মালদা, 16 জুলাই : 2018’র পঞ্চায়েত নির্বাচনে হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল গেরুয়া শিবির । দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি ছিল বিজেপির দখলে ৷ হাতে ছিল একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত । 2021 বিধানসভা নির্বাচনেও হবিবপুর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী । কিন্তু, ভোটের পর বামনগোলায় শুরু হয়েছে দলবদলের পালা । আর এই দলবদলের পালায় বামনগোলা ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা পাশ করিয়ে ফেলেছে শাসক শিবির । সেই জায়গাগুলিতে তৃণমূলের বোর্ড গঠন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা । যদিও এ নিয়ে তৃণমূলের পাশাপাশি প্রশাসনের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছে বিজেপি ।
গত 13 জুলাই বিজেপির হাতে থাকা চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ করায় তৃণমূল । পরের দিন বামনগোলা গ্রাম পঞ্চায়েতেও একই ছবি ধরা পড়ে । আজ পাকুয়াহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করিয়েছে শাসকদল । তৃণমূলের সদস্যদের সঙ্গে সেই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন বিজেপির পাঁচ পঞ্চায়েত সদস্য ৷ শুধু পাকুয়াহাট গ্রাম পঞ্চায়েত নয় ৷ আজ বিজেপি পরিচালিত বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধেও অনাস্থা পাশ করিয়ে নিয়েছে তৃণমূল । পরবর্তীতে প্রশাসনের দেওয়া সময়ে এই তিন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের বোর্ড গঠন হতে যাচ্ছে । এই মুহূর্তে শুধুমাত্র গোবিন্দপুর-মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া বামনগোলা ব্লকে বিজেপির কোনও অস্তিত্বই থাকল না । সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েতটিও কয়েক দিনের মধ্যে শাসকদলের হাতে চলে আসতে পারে ।
18 আসনের পাকুয়াহাট পঞ্চায়েত সমিতিতে 2018‘র ভোটে বিজেপি 10টি ও তৃণমূল 8টি আসন জিতেছিল । 2021 বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর, কয়েকদিন আগেই পাকুয়াহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের 4 বিজেপি সদস্য তৃণমূলের ঝান্ডা ধরেন । ফলে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় 12 জনে । আর তার পর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পঞ্চায়েত সমিতির দখল যে শাসকদলের হাতে যেতে চলেছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনও দ্বিমত ছিল না । শুধু দেখার ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে প্রশাসন অনাস্থার তলবি সভা ডাকে কি না । আজ সেই সভা ডাকা হয়েছিল ৷
আরও পড়ুন : গ্রামের পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস, বিজেপির পাশে তৃণমূল
আজকের এই অনাস্থায় তৃণমূল জেতার পর, বামনগোলায় কার্যত নিশ্চিহ্ন বিজেপি । এ নিয়ে মালদার বিজেপি সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বিজেপি একটা সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল । কে ক্ষমতায় থাকল আর না থাকল, তা নিয়ে এমন একটা দলের সংগঠনের ক্ষতি হওয়ার ভাবনাচিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত । মনে হচ্ছে, সবাই চলে গিয়েছে । কিন্তু, এখনও শেষ লড়াইটা বাকি আছে । পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অপসারণ হলেও, এখনও নতুন সভাপতি গঠন হয়নি । ততদিন পর্যন্ত আমরা লড়াইয়ের ময়দানে আছি । আর তৃণমূল এখন প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির ত্রিস্তর জনপ্রতিনিধিদের জোর করে রাতের অন্ধকারে তুলে নিচ্ছে । এটা অগণতান্ত্রিক । জেলাশাসককে বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি কর্ণপাত করছেন না । এ নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামছি । আমরা জানি না, সেই আন্দোলন কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে । কেউ তা ভাবতে পারবে না । গাজোলের বিডিওকে আমরা ঘেরাও করব । কোথাও আর এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়ব না । প্রশাসন ও তৃণমূল এখন সমার্থক । তাই আমরা এই দুয়ের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামছি ।”
আরও পড়ুন : অনাস্থা ভোটাভুটিতে হার, শিন্দ্রানী গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া বিজেপির
এদিকে মালদা জেলার তৃণমূল চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী জানিয়েছেন, “বামনগোলার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল দখল করেনি । ওই দলের নির্বাচিত সদস্যরা স্বেচ্ছায় তৃণমূলে চলে এসেছেন । দলে আলোচনা করেই তাঁদের আমরা যোগদান করিয়েছি । তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরিবর্তন করেছেন । মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি ভোটে জিতেছিল । মানুষ এখন হতাশ । মমতাদি’র নেতৃত্বে রাজ্যে তৃতীয়বার তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেছে । মানুষের জন্য মমতাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছেন । তাহলে মানুষ কেন অন্য দলে যাবে ? তাই মমতাদি’র জন্য মানুষ তৃণমূলে আসছে । আর বিজেপি যে অভিযোগ তুলছে, তা নিয়ে তারা পুলিশ কিংবা আদালতে অভিযোগ জানাল না কেন ? ক’দিন আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল তো মালদায় এসেছিল । তাঁদের কাছে অভিযোগ জানাল না কেন ? যেসব জনপ্রতিনিধিরা তৃণমূলে এসেছেন, তাঁরা কেউ বাচ্চা ছেলে নন । চিন্তাভাবনা করেই স্বেচ্ছায় তাঁরা তৃণমূলে এসেছেন । আর স্বেচ্ছায় কেউ কোনও কাজ করলে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠতে পারে না ।”