মালদা, 17 অগস্ট: গঙ্গার ছোবল রক্ষে নেই, দোসর হল কোশি ৷ মালদায় দুই নদীর ভাঙনে বিপন্ন বাঁধ ৷ ইতিমধ্যেই গঙ্গার ভাঙনে ভূতনির কালুটোনটোলা তিনটি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে ৷ কোশির নদীর ভাঙনে পড়ে গিয়েছে ওই নদীবাঁধের দুটি অংশ ৷ সৌভাগ্যের কথা, দু'দিন ধরে গঙ্গার জলস্তর কমছে ৷ কমেছে কোশির জলস্তরও ৷ সেকারণে এখনও দুই বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে নদীর জল ভূতনি চরে ঢোকেনি ৷ তবে গঙ্গার জলস্তর বাড়লে ভূতনি চরে থাকা তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের দুটি পঞ্চায়েতের লাখ তিনেক মানুষ যে নিশ্চিতভাবে বানভাসি হতে চলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ এই পরিস্থিতিতে সেচ দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, টাকার অভাবে এই মুহূর্তে বাঁধ মেরামতি সম্ভব নয় ৷ অগত্যা বন্যা হলে বানভাসি মানুষকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা নিয়েই ভাবছে প্রশাসন ৷
গঙ্গার ভাঙন রোধে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্পৃহতায় ক্ষুব্ধ বিপন্ন মানুষ ৷ তাঁদেরই একজন রামলাল চৌধুরী ৷ রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ৷ ভাঙন প্রবণ এলাকাতেই বাড়ি তাঁর ৷ তিনি আবার বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান ৷ কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎই যেখানে বিপন্ন, রাজনীতি সেখানে গৌণ ৷ ভাঙন মোকাবিলায় ব্যর্থ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন তিনি ৷
তাঁর বক্তব্য, "অদ্ভূত পরিস্থিতি ৷ দিদি বলছেন, ভাঙন মোকাবিলায় কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না ৷ আর মোদির দলের নেতারা বলছেন, ভাঙন রুখতে দিদি প্রকল্প তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে কোনও আবেদনই জানাচ্ছেন না ৷ বেশ কয়েকবছর ধরে এই নিয়ে তরজা চলছে ৷ আর প্রতি বছর গঙ্গা একটু একটু করে এলাকা গিলে নিচ্ছে ৷ পশ্চিম রতনপুর বাঁধের প্রায় 90 শতাংশই তলিয়ে গিয়েছে ৷ কেশরপুর বাঁধের বেশ কয়েকটি জায়গাও ভেঙে গিয়েছে ৷ রতুয়ার দুটি ও ভূতনির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে বাঁচাতে অনেকবার সেচ দফতরে আবেদন জানিয়েছি ৷ সেচকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেছি ৷ গতবছর বলা হয়েছিল, নতুন বাঁধ তৈরি হবে ৷ এবার যখন যোগাযোগ করি, সেচ দফতরের আধিকারিকরা সাফ জানিয়ে দেন, টাকা নেই ৷ তাই নতুন বাঁধ আর হবে না ৷ একটাই আশার কথা, ক'দিন ধরে গঙ্গার জল কমছে ৷ ফলে এখনও ভাঙা বাঁধ দিয়ে জল ভিতরে ঢোকেনি ৷ কিন্তু গঙ্গার জল ফের বাড়বে ৷ উত্তর ভারতের জল নীচে নেমে এলে নদী টইটুম্বুর হয়ে উঠবে তখন আমাদের বানভাসি হওয়া ছাড়া উপায় নেই ৷"
আরও পড়ুন : বিপদসীমা পেরল গঙ্গা, তীব্র ভাঙন অব্যাহত; বিপন্ন গোপালপুর
এই অবস্থায় ভূতনিকে গঙ্গা-কোশির রোষ থেকে বাঁচাতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে সিপিআইএম ৷ দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা ভাঙন প্রবণ এলাকার বাসিন্দা দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, "নদীর রোষে মানুষ মরতে বসেছে, আর দুই সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে ৷ এলাকার তৃণমূল বিধায়ক একবারের জন্যও ভাঙন প্রবণ এলাকায় পা ফেলেননি ৷ অথচ পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিনি এলাকার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভূতনিতে ভাঙন ও বন্যা রোধে রাজ্য সরকার কাজ করবে ৷ কোথায় গেল তাঁর প্রতিশ্রুতি ? তিনিই বা কোথায় গেলেন ? মানিকচকের বিডিও জানিয়ে দিয়েছেন, সেচ দফতর তাঁদের জানিয়েছে, টাকার অভাবে তারা এখনই কাজে হাত দিতে পারছে না ৷ টাকা পাওয়া গেলে কাজ করা হবে ৷ তাই ব্লক প্রশাসন এখন বন্যার্ত মানুষকে নিয়ে ভাবছে ৷ বন্যা নিয়েই মিটিং করছে ৷ ভাঙন থেকে মানুষকে রক্ষা করতে আমরা ভূতনি বাঁচাও আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছি ৷"
এদিকে জলস্তর কমতে শুরু করলেও বৃহস্পতিবার সকালে গঙ্গা বিপদসীমা 24.69 মিটার থেকে 4 সেন্টিমিটার উঁচু দিয়ে বয়েছে ৷ এদিন সকাল আটটায় গঙ্গার জলস্তর ছিল 24.73 মিটার ৷ এখনও নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় জারি রয়েছে লাল সতর্কতা ৷ একই সময় ফুলহর বিপদসীমা 27.43 মিটার থেকে 22 সেন্টিমিটার নীচু দিয়ে বইছে ৷ আজ সকালে ফুলহরের উচ্চতা ছিল 27.21 মিটার ৷ এই বিষয়ে জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, ভূতনিতে বিপন্ন বাঁধ রক্ষায় সেচ দফতরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে ৷ পরিস্থিতির উপর প্রশাসন নজর রেখে চলেছে ৷ তবে জেলার প্রধান দুই নদীর জল কমতে শুরু করেছে ৷
আরও পড়ুন : ভয়াল চেহারা গঙ্গার! ভাঙনে তলিয়ে গেল পুলিশ ক্যাম্প