মালদা, 16 অগস্ট : গঙ্গা ও ফুলহার নদীর দাপটের জোড়া ফলায় কাঁপছে মালদা ৷ বিপন্ন জেলার 6টি ব্লক । ইতিমধ্যে বানভাসি পরিস্থিতির জেরে ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ । জলবন্দি আরও কয়েক হাজার । কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি এখন দুই নদীর জলের তলায় । শুধু জলস্তর বৃদ্ধিই নয়, গঙ্গার ভাঙনও অব্যাহত । মানুষের বাড়িঘরের সঙ্গে নদীতে তলিয়ে গিয়েছে দোতলা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রও । এই অবস্থায় গঙ্গার বাঁধ রক্ষা করতে রীতিমতো সংগ্রাম চালাচ্ছে সেচ দফতর । রাতেও আলোর ব্যবস্থা করে বাঁধে নজরদারি চালানো হচ্ছে । বানভাসি মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা । সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনই বিপদ কমার কোনও লক্ষণ নেই । কারণ, দুই নদীরই আপার ক্যাচমেন্টে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত । আরও বেশ কয়েকদিন ধরে সেই জল নেমে আসবে ।
আজ বেলা বারোটার সময় গঙ্গার জলস্তর ছিল 25.80 মিটার । সর্বোচ্চ বিপদসীমা 25.30 মিটার থেকে 50 সেন্টিমিটার বেশি । একই সময়ে ফুলহার নদীর জল 27.94 মিটার উচ্চতায় বইছে । সর্বোচ্চ বিপদসীমা 27.43 মিটার থেকে 51 সেন্টিমিটার বেশি উচ্চতায় বইছে ফুলহার নদীর জল । গঙ্গার জলোচ্ছ্বাসে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে মানিকচকের কেশরপুরে ভেঙে গিয়েছে ভূতনি বাঁধ । ভূতনির কোশিঘাটেও বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে । কেশরপুরে এই মুহূর্তে বাঁধ মেরামতির কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে সেচ দফতর । অবশ্য বাঁধ বাঁচাতে কোশিঘাটে দিনরাত কাজ চলছে । বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে চেষ্টা চলছে বাঁধ রক্ষার । তবে, তাতে শেষ পর্যন্ত বাঁধ রক্ষা করা যাবে কিনা, সে নিয়ে নিশ্চিত নয় প্রশাসন ৷
2019 সালে জলস্তর 25.60 মিটার উচ্চতায় ওঠায় কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের পঞ্চানন্দপুর এলাকার সাকুল্লাপুরে বাঁধ উপচে গ্রামে ঢুকে পড়েছিল গঙ্গার জল ৷ সেই ঘটনার পর সেখানে বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে । মাস তিনেক আগেই কাজ শেষ হয়েছে । এখন সেই বাঁধ 27 মিটার পর্যন্ত গঙ্গার জল আটকে রাখতে সক্ষম । কিন্তু গ্রামবাসীদের আতঙ্ক অন্য জায়গায় । নতুন তৈরি বাঁধের মাটি এখনও শক্ত হয়নি । যেভাবে গঙ্গার জলস্তর বাড়ছে, তাতে বাঁধের আলগা মাটি কতক্ষণ জলের চাপ সহ্য করতে পারবে, তা বোঝা যাচ্ছে না । এদিকে সাকুল্লাপুর ঘাটের পাশে অল্পবিস্তর ভাঙন শুরু হয়েছে । সেখানে জেনারেটরের ব্যবস্থা করে রাতেও বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন সেচ দফতরের কর্মীরা ৷
আরও পড়ুন : Mamata Visits Ghatal: ঘাটাল অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ মমতার, প্রতিনিধিদল যাচ্ছে দিল্লিতে
বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনও অব্যাহত গঙ্গার । পরশু রাতে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বীরনগর 1নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ভীমাগ্রামে কার্যত তাণ্ডব চালিয়েছে গঙ্গা । স্থানীয় সূত্রে খবর, সেই রাতে চার ঘণ্টার ভাঙনে অন্তত 30টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে । তলিয়ে গিয়েছে 2014 সালে তৈরি হওয়া দোতলা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র । স্থানীয় মানুষজন সেই ঘটনা ভিডিয়ো বন্দি করেছেন । তবে পরশু রাতের পর থেকে সেখানে নতুন করে ভাঙন হয়নি বলেই জানিয়েছেন এলাকার বিধায়ক চন্দনা সরকার । তিনি গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : Flood Situation in Malda: চরম বিপদসীমা পেরোল গঙ্গা, জারি লাল সর্তকতা; বন্যা পরিস্থিতি মালদায়
শুধু গঙ্গা নয়, প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুলহার নদীর ভাঙনও । দ্রতগতিতে জলস্তর বাড়ছে এই নদীরও । প্লাবিত হয়েছে রতুয়া 1নং ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত 35টি গ্রাম । প্রশাসনের তরফে দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তিনটি ফ্লাড সেন্টার খুলে দেওয়া হয়েছে । বিপন্ন মানুষের যাতায়াতের জন্য প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে পাঁচটি করে মোট 10টি নৌকা নামানো হয়েছে । আজ দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিডিও রাকেশ টোপ্পো এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) মৃদুল হালদার ।
বিডিও বলেন, “আমরা বিলাইমারি ও মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখলাম । সেখানে বন্যার জল বেড়েছে । আমরা ইতিমধ্যে দুই গ্রাম পঞ্চায়েতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি । সুষ্ঠুভাবে ত্রাণসামগ্রী বিলির জন্য এখান থেকে দলও গঠন করে দিয়েছি । আরও সামগ্রী মজুত রয়েছে । পরিস্থিতি বুঝে আমরা আবার তা বিলি করব । দুর্গতরা চাইলে ফ্লাড সেন্টারে চলে আসতে পারেন । তার জন্য আমরা মাইকিং করছি । পরে প্রয়োজন হলে স্কুলগুলিতেও ফ্লাড সেন্টার খোলা হবে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে 24 ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । আশা করি, আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব ।”