মালদা, 18 ডিসেম্বর : শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগ করার পর রাজ্যের বিভিন্ন অংশে যখন তৃণমূল ছাড়ার হিড়িক লেগেছে, ঠিক তখনই গতরাতে হরিশ্চন্দ্রপুরে সম্মুখ সমরে শাসকদলের যুব ও ছাত্র সংগঠন ৷ তৃণমূলের দুই সংগঠনের সংঘর্ষে গতরাত থেকে উত্তপ্ত হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা ৷ ঘটনায় আহত হয়েছেন টিএমসিপির দুই সদস্য ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ গতরাত সোয়া 11টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অদূরে শহিদ মোড় এলাকায় ৷ পুলিশের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷
আরও পড়ুন : চরমে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, উঠল পৌরসভার প্রশাসকের অপসারণের দাবি
টিএমসিপির নাম করে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে দলের দুই সংগঠনের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় ৷ গতকালের ঘটনায় অভিযোগের তির উঠেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ব্লক যুব তৃণমূল সহ সভাপতি দুর্জয় দাস ও তাঁর অনুগামীরা বিরুদ্ধে ৷ অভিযোগ, রাহাত আজগর নামে এক যুব তৃণমূল নেতা সম্প্রতি টিএমসিপির নাম করে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনুষ্ঠানের কথা বলে চাঁদা তুলছিলেন ৷ এর বিরোধিতা করেন টিএমসিপির দুই নেতা প্রণব দাস ও ছোটন শেখ ৷ এখান থেকেই গতকাল গোলমালের সূত্রপাত ৷
অভিযোগ, গতরাতে শহিদ মোড়ে ব্লক যুব তৃণমূল সহ সভাপতি দুর্জয় দাসের নেতৃত্বে আজগর, সাহিল, জাবির সহ আরও কয়েকজন প্রণব ও ছোটনকে বেধড়ক মারধর করে ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে ছুটে যান ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি জিয়াউর রহমান ৷ তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাঁকেও দুর্জয় হুমকি দেয় বলে অভিযোগ ৷ এরপরেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেনি ৷
আরও পড়ুন : দুর্গাপুজো ঘিরে মালদায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, হামলা প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে
নিগৃহীত ছোটন শেখ বলেন, “রাহাত আজগর আমাদের সংগঠনের নামে চাঁদা তুলছিল ৷ গতরাতে আমি ফোন করে ওকে এই কাজ করতে বারণ করি ৷ যদিও সেকথা শুনতে সে রাজি হয়নি ৷ আমি দু’জনের সঙ্গে শহিদ মোড়ে যাই ৷ সেই সময় দুর্জয় দাসের নেতৃত্বে তারা আমাদের বেধড়ক মারধর করে ৷ টাকা তোলার প্রতিবাদ করার জন্যই আমাদের মারধর করা হয়েছে ৷ দল যেন এর একটা ব্যবস্থা করে ৷”
ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, “গতকাল আমরা বঙ্গধ্বনি যাত্রা ও দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে বাইরে ছিলাম ৷ রাতে আজকের কর্মসূচি নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম ৷ তখনই খবর পাই, শহিদ মোড়ে গোলমাল হচ্ছে ৷ আমরা সেখানে ছুটে যাই ৷ দেখি, টিএমসিপির এক কর্মীকে বেঁধে মারছে যুবরই কিছু কর্মী ৷ তাদের নেতৃত্বে ছিল ব্লক যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি দুর্জয় দাস ৷ এনিয়ে অনেকে আমাকে প্রশ্ন করে ৷ আমি সেসব নিয়েই কথা বলছিলাম ৷ দুর্জয় আমাদের কাছে আসে ৷ টিএমসপির নেতা বিমানও আসে ৷ তাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায় ৷ আমি তাদের থামানোর চেষ্টা করলে দুর্জয় আমাকে খুনের হুমকি দেয় ৷ আমি গতকাল জেলা নেতৃত্বের একজনকে জানিয়েছি ৷ পুলিশ প্রশাসনকেও মৌখিকভাবে জানিয়েছি ৷ আজ দলের জেলা নেতৃত্বকে গোটা ঘটনা জানাব৷”
আরও পড়ুন : "দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই ছেলেকে প্রাণ দিতে হল", বলছেন মালদার তৃণমূল নেতা
যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দুর্জয় দাস ৷ উলটে তিনি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, “গতকালের ঘটনাকে গন্ডগোল বলা যায় না ৷ অভিযোগ ভিত্তিহীন ৷ চাঁচল 1 ব্লক টিএমসিপি সভাপতি তাদের অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের কিছু টাকা তুলে দিতে বলেছিল ৷ আমরা সেই টাকা তুলে দিয়েছিলাম ৷ গতকাল কাউকে মারধরও করা হয়নি ৷ একই দলের ছেলেদের মারধর কেন করব ? জিয়াউর সাহেবের বক্তব্যও ভিত্তিহীন ৷ সে নিজেই একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ৷ গত বিধানসভা ভোটে সে কংগ্রেসের হয়ে ভোট করেছিল ৷ ভোট আসলেই টাকায় বিক্রি হয়ে যায় ৷ তার দাদা মোস্তাক আলম কংগ্রেসের বিধায়ক ৷ ওর দুর্নীতির কথা বলে শেষ করা যাবে না ৷ চাকরির নামে, ডাক্তারদের যোগসাজশে, সমস্ত সরকারি প্রকল্পের নামে টাকা আদায় করে ৷ আমরা অতবড় নেতা হইনি যে কথায় কথায় টাকা তুলব ৷”