর্তে অভিষেক রয়েছেন বীরভূমে ৷ কিন্তু যত্র-তত্র ব্যালট ছড়িয়ে পড়ে থাকার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে 42 ডিগ্রি তাপমাত্রার গরম যেন আরও বেড়ে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই ৷ এই ছবি দেখে ক্ষুব্ধ ঘাসফুলের কর্মীরা ৷ তাঁদের বক্তব্য, এভাবে যদি ব্যালট ফেলে দেওয়া হয় তবে প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট নিয়ে এত কীর্তন করার কী ছিল ! গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মালদা জেলায় জনসংযোগ কর্মসূচি করেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ৷ তাঁর গ্রাম জনসংযোগ বা নবজোয়ার কর্মসূচির জোয়ারে গা ভাসাতে দেখা যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ৷ ভোটদানকে কেন্দ্র করে জেলার দুই জায়গায় বিস্তর ঝামেলাও হয়েছে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁবু ছেড়ে বেরিয়ে মঞ্চে উঠতে হয়েছিল খোদ অভিষেককে ৷ নরমে-গরমে কর্মীদের নিয়ন্ত্রণও করতে দেখা যায় তাঁকে ৷ এভাবেই প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট পর্ব সম্পন্ন হয়েছিল জেলায় ৷ কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানেই বুধবার মাঠে ঘাটে সেই ব্যালট ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকায় প্রশ্ন উঠেছে বিস্তর ৷

এ নিয়ে চাঁচল এক নম্বর ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আবু মহম্মদ পারভেজ নুর বলেন, “প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দেখলাম, গত 3 মে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে যে ভোট নিয়েছিলেন, সেই ভোটের ব্যালট পেপার মাঠের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ৷ আমরা শুনেছিলাম, এই ব্যালটগুলি কলকাতা নিয়ে যাওয়া হবে ৷ সেখানেই গণনা হবে ৷ আমাদের রেজাল্টও জানানো হবে ৷ কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ব্যক্তিকে ভোটে প্রার্থী করার জন্যই এই প্রক্রিয়া ৷" যেখানে ব্যালটই রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে, সেখানে কীভাবে এই ভোট গণনা হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতা ৷ শুধু চাঁচল কিংবা উত্তর মালদা নয়, দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের ব্যালটও এখানে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ৷ তাঁর কথায়, এইভাবে আই ওয়াশ না-করলেই ভালো হত ৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে আমরা ধন্ধে ৷ আমরা শুধু সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী দেখতে চাই ৷ এক তৃণমূল কর্মী অমিতকুমার দাস বলেন, “আজ সকালে মাঠে এসে দেখি, যে ব্যালট পেপারে আমরা ভোট দিয়েছি, সেসব মাঠে পড়ে রয়েছে ৷ কেন ব্যালট পেপার মাঠে পড়ে রয়েছে, বুঝতে পারছি না ৷ অনেক কষ্ট করে ভোট দিতে হয়েছিল ৷ সেই ব্যালট পেপার মাঠে পড়ে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগছে ৷ আমার তো মনে হচ্ছে প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটের নামে নাটক চলছে ৷"

ভোটের মুখে এই ঘটনা কটাক্ষের সুযোগ করে দিয়েছে বিরোধীদেরও ৷ চাঁচল এক নম্বর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আঞ্জারুল হক জনি বলেন, “অভিষেক ভোটের মুখে যাত্রা করে স্বচ্ছতা দেখাতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু সেই স্বচ্ছতা কোথায় থাকল? স্বচ্ছতা থাকলে ব্যালট নিশ্চয়ই স্টেডিয়ামে পড়ে থাকত না ৷ আসলে ওরা যা করেছে তা সম্পূর্ণ আইওয়াশ ৷" তৃণমূলেরই একাংশ বলছে, "এটা ভোটের নামে শুধু প্রহসন হয়েছে ৷” বিজেপির চাঁচল ব্লকের কো-কনভেনার প্রসেনজিৎ শর্মার বক্তব্য, “চুরির জন্য গোটা রাজ্যেই তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে ৷ তাদের দলে ভাটা এসেছে ৷ দলে ভাঙন আটকাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবজোয়ারের ডাক দিয়েছেন ৷ এটা পুরোটাই লোক দেখানো আর কর্মীদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টা ৷ কিন্তু এসব করে তাদের কোনও লাভ হবে না ৷ এর আগে তারা কীভাবে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ভোট লুট করেছে, তা সবাই জানে ৷ ওদের দলের ভোটেও লুটপাট, গণ্ডগোল চলছে ৷ আসন্ন ভোটেই মানুষ ওদের সঠিক জবাব দেবে ৷ ওদের সংস্কৃতিই হল টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি করা ৷ প্রার্থী কে হবে, সেটা আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে ৷"

গোটা ঘটনায় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর সাবধানী প্রতিক্রিয়া, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের সঙ্গে একাত্ম হতে এসেছিলেন ৷ তিনি জেলা থেকে চলেও গিয়েছেন ৷ ভোট এবং ব্যালটের বিষয়টির দায়িত্ব একটি এজেন্সির উপর রয়েছে ৷ এই কাজগুলি করার দায়িত্ব এজেন্সির ৷ স্থানীয় নেতাদের বিষয়টি দেখা উচিত ৷ আমি ব্যালট পেপার না-দেখে কোনও মন্তব্য করব না ৷”

আরও পড়ুন: শাহের থেকে পুরনো পাঁচ প্রশ্নের জবাব চাইল তৃণমূল

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.