মালদা, 18 অগস্ট: ভারত-পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণের পর 1945 সালের 15 অগস্টে দেশের আকাশে উড়ল তেরঙা পতাকা । আনন্দে আপ্লুত দেশবাসী । কিন্তু তার কয়েকদিন আগে থেকেই এক আশঙ্কায় দিন কাটছিল মালদা সহ এই রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের । শোনা যাচ্ছিল মালদা, দিনাজপুর আর নদিয়ার কিছু থানা পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে । মালদা জেলার 16টি থানাই পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কথা মানুষের মুখে মুখে চাউর হয়ে যায় । সেই আশঙ্কাই সত্যি হয় 13 অগস্ট । সেদিন রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় ব়্যাডক্লিফের সীমানা নির্ধারণ অনুযায়ী মালদা জেলার 16টি থানাকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে । একদিকে হতাশা, অন্যদিকে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল জেলাবাসী ।
13 অগস্ট রাতেই তৎকালীন মালদার জেলাশাসক জ্ঞান সিং কলহন পাকিস্তানের সাব ডেপুটি কন্ট্রোলার আবদুল করিমের হাতে জেলার 16টি থানার দায়িত্বভার তুলে দেন । 14 অগস্ট পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে উড়ল সে দেশের জাতীয় পতাকা । সেদিন মালদা জেলা প্রশাসনিক ভবন ও মুসলিম ইনস্টিটিউটের মাথাতেও চাঁদ-তারা পতাকা উত্তোলন করা হয় । সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলায় দাঙ্গা শুরু হয়ে যায় । সেই পরিস্থিতিতে মালদা জেলাকে ভারতে সামিল করতে তৎপরতা শুরু করেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা । কলকাতা ছুটে যান মনমোহন সাহা, রাধেশচন্দ্র শেঠ, আশুতোষ চৌধুরীদের মতে ব্যক্তিত্ব । তাঁদের তৎপরতায় 17 অগস্ট এই জেলার 16টি থানার মধ্যে 11টি থানা ভারতে অন্তর্ভূক্ত হয় । কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যায় ভোলাহাট, নাচোল, গোমেস্তাপুর, শিবগঞ্জ আর নবাবগঞ্জ থানা । তবে দুধে খানিকটা চোনা পড়লেও এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয় সবাই ।
18 অগস্ট সকালে পাবনা জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলাশাসক মালদায় এসে প্রশাসনিক ভবনের মাথা থেকে চাঁদ-তারা পতাকা নামিয়ে আনেন । সেই জায়গায় তেরঙা উত্তলন করেন জেলার প্রথম জেলাশাসক অশোক সেন । সেই ইতিহাস স্মরণে রেখে এখনও 18 অগস্ট মালদা জেলায় ভারতভূক্তি দিবস পালিত হয় । তোলা হয় জাতীয় পতাকা । স্মরণ করা হয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে সেই মানুষগুলিকেও যাঁদের জন্য মালদার 11টি থানা ভারতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল । আজ সকালে মহানন্দার পার্ক ঘাটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সেই দিনটিকে স্মরণ করেন রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় । প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী শিবেন্দুশেখর রায়ের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠান শুরু হয় । উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রশাসক সুমালা আগরওয়ালা সহ আরও অনেকে ।
আরও পড়ুন: মালদায় 6 লাখ টাকার জাল নোট-সহ ধৃত 1
সুখেন্দুবাবু বলেন, "15 অগস্ট যে দেশ স্বাধীন হচ্ছে সেটা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল । কিন্তু মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ অন্ধকারে ছিলেন । তাঁরা জানতেন না তাঁরা ভারতে থাকবেন নাকি তাঁদের পাকিস্তানে থাকতে হবে । শেষ পর্যন্ত 17 অগস্ট রাতে রেডিও মারফৎ ঘোষণা করা হয়, এই জেলার 15টি থানার মধ্যে 10টি ভারতে থাকবে, 5টি পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হবে । সেই ঘোষণা শুনে তৎকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও নেতারা সংগ্রাম করে এই জেলার বেশিরভাগ থানাকে ভারতে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন । তাঁদের সেই অবদানের কথা মনে রেখে আজ আমরা সবাই তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি । আজকের দিনের আনন্দটা এই জেলার মানুষের কাছে আলাদা । অবশ্য নতুন প্রজন্মের অনেকেই সেই ইতিহাস জানে না । আমরা তাদের সামনে সেই ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।"