মালদা, 16 সেপ্টেম্বর: এ এক অন্য দুর্গার কাহিনি (Durga Puja 2022)৷ এই কাহিনি রক্ত-মাংসের উমার ৷ দুর্গারই আরেক নামে তিনি নামাঙ্কিতা ৷ তিনি কমলা ৷ সন্তান যাতে দুধেভাতে থাকে, তার জন্য 90 বছর বয়সেও ছেলেকে সাহায্য করে যাচ্ছেন ৷ আপ্লুত ছেলে ৷ কৃতজ্ঞতায় ঝরে পড়ে অশ্রু (Malda news)৷
কমলা মণ্ডল ৷ বাড়ি পুরাতন মালদা পৌরসভার নতুন পল্লিতে (Durga puja in Malda)৷ স্বামী পরশুরাম মণ্ডল ছিলেন দর্জি ৷ 2009 সালে প্রয়াত হয়েছেন তিনি ৷ অভাবের সংসারে চার ছেলেকে মানুষ করেছেন কমলা ৷ কিন্তু মনের মানুষ হয়েছেন ছোট ছেলে সুশান্ত ৷ অভাবের সংসারে হাল ধরতে বেছে নিয়েছিলেন মাটির মূর্তি তৈরির পেশা ৷ একসময় জেলার নামী শিল্পীদের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন ৷ প্রথমে কোথাও গুরুত্ব পাননি ৷ কিন্তু তাঁর জেদই তাঁকে সেই শিল্পীদের কাছাকাছি এনে দেয় ৷ একাধিক শিল্পীর কাছে কাজ শিখে 2002 সাল থেকে পুরাতন মালদারই মির্জাপুর এলাকায় নিজের শিল্পালয় খোলেন ৷ এ বার ন’টি মাতৃমূর্তি তৈরি করছেন ৷ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে রয়েছে একাধিক বিশ্বকর্মা প্রতিমা ৷ প্রতিটিতেই লেগে রয়েছে তাঁর নবতিপর মায়ের হাতের ছোঁয়া ৷
পরিবারের কেউ কোনওদিন মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না ৷ ছেলের হাত ধরেই কাজ শেখা নব্বইয়ের এই বৃদ্ধার ৷ বয়সের ভারে শরীর ঝুঁকে পড়েছে ৷ কিন্তু ছেলের মঙ্গলের জন্য তাঁর মনের মেরুদণ্ড এখনও টানটান ৷ কমলাদেবী বলছেন, “ছেলের হাত ধরেই এই কাজ শেখা ৷ 30 বছর হয়ে গেল ৷ ছেলের জন্য এখনও কাজ করে যাই ৷ ওকে নানাভাবে সাহায্য করি ৷ এতে ওরও সুবিধে হয় ৷ ছেলেকে ভালো রাখাই তো মায়ের একমাত্র ইচ্ছে ৷ তাই না ! যতদিন পারব, ছেলেকে এভাবেই সাহায্য করে যাব ৷”
আরও পড়ুন: মোক্ষলাভের পথ দেখাবে উলটোডাঙা বিধান সংঘের পুজো মণ্ডপ
যাঁর মাথায় মায়ের আশীর্বাদ, তাঁকে রোখে কে ৷ সুশান্তবাবুকেও কেউ রুখতে পারেনি ৷ তিনি জানাচ্ছেন, “অভাবে পড়াশোনা হয়নি ৷ ছোট থেকেই মাটির কাজের দিকে আমার অসম্ভব ঝোঁক ৷ ঠিক করে নিয়েছিলাম, এই কাজকেই পেশা বানাব ৷ কিন্তু সেই কাজ শিখব কোথা থেকে ? মালদার সমস্ত শিল্পীদের কারখানায় ঘুরে বেড়াতাম ৷ তাঁদের কাজ দেখতাম ৷ প্রথমে তাঁরা কেউ আমায় গুরুত্ব দেননি ৷ শেষ পর্যন্ত ভেলুচরণ পাল আমাকে এই শিল্পের শিক্ষা দিতে রাজি হন ৷ তিনিই আমার প্রথম গুরু ৷ এরপর রাজকুমার পণ্ডিত, তুলসী পাল, রতন পণ্ডিতদের কাছে কাজ শিখেছি ৷ অবশেষে 2002 সালে নিজে শিল্পালয় তৈরি করি ৷"
তিনি আরও বলেন, "আমার কাছ থেকেই মা এই কাজে হাত দেন ৷ এখনও আমাকে অসম্ভব সাহায্য করেন ৷ মূর্তি তৈরির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি আমার পাশে থাকেন ৷ প্রাণ দিয়ে আমাকে সাহায্য করেন ৷ বয়সের কিছু প্রভাব অবশ্যই তাঁর শরীরে পড়েছে ৷ মায়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেও কোনও সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারিনি ৷ আর চেষ্টা করি না ৷ আমিই মায়ের জন্য যথেষ্ট ৷ যতদিন তিনি আছেন, ততদিন আমি যেন তাঁর মুখে ভাত তুলে দিতে পারি, সর্বশক্তিমানের কাছে শুধু এটাই চাই ৷” কথা বলতে বলতে আবেগে গলা বুজে আসে সুশান্তর ৷
আর ক’দিন পরেই মর্ত্যে ধ্বনিত হবে, ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা’৷ মায়ের সন্তানরা যাতে সবাই ভালো থাকে, তার জন্য উমার কাছে আর্তি জানাবে মর্ত্যবাসী ৷ কিন্তু সুশান্তকে বোধহয় সেই আবেদন জানাতে হবে না ৷ তাঁর মাথায় তো জন্মের পর থেকেই উমার হাত ৷ তাঁর মা’ই তো তাঁর দুর্গা ৷