ETV Bharat / state

চরের জমিতে চাষে বাধা ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের, পরিদর্শনে BDO - মালদায় গঙ্গা ভাঙন

গঙ্গা ভাঙনে এপাড়ের জমি কেটে চর আকারে জেগে উঠেছে ঝাড়খণ্ডের কাছে ৷ ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের দাপটে সেখানে চাষ করতে সমস্যায় পড়েছে কৃষকরা ৷ ব্যবস্থা নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন ৷

agriculture-land-problem-in-malda
প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থ মালদাবাসী
author img

By

Published : Oct 14, 2020, 6:32 PM IST

মালদা, 14 অক্টোবর : এপাড় ভাঙে, ওপাড় গড়ে ৷ এটাই নদীর জীবন বৃত্তান্ত ৷ প্রায় 2 দশক ধরে গঙ্গাও সেই একই কাহিনি রচনা করে চলেছে ৷ তাতেই সমস্যায় পড়েছে রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামের মানুষ ৷ গঙ্গার এপাড়ে তাদের জমি কেটেছে ৷ সেই জমি চর আকারে জেগে উঠেছে নদীর অন্য পাড়ে ৷ জেগে ওঠা চরে কৃষিকাজ শুরু করেছে এপারের মানুষ ৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায় ৷ এই চরগুলিতে এখন রাজ চলছে ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের ৷ চাষ করতে যাওয়া বাসিন্দাদের মারধর থেকে শুরু করে চরে ফসলও কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে তারা ৷ এপার থেকে বহুদূরে থাকা চরে একদিকে যেমন যোগাযোগের সমস্যা, অন্যদিকে পুলিশি নিরাপত্তার অভাবে মালদার কৃষকরা ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করতে পারছে না ৷ এই পরিস্থিতিতে তারা ব্লক ও জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিল ৷ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন জেলাশাসক ৷ তাঁর নির্দেশে আজ BDO ওই চরগুলি পরিদর্শনে যান ৷ তিনি জানিয়েছেন, "এনিয়ে দ্রুত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷"

গঙ্গা ভাঙনে এই জেলার অনেক রাজাও এক রাতে ফকির হয়েছে ৷ আর ফকিরদের তো কোনও কথাই নেই ৷ তারা ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছে ৷ অন্তত দু’দশক ধরে সেই ছবি দেখে আসছে মালদার মানুষ ৷ এই সময়ের মধ্যে শুধু মানিকচক কিংবা কালিয়াচক নয়, গঙ্গা বারবার ছোবল মেরেছে রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামেও ৷ নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছে কয়েক হাজার একর উর্বর কৃষিজমি ৷ তবে নদী শুধুই ভাঙে না, নদী গড়েও ৷ জেলার প্রতিটি জায়গাতেই কয়েক বছর পর চর আকারে জেগে উঠেছে ভেঙে যাওয়া জমি ৷ নদীতে কেটে যাওয়া মহানন্দটোলা, জঞ্জালিটোলা, শ্রীকান্তটোলা, জিতুটোলা, মুনিরামটোলা প্রভৃতি গ্রামের কৃষিজমি চর আকারে জেগে উঠেছে নদীর অন্যদিকে গদাই মহারাজপুর এলাকায় ৷ সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডের দূরত্ব মাত্র 500 মিটার ৷ কিন্তু এপার থেকে সেই দূরত্ব তিন কিলোমিটারের বেশি ৷ এতেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত ৷

চরের জমিতে চাষে বাধা ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের, পরিদর্শনে BDO

শ্রীকান্তটোলার বাসিন্দা মনোজ মাহাত বলেন, “এই এলাকার প্রচুর কৃষিজমি গঙ্গাগর্ভে চলে যাওয়ায় মানুষ চরম সমস্যায় পড়েছে ৷ গঙ্গা ভাঙনে তলিয়ে যাওয়া জমি জেগে উঠেছে নদীর ওপারে ৷ সেখানে দু’হাজার বিঘার বেশি কৃষিজমি রয়েছে ৷ সমস্যা একটাই, সেখানে ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে কেউ চাষ করার সাহস দেখাতে পারছে না ৷ ওরা আমাদের চাষ করতে দিচ্ছে না ৷ ফসল কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা থাকলেও এবার দুষ্কৃতীদের দাপট অনেকটা বেড়ে গিয়েছে ৷ এদিকে এপার থেকে চরে পৌঁছাতে প্রচুর সময় লাগে ৷ গঙ্গায় ফেরি নৌকার ব্যবস্থা নেই ৷ ফলে নিজেদেরই নৌকা নিয়ে চরে যেতে হয় ৷ এসব নিয়ে আমরা BDO-কে জানিয়েছিলাম ৷ জানানো হয়েছিল জেলাশাসককেও ৷ মূলত চরে যাওয়ার নৌকার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার দাবিতেই আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম ৷ আজ BDO এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন ৷ আশা করছি, প্রশাসন আমাদের এই সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান করবে ৷”

শুধু সাধারণ কৃষকরাই নয়, একই সমস্যায় ভুগছেন এলাকার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও ৷ নদীর ওপারে তাঁরও প্রায় দু’হাজার বিঘা জমি রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি ৷ তিনি জানান, “গঙ্গা ভাঙনে এপাড়ের কেটে যাওয়া জমি ওপাড়ে জেগে উঠেছে ৷ ওই চরে প্রায় 3 হাজার বিঘা জমি রয়েছে ৷ আমারই প্রায় দু’হাজার বিঘা জমি রয়েছে ৷ ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের জন্য সেই জমিতে চাষ করতে পারছি না ৷ গঙ্গার অন্যদিকে থাকায় ওই চর নিয়ে প্রশাসনও কিছু করতে পারছে না ৷ এই অবস্থায় প্রশাসন ওই চরে পৌঁছোনোর জন্য সরকারিভাবে কোনও ব্যবস্থা করলে এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলে আমাদের মতো এপারের কৃষকরা উপকৃত হবে ৷”

গদাই মহারাজপুর চর পরিদর্শনের পর রতুয়া 1-এর BDO সারওয়ার আলি বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশে আমি এই চর পরিদর্শন করলাম ৷ চরে পশ্চিমবঙ্গের কিছু কৃষিজমি রয়েছে ৷ ওই চরে যাওয়ার জন্য গঙ্গার ফেরি নৌকা চালু করার ব্যাপারে জেলাশাসক নির্দেশ দিয়েছেন ৷ আজ আমি এলাকার নেতাদের সঙ্গে কথা বললাম ৷ আগামীকাল গোটা বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানাব ৷ তারপরেই এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব ৷ কৃষকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমি জেলাশাসককে জানাব ৷ কারণ, ওই চরে স্থানীয় কিছু লোক সমস্যা তৈরি করছে ৷”

মালদা, 14 অক্টোবর : এপাড় ভাঙে, ওপাড় গড়ে ৷ এটাই নদীর জীবন বৃত্তান্ত ৷ প্রায় 2 দশক ধরে গঙ্গাও সেই একই কাহিনি রচনা করে চলেছে ৷ তাতেই সমস্যায় পড়েছে রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামের মানুষ ৷ গঙ্গার এপাড়ে তাদের জমি কেটেছে ৷ সেই জমি চর আকারে জেগে উঠেছে নদীর অন্য পাড়ে ৷ জেগে ওঠা চরে কৃষিকাজ শুরু করেছে এপারের মানুষ ৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায় ৷ এই চরগুলিতে এখন রাজ চলছে ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের ৷ চাষ করতে যাওয়া বাসিন্দাদের মারধর থেকে শুরু করে চরে ফসলও কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে তারা ৷ এপার থেকে বহুদূরে থাকা চরে একদিকে যেমন যোগাযোগের সমস্যা, অন্যদিকে পুলিশি নিরাপত্তার অভাবে মালদার কৃষকরা ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করতে পারছে না ৷ এই পরিস্থিতিতে তারা ব্লক ও জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিল ৷ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন জেলাশাসক ৷ তাঁর নির্দেশে আজ BDO ওই চরগুলি পরিদর্শনে যান ৷ তিনি জানিয়েছেন, "এনিয়ে দ্রুত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷"

গঙ্গা ভাঙনে এই জেলার অনেক রাজাও এক রাতে ফকির হয়েছে ৷ আর ফকিরদের তো কোনও কথাই নেই ৷ তারা ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছে ৷ অন্তত দু’দশক ধরে সেই ছবি দেখে আসছে মালদার মানুষ ৷ এই সময়ের মধ্যে শুধু মানিকচক কিংবা কালিয়াচক নয়, গঙ্গা বারবার ছোবল মেরেছে রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামেও ৷ নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছে কয়েক হাজার একর উর্বর কৃষিজমি ৷ তবে নদী শুধুই ভাঙে না, নদী গড়েও ৷ জেলার প্রতিটি জায়গাতেই কয়েক বছর পর চর আকারে জেগে উঠেছে ভেঙে যাওয়া জমি ৷ নদীতে কেটে যাওয়া মহানন্দটোলা, জঞ্জালিটোলা, শ্রীকান্তটোলা, জিতুটোলা, মুনিরামটোলা প্রভৃতি গ্রামের কৃষিজমি চর আকারে জেগে উঠেছে নদীর অন্যদিকে গদাই মহারাজপুর এলাকায় ৷ সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডের দূরত্ব মাত্র 500 মিটার ৷ কিন্তু এপার থেকে সেই দূরত্ব তিন কিলোমিটারের বেশি ৷ এতেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত ৷

চরের জমিতে চাষে বাধা ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের, পরিদর্শনে BDO

শ্রীকান্তটোলার বাসিন্দা মনোজ মাহাত বলেন, “এই এলাকার প্রচুর কৃষিজমি গঙ্গাগর্ভে চলে যাওয়ায় মানুষ চরম সমস্যায় পড়েছে ৷ গঙ্গা ভাঙনে তলিয়ে যাওয়া জমি জেগে উঠেছে নদীর ওপারে ৷ সেখানে দু’হাজার বিঘার বেশি কৃষিজমি রয়েছে ৷ সমস্যা একটাই, সেখানে ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে কেউ চাষ করার সাহস দেখাতে পারছে না ৷ ওরা আমাদের চাষ করতে দিচ্ছে না ৷ ফসল কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা থাকলেও এবার দুষ্কৃতীদের দাপট অনেকটা বেড়ে গিয়েছে ৷ এদিকে এপার থেকে চরে পৌঁছাতে প্রচুর সময় লাগে ৷ গঙ্গায় ফেরি নৌকার ব্যবস্থা নেই ৷ ফলে নিজেদেরই নৌকা নিয়ে চরে যেতে হয় ৷ এসব নিয়ে আমরা BDO-কে জানিয়েছিলাম ৷ জানানো হয়েছিল জেলাশাসককেও ৷ মূলত চরে যাওয়ার নৌকার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার দাবিতেই আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম ৷ আজ BDO এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন ৷ আশা করছি, প্রশাসন আমাদের এই সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান করবে ৷”

শুধু সাধারণ কৃষকরাই নয়, একই সমস্যায় ভুগছেন এলাকার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ও ৷ নদীর ওপারে তাঁরও প্রায় দু’হাজার বিঘা জমি রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি ৷ তিনি জানান, “গঙ্গা ভাঙনে এপাড়ের কেটে যাওয়া জমি ওপাড়ে জেগে উঠেছে ৷ ওই চরে প্রায় 3 হাজার বিঘা জমি রয়েছে ৷ আমারই প্রায় দু’হাজার বিঘা জমি রয়েছে ৷ ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের জন্য সেই জমিতে চাষ করতে পারছি না ৷ গঙ্গার অন্যদিকে থাকায় ওই চর নিয়ে প্রশাসনও কিছু করতে পারছে না ৷ এই অবস্থায় প্রশাসন ওই চরে পৌঁছোনোর জন্য সরকারিভাবে কোনও ব্যবস্থা করলে এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলে আমাদের মতো এপারের কৃষকরা উপকৃত হবে ৷”

গদাই মহারাজপুর চর পরিদর্শনের পর রতুয়া 1-এর BDO সারওয়ার আলি বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশে আমি এই চর পরিদর্শন করলাম ৷ চরে পশ্চিমবঙ্গের কিছু কৃষিজমি রয়েছে ৷ ওই চরে যাওয়ার জন্য গঙ্গার ফেরি নৌকা চালু করার ব্যাপারে জেলাশাসক নির্দেশ দিয়েছেন ৷ আজ আমি এলাকার নেতাদের সঙ্গে কথা বললাম ৷ আগামীকাল গোটা বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানাব ৷ তারপরেই এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব ৷ কৃষকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমি জেলাশাসককে জানাব ৷ কারণ, ওই চরে স্থানীয় কিছু লোক সমস্যা তৈরি করছে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.