মালদা, 13 জুলাই: তোমার শত্রু, আমার শত্রু এক ৷ তাই আমরা বন্ধু ৷ সেই ভাবনা থেকেই একসময়ের বৈরিতা ভুলে হাত মিলিয়েছিল বাম-কংগ্রেস ৷ উদ্দেশ্য একটাই, তৃণমূলকে প্রতিহত করে এ রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ৷ এ বারের পঞ্চায়েতে রাজ্যে 19 শতাংশ ভোট পেয়েছে বাম-কংগ্রেস ৷ যদিও এ বার দুই দলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আসন সমঝোতা হয়নি ৷ মালদা জেলাতেও 2018-র তুলনায় ভোট বেড়েছে দুই শিবিরের ৷ কংগ্রেস ও সিপিআইএমের আসনও বেড়েছে ৷ কিন্তু ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোথাও বামেরা শাসন করার জায়গায় আসতে পারেনি ৷ ক্ষমতার অলিন্দে তারা নিশ্চিহ্ন ৷ আর 9 মাস পরেই লোকসভা ভোট ৷ এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটে কি মালদা জেলায় সেভাবে দাগ কাটতে পারবে লাল পার্টি ? প্রশ্ন উঠেছে বাম শিবিরেই ৷
আঠারোর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েতের 125টি আসনে জয় পেয়েছিল সিপিআইএম ৷ আরএসপি সাত এবং সিপিআই পেয়েছিল একটি আসন ৷ কংগ্রেসের ঝুলিতে এসেছিল 452টি আসন ৷ সে বার বিজেপি 635 ও তৃণমূল 1,381টি বুথ দখল করে ৷ তখন জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ছিল 2,742টি ৷ ডিলিমিটেশনের পর 2023-এ জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন বেড়ে দাঁড়ায় 3,186 ৷ এর মধ্যে 47টি আসনে নির্বাচন হয়নি ৷ বাকি আসনগুলির মধ্যে সিপিআইএম 211টি, আরএসপি দুটি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক একটি আসন দখল করে ৷ এ বার কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে 691টি আসন ৷ বিজেপি ও তৃণমূল যথাক্রমে 596 ও 1,531টি আসনে জয়ী হয়েছে ৷
এ বারের নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির 18টি আসনে জয় পেয়েছে সিপিআইএম ৷ কংগ্রেস 91টি আসনে জয়ী হয়েছে ৷ জেলার 10টি পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় শাসকদল ৷ একটিতে বিজেপি এবং বাকি চারটির ফল ত্রিশঙ্কু ৷ অন্যদিকে, জেলা পরিষদের 43টি আসনে কংগ্রেস পেয়েছে পাঁচটি আসন ৷ 2018-র ভোটে মালদা জেলা পরিষদে বামেদের দু’জন প্রতিনিধি থাকলেও এ বার নেই ৷
আরও পড়ুন: হাওড়া-হুগলি-উত্তর 24 পরগনার কিছু বুথে ভোট বাতিল, হবে ফের নির্বাচন; জানাল কমিশন
সিপিআইএমের বক্তব্য, এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের আসন বেড়েছে ৷ ভোটের হারও খানিক বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এ বারের ভোটে যেভাবে তাদের শাসকের সন্ত্রাস, পুলিশ ও প্রশাসনের সরাসরি বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি ৷ এত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে এ বার তারা যে ফল করতে পেরেছে, তাতে তারা আশাবাদী যে, লোকসভা নির্বাচনে তাদের ফল আরও ভালো হবে ৷
তাছাড়া এ বারের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সার্বিক বোঝাপড়া হয়নি ৷ সেটা হলে ফল আরও ভালো হত বলে মনে করছে বামেরা ৷ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলছেন, “নির্বাচন নিয়ে আমরা এখনও কোনও বিশ্লেষণ করিনি ৷ এই মুহূর্তে আমরা নির্বাচন পরবর্তী তৃণমূলের হিংসা থেকে দলীয় কর্মীদের বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত ৷ কংগ্রেসের সঙ্গে আসন বোঝাপড়ায় আমাদের লাভ না ক্ষতি, সেটা নিয়েও আমরা কিছু ভাবছি না ৷ তবে আসন্ন লোকসভা ভোটেও আমরা দুই দল এক হয়েই বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলা করব ৷”
যদিও সিপিআইএমের শীর্ষস্তরের এক জেলা নেতা বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লাভ কিছু হয়নি ৷ কংগ্রেস সমর্থদের অধিকাংশই সিপিআইএম প্রার্থীদের ভোট দেন না ৷ রাজ্য থেকে তৃণমূলকে সরাতে এটা যে প্রয়োজন, কংগ্রেস নেতৃত্বও সেটা তাদের সমর্থকদের বোঝাতে পারেনি ৷ এ বারের নির্বাচনে তা পরিষ্কার বোঝা গিয়েছে ৷ বরং এককভাবে লড়াই করে তৃণমূলের কাছে হারলেও ভালো হত ৷
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে হিংসায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট সওকত, সিবিআই তদন্তের দাবি নওশাদের
বামফ্রন্ট কি কংগ্রেসের কাঁধে ভর করে রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছে ? এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়েছেন জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ইশা খান চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, “আপাতত আমরা ত্রিশঙ্কু গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে কীভাবে আমাদের বোর্ড গঠন করা যায়, তার কৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত ৷ এখনও পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়নি ৷ সিপিআইএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের লাভ না ক্ষতি হল, তা নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি ৷ তবে আমরা সিপিআইএমের সঙ্গে জোট বেঁধেই আগামী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চাই ৷”
তবু প্রশ্ন রয়েছে এই জেলায় বামেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ৷ গতবারের তুলনায় এ বার তারা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে আসন যেমন বেশি পেয়েছে, বেড়েছে ভোটও ৷ কিন্তু কোনও পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় না থাকা বামেরা মানুষের মনে কি কোনও দাগ কাটতে পারবে ? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, তারা কি নিজেদের জয়ী প্রার্থীদের ধরে রাখতে পারবে ? কারণ, উন্নয়নের স্বার্থে লাল দরজা পেরিয়ে সবুজ ঘরে ঢুকে পড়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ এমনকী সেটা হয়েছে কাউন্টিং সেন্টারেই ৷