কলকাতা, 26 মে : জীবিত স্বামীকে মৃত ভাবতেন । শুধুমাত্র তাই নয় । প্রতিবেশীদেরও মৃত মনে করতেন তিনি । এমন কী তাঁর মনে হত, মৃত ওই প্রতিবেশীরা ষড়যন্ত্র করছেন, যাতে তাঁরও মৃত্যু হয় । এবং তিনিও যাতে তাঁদের সঙ্গে সামিল হন। বছর 26 ধরে এভাবেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মাত্র 17 দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেন কলকাতার বাসিন্দা বছর বাষট্টির সুমিতা সান্যাল (নাম পরিবর্তিত) ।
তাঁর চিকিৎসা হয়েছে ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি (IOP)-র অধিকর্তা চিকিৎসক প্রদীপ সাহার অধীনে। 26 বছর ধরে চিকিৎসা চলেছে। সুস্থ হননি সুমিতা । তাহলে 17 দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেন । কী ভাবে সম্ভব হল? সরকারি এই হাসপাতালের অধিকর্তা বলেন, "কেন এতদিন সুস্থ হয়ে ওঠেননি, সেটা আমি বলতে পারব না ।" এটা কি মিরাকেল ? IOP-র অধিকর্তা বলেন, "26 বছর ধরে অসুস্থ। 17 দিনের চিকিৎসায় 100 শতাংশ সাড়া মিলেছে। এই হিসাবে দেখতে গেলে মিরাকেল। আর, সাইকিয়াট্রিতে এই ধরনের ঘটনা দেখা যায়। গত 20 বছরে সাইকিয়াট্রিতে এতটাই অগ্রগতি হয়েছে, যা মেডিকেল সায়েন্সের অন্য কোনও শাখায় হয়নি। এটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন বলা যেতে পারে। একমাত্র সাইকিয়াট্রি মিরাকেল ঘটাতে পারে।"
একই সঙ্গে তিনি বলেন, "62 বছর বয়সি এই রোগিণীকে তাঁর স্বামী আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। রোগিণীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সঙ্গে কে এসেছেন? তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে কেউ আসেনি। বললাম, এই যে আপনার সঙ্গে আপনার স্বামী এসেছেন। মহিলা তখন বললেন, তাঁর স্বামী নন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে তাঁর স্বামীর মৃতদেহ । তাঁর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বেড়ান ।" চিকিৎসক প্রদীপ সাহা বলেন, "কত দিন ধরে অসুস্থ, এই বিষয়টি রোগিণীর স্বামীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 26 বছর ধরে অসুস্থ । কী হয়েছে ? এ কথা জানতে চাওয়া হলে রোগিণীর স্বামী বলেন, অদ্ভুত আচরণ করে । রেগে যায় । মাঝে মধ্যে তাঁকে বলেন তিনি ডেড বডি । তাঁর সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও সমস্যা দেখা দেয় ।"
কেন? ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির অধিকর্তার কথায়, "রোগিণীর স্বামী বলেন, তাঁর স্ত্রী মনে করেন প্রতিবেশীরা সকলে মারা গেছেন। মৃতদেহগুলি ষড়যন্ত্র করছে যাতে তাঁকেও তাঁদের সঙ্গে সামিল করা যায় । এই জন্য তাঁকে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ধরনের সমস্যা রয়েছে রোগিণীর ।" এই অবস্থায় মহিলাকে হাসপাতালে ভরতি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । ভরতির পর কী দেখা গেল ? রোগিণীর আচার-আচরণ, চলাফেরা পর্যবেক্ষণে রাখা হল । এত বছর ধরে যে সব ওষুধ চলেছে, সে সব স্টাডি করা হল । এরপর দেওয়া হল নতুন ওষুধ । দেখা গেল চিকিৎসায় সাড়া মিলছে ।
চিকিৎসক প্রদীপ সাহা বলেন, "রোগিণী এরপর বলেন, তাঁর স্বামী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন না। তাঁকে বলা হয়, তাঁর স্বামীর তো মৃত্যু হয়েছে। তাঁর স্বামীর মৃতদেহ তাঁর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বেড়ান । এরপরে স্বামীকে দেখতে চান তিনি । স্বামীকে চিনতে পারেন । মহিলা তাঁর ভুল বুঝতে পারেন ।" তাঁকেকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় । আপাতত ওষুধ চলবে বলে জানানো হয়েছে।
এই ধরনের সমস্যা কেন দেখা দেয় ? সরকারি এই হাসপাতালের অধিকর্তা বলেন, "যদি রুট খোঁজা হয়, এক কথায় যদি বলার চেষ্টা করি, তা হলে বলতে হবে, আজ অবধি আমাদের জানা নেই ।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "এ ছাড়াও বলা যায়, কিছুটা জেনেটিকালি হতে পারে । এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টরসও কিছুটা কাজ করে ।" বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে ওই মহিলার এই অসুস্থতা শুরু হয়েছিল বলে তিনি জানান।