মালদা , 11 এপ্রিল : লকডাউনে সবকিছুই বন্ধ ৷ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া কোনও দোকান খোলা নেই ৷ খাবারের দোকানগুলিও গত 25 মার্চ থেকে বন্ধ ৷ এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরেরা ৷ শহর এলাকায় তবুও কিছু সংগঠন কিংবা পুলিশ প্রতিদিন এই মানুষগুলির হাতে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে ৷ কিন্তু গ্রামাঞ্চলের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এই মানুষগুলির দুর্ভোগের অন্ত নেই ৷ শহরের থেকে গ্রামের মানুষ কোরোনা নিয়ে আরও বেশি আতঙ্কে রয়েছে ৷ বহিরাগত কাউকে দেখলেই গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ ফলে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলির স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারছে না ৷ এই অবস্থায় ব্যতিক্রমী হবিবপুরের একদল যুবক ৷ ফাঁকা স্টেশনে এমনই এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে তাঁরা আজ নিজের বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে ৷ তাঁদের এই কাজের প্রশংসা করছে পুলিশ মহল থেকে বিদ্বজ্জনেরাও ৷
বাস্তবিকই লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রবল সমস্যায় পড়েছে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীনরা ৷ দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া তো দূরের কথা , অনেকের কপালে সারাদিন কোনও খাবারই জুটছে না ৷ শহর থেকে গ্রামে এই সমস্যা আরও বড় আকার নিয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছিল হবিবপুরের একদল যুবক ৷ গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাঁরা এমন মানুষ দেখতে পেলেই তাঁদের নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কোনও কোয়ারান্টাইন সেন্টারে ৷ তাতে এই মানুষগুলির দু’ভাবে উপকার হচ্ছে ৷ একদিকে যেমন তাঁরা পেট ভরে খেতে পাচ্ছেন , তেমনই প্রতিদিন তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হচ্ছে ৷ এভাবেই এই দলটি বৃহস্পতিবার দুপুরে সিঙ্গাবাদ রেল স্টেশনে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার সন্ধান পান ৷ সেই সময় এই মহিলা স্টেশনে খাবারের আশায় ঘোরাঘুরি করছিলেন ৷ কিন্তু তাঁকে খাবার দেওয়ার কেউ নেই সেখানে ৷ তা দেখেই ওই যুবকরা তাঁকে স্টেশন থেকে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় কোয়ারান্টাইন সেন্টারে ৷ অনেক চেষ্টা করে উদ্ধার হয় মহিলার আসল ঠিকানা ৷
তিনি জানান , তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ থানার কামালপুর গ্রামে ৷ তাঁর নাম তানজিমা খাতুন ৷ এই তথ্যটুকু পেয়েই ওই যুবকরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন ৷ ভরসা গুগল ম্যাপ ৷ জোগাড় হয় সামশেরগঞ্জের BDO ও থানার IC-র ফোন নম্বর ৷ তাঁদের গোটা ঘটনা খুলে বলা হয় ৷ সেখানকার প্রশাসনও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ৷ খবর চলে যায় তানজিমার বাড়িতে ৷ আজ তাঁর পরিবারের লোকজন হবিবপুর থানায় আসে ৷ পুলিশের উপস্থিতিতে তানজিমাকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷
গোটা ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হবিবপুরের তারাশঙ্কর রায় ৷ তিনি বলেন , “মালদার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এবং হবিবপুর থানার IC পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাহায্য না পেলে আমরা তানজিমাকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারতাম না ৷ তাঁরাই সামশেরগঞ্জের BDO ও থানার IC-র সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দেন ৷ লকডাউনের মধ্যে তানজিমার পরিবারের সদস্যদের এখানে আসার অনুমতি দেন৷ মানসিক ভারসাম্যহীন বয়স্ক এই মহিলা দু’মাস আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ৷ কোনও উপায়ে তিনি এই জেলায় চলে আসেন ৷ ঘোরাঘুরি করতে করতে সিঙ্গাবাদ স্টেশনে চলে যান ৷ খবর পেয়ে আমরা তাঁকে উদ্ধার করি ৷ প্রথম থেকেই আমরা তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলাম ৷ অবশেষে সেই কাজ করতে পেরেছি ৷ আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি ৷”
এদিকে ঘর থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বোনকে লকডাউনের মধ্যে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি তানজিমার দাদা ইসমাইল খান ৷ তিনি বলেন , “আমরা বোনের অনেক চিকিৎসা করিয়েছি ৷ কিন্তু সুস্থ করা যায়নি ৷ মাস দু'য়েক আগে হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে বোন নিরুদ্দেশ হয়ে যান ৷ অনেক খোঁজখবর করেও তাঁর সন্ধান পাইনি ৷ এনিয়ে আমরা বোনের নামে সামশেরগঞ্জ থানায় মিসিং ডায়ারিও করি ৷ কিন্তু পুলিশও তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় ৷ শেষ পর্যন্ত এখানকার যুবকদের সহযোগিতায় বোনকে খুঁজে পেলাম ৷ এখনও যে সমাজে এমন মানুষ আছে তা ফের প্রমাণিত হল ৷ আমি এই যুবকদের জন্য গর্বিত ৷ তাঁদের ধন্যবাদ জানাই ৷”