মালদা, 29 ডিসেম্বর : শীত মরসুমে আকাশের মুখ ভার ৷ দার্জিলিং-গ্যাংটকে বরফ পড়তে শুরু করেছে । আশা করা যাচ্ছে, আগামী কয়েকদিন উত্তরের জেলাগুলিতে উষ্ণতার পারদ অনেকটাই কমবে । তারই মধ্যে 30 ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে মালদায় শহরে শুরু হচ্ছে ফুলমেলা (Flower exhibition in Malda)। তারই প্রস্তুতি চলছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সুইমিং পুল সংলগ্ন মাঠে ।
জেলাবাসীর মধ্যে ফুল-ফল চাষের চর্চা বাড়াতে 45 বছর আগে পথ চলা শুরু করে মালদা হর্টিকালচার অ্যাসোসিয়েশন । এবার তাদের বার্ষিক পুষ্প প্রদর্শনীও 45 বছরে পা দিচ্ছে । বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন মালদার জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র । চলবে 3 জানুয়ারি পর্যন্ত ।
প্রতিদিন সকাল 10টা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে সাধারণের জন্য । টিকিট 20 টাকা । তবে শুধু ফুলই নয়, প্রদর্শনীতে থাকছে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট, বাহারি গাছ, এমনকি প্রাচীন বনসাইও ৷

আরও পড়ুন : বাড়িতেই অর্কিড চাষ জীবন বিজ্ঞান শিক্ষকের
প্রদর্শনীতে নিজের তৈরি ফুলের গাছ সাজাতে এদিন হাজির হন 75 বছর বয়সী ফুলপ্রেমী রঘুনন্দন গুপ্ত । জেলায় যাঁরা ফুলগাছের চর্চা করেন, তাঁদের অর্ধেকের বেশি এই বৃদ্ধের ছাত্র । রঘুনন্দনবাবু বলেন, "12 বছর বয়স থেকে ফুলগাছের চর্চা করি । তখন এখানে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজনই ফুলগাছ তৈরি করতেন । এখন অনেক বড় আকারে এই চর্চা হচ্ছে । এই সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর এখানে প্রতিযোগীর সংখ্যাও অনেকটা বেড়েছে । প্রতি বছর প্রচুর ফুল মাঠে আসে । আমিও ফুল নিয়ে আসি । এটা আক্ষরিক অর্থেই মিলন মেলা । এখানে যতজন গাছ নিয়ে এসেছে, তাদের অর্ধেকই আমার হাতে তৈরি । এখনও অনেক ছাত্র আমার কাছে ফুলের গাছ তৈরি করা শেখে । এখনও যদি কোনও উৎসাহী ছাত্র পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আমি সবরকম সাহায্য করব । ফুল-ফল না বাড়লে আমাদের পৃথিবীর দূষণ কমবে না । সবুজ বাড়বে না । মানুষ বেশি অক্সিজেন পাবে না । সবচেয়ে বড় বিষয়, ফুল মানুষের দুশ্চিন্তা দূর করে মন ভাল রাখে ।"

আরও পড়ুন : 2000 ফুল-ফলের সমাহার রায়গঞ্জের ফুলমেলায়
আরেক ফুলপ্রেমী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুভাষচন্দ্র সাটিয়ারও 21 বছর ধরে ফুলগাছের চর্চা করেন । তাঁর কথায়, "এবার শুধু চন্দ্রমল্লিকা নয়, বিভিন্ন ফল-সবজির গাছও তৈরি করেছি । এখনও আমি এসব করে চলেছি । ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বার্তা দিতে চাই, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য পৃথিবী যে সংকটের মুখে পড়েছে, তা থেকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র গাছ । এই চর্চার জাগরণ আসে এ ধরনের বিভিন্ন মেলা থেকে । ফুল ভালবাসে না, এমন মানুষ বিরল । আর ফুল ভালোবাসলেই যে কোনও মানুষ গাছ ভালোবাসবে । গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হবে ।"
এই মেলার বিষয়ে মালদা হর্টিকালচার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উৎপল কর্মকার বলেন, "করোনাকালে মানুষকে গাছ লাগাতে উৎসাহ দেওয়ায় আমাদের মূল উদ্দেশ্য । গত বছরই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, এই মানুষদের নিয়ে বড় কিছু করা যেতে পারে । তাই এবারই প্রথম আমরা অনলাইনে রুফ গার্ডেন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেছিলাম । তাতে 40 জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছেন। শুধু মালদা জেলা নয়, নদিয়া ও কলকাতা থেকেও প্রতিযোগীরা এই বিভাগে অংশ নিয়েছেন । তাঁদের ছাদ থেকেও এবার এই মাঠে গাছ এসেছে । করোনায় মানুষ যে গাছ নিয়ে থেকেছে, আজ মাঠের চেহারা তার প্রমাণ দিচ্ছে । প্রচুর টব এবার মাঠে এসেছে । সবাইকে বলব, দূষণ রুখতে সবাই আরও বেশি করে গাছ লাগান । গাছের সঙ্গে থাকুন, তবেই প্রকৃতি সুস্থ থাকবে ।"
আরও পড়ুন : জারবেরা ফুল চাষে নতুন আয়ের দিশা নদিয়ায়