মালদা, 24 জুলাই : ভাঙন শুরু হয়েছে গঙ্গা ও ফুলহরের ৷ কোরোনা আবহে নতুন সংকটে পড়েছেন কালিয়াচক তিন ও রতুয়া এক নম্বর ব্লকের মানুষজন ৷ নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে একরের পর একর আমবাগান, কৃষিজমি ৷ পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে জেলা প্রশাসন ৷ তবে এই পরিস্থিতিতে ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ওই দুই এলাকায় ৷
গত কয়েক বছরের মতো এবারও কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের শোভাপুর-পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় শুরু হয়েছে গঙ্গার ভাঙন ৷ স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে ব্যাপক গঙ্গা ভাঙন । বৈষ্ণব নগরের চরচক বাহাদুরপুর গ্রাম থেকে পার পরাণপুর পর্যন্ত প্রায় 8 কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে ৷ এর মধ্যে রয়েছে পার অনুপনগর, পার অনন্তপুর, গোলাপ মণ্ডলপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ৷ ইতিমধ্যে গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু কৃষিজমি ৷ স্থানীয় এক বাসিন্দা অমূল্য মণ্ডল জানান, "জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম ৷ চাষের কাজ সেরে গতকাল সন্ধেয় বাড়ি ফিরে আসি ৷ আজ সকালে জমিতে গিয়ে দেখি, ধানগাছের চিহ্নমাত্র নেই ৷ জমির উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা ৷ এবারের ভাঙনে আমার দু’বিঘা জমি এক রাতেই নদীতে তলিয়ে গেল ৷"
এই বিষয়ে BDO গৌতম দত্ত বলেন, "গতকাল থেকেই গঙ্গা ভাঙন শুরু হয়েছে ৷ বেশ কিছু ফসলি জমি ইতিমধ্যে নদীতে তলিয়ে গেছে ৷ সেচ দপ্তরকে আমরা রিপোর্ট করেছি ৷ তবে এই এলাকায় ভাঙন রোধের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের ৷ তাদের খবর দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত ওই বিভাগের কেউ ভাঙন কবলিত এলাকায় যাননি বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন ৷" গঙ্গার সঙ্গে ফুলহরের ভাঙন শুরু হয়েছে । ভাঙনের কবলে রতুয়া এক নম্বর ব্লকের মহানন্দপুর ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দুই নদী দিয়ে ঘেরা ৷ কার্যত দ্বীপের মতো অবস্থান ৷ গতকাল থেকে এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রামায়ণপুর, দ্বারিকাটোলা, গঙ্গারামটোলা প্রভৃতি গ্রামে শুরু হয়েছে ফুলহরের ভাঙন ৷ একই সঙ্গে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছে নয়া বিলাইমারি, হাজি জাফরটোলা, জঞ্জালিটোলা, শ্রীকান্তটোলা, পটলডাঙা প্রভৃতি গ্রামে ৷ এসব গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমি ও আমবাগান ইতিমধ্যে দুই নদীর গর্ভে চলে গেছে ৷ তবে ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গঙ্গারামটোলা গ্রাম ৷
বিলাইমারি এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ মণ্ডল বলেন, "এমনিতেই কোরোনার জন্য মানুষ আতঙ্কে রয়েছে ৷ লকডাউনে পেটের ভাত জোগাড় করতে দিশেহারা সবাই ৷ এই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে ফুলহরের ভাঙন ৷ মাইলের পর মাইল আমবাগান, কৃষিজমি নদীতে তলিয়ে গেছে ৷ বিশেষ করে ঘাটপাড়া, দ্বারিকাটোলা, গঙ্গারামটোলা, রামায়ণপুর, রুহিমারি প্রভৃতি এলাকা বিপন্ন ৷ ভাঙনে মানুষ দিশেহারা৷ নিজেদের জমি জায়গা রক্ষা করা যাচ্ছে না ৷ প্রশাসনকে সব কিছু জানানোর পরেও এখনও পর্যন্ত কেউ এলাকায় আসেননি ৷ ভাঙনরোধে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগও দেখা যায়নি ৷ যেভাবে নদী পাড় কাটছে, তাতে দু’একদিনের মধ্যে এলাকার ঘরবাড়ি ফুলহরে তলিয়ে যেতে শুরু করবে ৷ আজ এক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েক হাজার বিঘা জমি নদীতে তলিয়ে গেছে ৷ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি ৷ তা না হলে ঘুমের মধ্যেই অনেকের ঘর-বাড়ি নদীতে তলিয়ে যেতে পারে ৷"
কাটাহা দিয়ারার বাসিন্দা আশুতোষ মণ্ডল বলেন, "এই এলাকার একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে ফুলহর ৷ দুই নদীরই ভাঙন শুরু হয়ে গেছে ৷ গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গারামটোলায় যেভাবে ফুলহরের তাণ্ডব চলছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন ৷ এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কোনও আধিকারিক এলাকায় আসেননি ৷ আমরা বিষয়টি বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়কে জানিয়েছি ৷ তিনিও এখনও পর্যন্ত দুর্গত মানুষের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেননি ৷ এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে এই এলাকাই আগামী দিনে আর থাকবে না ৷ এই এলাকার 50 হাজার মানুষ ভিটেহারা হবেন ৷" এই প্রসঙ্গে রতুয়া এক নম্বর ব্লকের BDO সারওয়ার আলি জানিয়েছেন, "বর্ষার মরশুমে ভাঙন প্রতিরোধ করার কাজ করা সম্ভব নয় ৷ তবে মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নদী ভাঙনের খবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ৷ এখনও পর্যন্ত যাঁরা ভাঙনে গৃহহীন হয়েছেন, তাঁদের ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷"