মালদা, 8 নভেম্বর : বিহার বিধানসভা নির্বাচনের বুথ ফেরৎ সমীক্ষা যখন রাজ্যের শাসকদলের অক্সিজেন প্যারামিটার বাড়াচ্ছে, তখন মালদায় ধরা পড়ল অন্য ছবি । আজ তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটল তৃণমূলের কর্মীসভায় । সেখানে গরহাজির তৃণমূল নেতানেত্রীদের প্রকাশ্যেই সমালোচনা করলেন অন্যরা । হাজির না থাকা নেতানেত্রীদের রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা করার প্রসঙ্গ তুলেছেন জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর, শহর তৃণমূল সভাপতি । উল্লেখ্য, এদিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সভানেত্রী মৌসম নুরও । ফলে জেলা কো-অর্ডিনেটরের ইঙ্গিতটা কোন দিকে তা নিয়ে প্রবল ধন্দে শাসক শিবির ।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ দুপুরে মালদা শহরের টাউন হলে একটি কর্মীসভার আয়োজন করা হয়েছিল । কর্মীসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর, শহর তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ও সাবিত্রী মিত্র, জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস সহ অন্য নেতৃত্বদের । তবে কর্মীসভায় দেখা যায়নি তাঁদের । কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন ইংরেজবাজারের বিধায়ক ও পৌর প্রশাসক নীহাররঞ্জন ঘোষ, মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির কো-অর্ডিনেটর দুলাল সরকার (বাবলা), মানব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অম্লান ভাদুড়ি, জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভানেত্রী চৈতালি সরকার ।
কর্মীসভা শুরু হওয়ার পর থেকেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্বদের মধ্যে বিভেদ দেখা যায় । কর্মীসভায় উপস্থিত হওয়ার পরেও সভামঞ্চে যাননি জেলা তৃণমূল নেতা আশিস কুণ্ডু । বেশ কিছুক্ষণ সভাস্থলের বাইরে সময় কাটিয়েই বাড়ি ফিরে যান তিনি । কর্মীসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুপস্থিত জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বদের সমালোচনা করতে দেখা যায় মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির কো-অর্ডিনেটর দুলাল সরকার সহ অন্য নেতাদের ।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দুলালবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলায় মৌসম নুরকে সভানেত্রী করা হয়েছে । মোয়াজ্জেম সাহেবকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । আমি, মানববাবু ও অম্লানবাবু কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি । ইংরেজবাজার শহরের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নরেন্দ্রনাথ তিওয়াড়িকে । আজ তিনিই এই কর্মীসভা ডেকেছেন । দলের সর্বভারতীয় যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জেলার বেশ কিছু নেতৃত্ব অভিযোগ জানিয়েছিলেন, যে তাঁরা দলে গুরুত্ব পাচ্ছেন না বা দলের কোনও পদ তাঁদের দেওয়া হয়নি । আজকের কর্মীসভায় ইংরেজবাজারের সমস্ত নেতৃত্বদের চিঠি পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । এমনকী সকলকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । তবে এই কর্মীসভায় বেশ কিছু কাউন্সিলর উপস্থিত হননি । তাঁরা মানুষের কাজও করেন না । তাঁরা শুধু পৌরসভা নিয়ে অভিযোগ তোলেন আর রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানান । জেলার অনেক নেতৃত্ব নিজেদের বড় বড় নেতা বলেন । কিন্তু তৃণমূলের একটাই মাথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আজকের কর্মীসভায় এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যাঁরা অনুপস্থিত রয়েছেন তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত থেকে নিজেদের রাজনৈতিক কেরিয়ার বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন । তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানানোর জায়গায় নেই । কৃষ্ণেন্দুবাবু অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে জেলা সভানেত্রী সম্মান দেন না । আজকের সভায় জেলা সভানেত্রীকেও ডাকা হয়েছিল, কৃষ্ণেন্দুবাবুর পাশাপাশি সাবিত্রী মিত্রকেও ডাকা হয়েছিল । কিন্তু তিনজনের মধ্যে কেউ কর্মীসভায় আসেননি । আমার জানা নেই এনারা কেন রাজনীতি করছেন । কৃষ্ণেন্দুবাবু আমার নেতা নন । তিনি জেলার রাজ্য নেতা । আজকের সভাতেই প্রমাণ হয়ে গেল কে স্বঘোষিত নেতা । মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । সভানেত্রী আজ কলকাতায় একটি বৈঠকে রয়েছেন তাই তিনি কর্মীসভায় আসতে পারেননি ।”
অন্যদিকে, কর্মীসভার আহ্বায়ক নরেন্দ্রনাথ তিওয়াড়ি কড়া ভাষায় বলেন, “যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা করেন, যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করেন, তাঁরা প্রত্যেকেই এসেছেন । যাঁরা আসেননি তাঁরা দল করেন না, তৃণমূলকে নিয়ে ব্যবসা করেন ।” 2021 নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে BJP । ইতিমধ্যেই রাজ্যে ছাপ ছেড়েছেন অমিত শাহ । ভারতীয় জনতা পার্টি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের গুটি সাজাতে শুরু করেছে । সেই সময় জেলা তৃণমূলের বিভেদ সমস্যায় ফেলতে পারে ।