মালদা, 13 জুলাই : একই দিনে একই হাসপাতালের ছয় স্বাস্থ্যকর্মী কোরোনা সংক্রামিত হলেন ৷ এনিয়ে চরম উদ্বেগ ছড়িয়েছে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ৷ যদিও স্বাস্থ্য দপ্তরের আশ্বাস, তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হবে না ৷ তবে লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে সংক্রমিত কর্মীরা হাসপাতালে কাজ করায় উদ্বেগ অন্য মাত্রা নিয়েছে ৷ গোটা ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে ৷ সংক্রমণের গতি দেখে চাঁচল এলাকাতেও কড়া লকডাউন ঘোষণার দাবি তুলেছে বিভিন্ন মহল ৷ এদিকে আজ রতুয়া 2 পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ মোট 10 সদস্যের লালারসে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৷ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির স্বাভাবিক কাজকর্ম ৷
আজ চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ছয় স্বাস্থ্যকর্মীর লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে ৷ সংক্রমিত কর্মীরা সবাই নার্স ৷ তাঁদের পাঁচজন হাসপাতালের কোয়ার্টারে বসবাস করলেও একজন রতুয়ায় নিজের বাড়িতে থাকেন ৷ গত 6 জুলাই ওই হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের লালারসের নমুনা নেওয়া হয় ৷ আজ তার রিপোর্ট বেরোলে দেখা যায়, ওই ছয় নার্স কোরোনা সংক্রমিত ৷ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজেদের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিলেও তাঁরা এই ক’দিন নিয়মিত ডিউটি করেছেন ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনিতেই হাসপাতালে নার্স কম রয়েছে ৷ তাই এই কর্মীদের ডিউটি দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু আজ তাঁদের লালার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসলে আতঙ্ক ছড়ায় হাসপাতাল কর্মী ও রোগীদের মধ্যে ৷ এই ক’দিন সংক্রমিতরা কতজন কর্মী ও রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে ৷
চাঁচল 1 ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আখতার হোসেন বলেন, “হাসপাতালের ছয় স্বাস্থ্যকর্মীর কোরোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসার পরেই তাঁদের হাসপাতাল সংলগ্ন কোয়ার্টারে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে ৷ একই সঙ্গে হাসপাতালের সমস্ত ওয়ার্ড স্যানিটাইজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ তবে এর জন্য হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও প্রভাব পড়বে না ৷ তার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি ৷” অন্যদিকে হাসপাতাল সুপার ওয়াসিম রানা বলেন, “সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই উপসর্গহীন ৷ তাই তাঁদের হোম আইসোলেশনে রেখে নজরদারি চালানো হচ্ছে ৷ এই ক’দিন তাঁরা কতজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন তার খোঁজ শুরু হয়েছে ৷ আজ থেকেই হাসপাতাল স্যানিটাইজ করার কাজ শুরু করা হয়েছে ৷” যদিও লালারস পরীক্ষার জন্য দেওয়ার পরও কেন সংক্রমিত কর্মীদের ডিউটি দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি সুপার ৷
এদিকে আজ রতুয়া 2 পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ মোট 10 সদস্যের লালারসেও কোরোনা সংক্রমণ মিলেছে ৷ এই ঘটনায় 28 সদস্যবিশিষ্ট ওই পঞ্চায়েত সমিতির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে ৷ কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে দপ্তরের কাজকর্ম ৷ হাতে গোনা কয়েকজন কর্মী ছাড়া আজ পঞ্চায়েত সমিতি চত্বর মাড়াননি কেউ ৷ ওই দপ্তরও স্যানিটাইজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে চাঁচল ও রতুয়ার চারটি ব্লকে কঠোর লকডাউনের সওয়াল করেছে চাঁচল ব্যবসায়ী সমিতি সহ এলাকার মানুষজন ৷
ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রাণগোপাল পোদ্দার বলেন, “গোটা জেলায় দ্রুতগতিতে কোরোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ৷ আজই উত্তর মালদা মহকুমায় 22 জনের লালারসে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৷ সংক্রমণে রাশ টানতে আমরা ইতিমধ্যে মহকুমা প্রশাসনের কাছে এলাকায় কঠোর লকডাউন লাগু করার আবেদন জানিয়েছি ৷ আমরা চাই, প্রশাসন এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক৷”
চাঁচলের মহকুমাশাসক সব্যসাচী রায় জানিয়েছেন, “শুধু ব্যবসায়ী সমিতি নয়, এলাকার অনেক মানুষ আমার কাছে কঠোর লকডাউন জারি করার সওয়াল করেছেন৷ বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব তাড়াতাড়ি একটি বৈঠকে বসতে চলেছি ৷ সেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সমিতিকেও ডাকা হবে ৷ সবার মতামত নিয়ে এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷ আজ চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ছয় স্বাস্থ্যকর্মীর কোরোনা সংক্রমণের খবর পেয়েছি ৷ বিষয়টিতে নজর রাখা হচ্ছে৷”