কলকাতা, 28 জুলাই: মুসলিম ওবিসি মহিলারা কেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা পাবেন না ? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই শুক্রবার বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে তুললেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও ডেবরার বর্তমান বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এদিন প্রশ্নোত্তর পর্বে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কের প্রশ্নে খানিক অস্বস্তিতে পড়েছে দল। এদিন বিধানসভায় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দেন, তৃণমূল বিধায়ক। এদিন হুমায়ুন প্রশ্ন করেন, "এসসি, এসটিদের জন্য লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়। তাহলে মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে কেন 1000 টাকা দেওয়া হবে না ?" রাজ্যের নারী শিশু এবং সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা যদিও এর পালটা জবাব দিতে দেরি করেননি। তিনি বলেন, "ধর্মের ভিত্তিতে লক্ষীর ভাণ্ডার তৈরি করা হয়নি। বরং লক্ষীর ভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। এটা মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। তিনি এই নিয়ে ভাগাভাগি চান না।"
এদিন অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক ৷ ভোট প্রচারে তাঁর অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গও তুলে আনেন হুমায়ুন তাঁর বক্তব্যে। হুমায়ুন জানান, পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে গিয়ে সংখ্যালঘু মহিলারা তাঁর কাছে বিস্তর অভিযোগ করেছেন ৷ তিনি বলেন, "আমরা আপনাদের ভোট দিই। অথচ আমাদের লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারে 500 টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু যারা ভোট দেয় না, তাদের দেওয়া হয় 1000 টাকা।" বিধায়কের এই বক্তব্যের জবাবও দিয়েছেন মন্ত্রী। শশী পাঁজা বলেন, "রাজনীতির ভিত্তিতেও লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার করা হয়নি।" এরপরই অবশ্য প্রতীচী ট্রাস্টের একটি সমীক্ষার প্রসঙ্গ টেনে আনেন হুমায়ুন কবীর ৷ তিনি বলেন, "সমীক্ষা বলছে গ্রাম বাংলার সংখ্যালঘু মহিলাদের অবস্থা ভালো নয়। মাত্র এক শতাংশ সংখ্যালঘু মহিলারাই চাকরিজীবী। 30 থেকে 35 শতাংশ মহিলা সেখানে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। বাকিদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে আনা খুব প্রয়োজন।" খুব স্বাভাবিকভাবেই বিধায়ক যখন একের পর এক প্রশ্ন তুলে রাজ্যে সংখ্যালঘু মহিলাদের করুন অবস্থার কথা তুলে ধরছেন তা অবশ্যই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় শাসকের কাছে। আর এই অবস্থায় গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন খোদ অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "এই নিয়ে আপনার কাছে যে রেকর্ড আছে তা বিধানসভায় জমা দেবেন।"
খুব স্বাভাবিকভাবেই শাসকদলের বিধায়কের এই প্রশ্ন বিধানসভার অন্দরে একটা অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি করে রাজ্যের শাসক দলের জন্য। অধিবেশন চলাকালীনই শাসকদলের বিধায়ক তাপস রায়, দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস হুমায়ুনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা বিধায়কের কাছে জানতে চান, কী করতে চাইছেন তিনি। কেন এই ধরণের প্রশ্ন বিধানসভায় করা হচ্ছে। কারণ এই সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন যে হয়েছে তা প্রশ্নাতীত। তারপরও বিধানসভায় কেন তিনি এই প্রশ্ন করতে গেলেন। একইভাবে, শাসকদলের তরফ থেকে প্রশ্ন ওঠে প্রশ্নটি লিখিত আকারে আগে জমা দিতে হয় পরিষদীয় দলের ঘরে ৷ কীভাবে এরপরও নজর এড়িয়ে এই প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত বিধানসভার অন্দরে পর্যন্ত পৌঁছে গেল।
আরও পড়ুন: 'ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি, চিরকুটে চাকরি' অভিযোগ শুভেন্দুর
এসবের মধ্যেই সাংবাদিকদের একাংশ সেখানে উপস্থিত হওয়ায় আলোচনা ভেস্তে যায়। পরে অবশ্য সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কোনও উত্তর দিতে রাজি হননি হুমায়ুন কবীর। বরং সাংবাদিকদের এড়িয়ে দ্রুত গতিতে বিধানসভা ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। বিধানসভা ছেড়ে হুমায়ুন কবীর চলে গেলেও এই নিয়ে চর্চা জারি ছিল বিধানসভায়। এই নিয়ে রাজ্যের নারী শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "উনি কোনও রাজনৈতিক দলের কথা শুনে এসব কথা বলছেন।" এখানেই অবশ্য শেষ হয়ে যায়নি গোটা বিষয়টি। দিনের শেষে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়ে দেন, ওঁর যদি মনে হয় তৃণমূলে সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ হচ্ছে না, তাহলে যেখানে গেলে কাজ হবে উনি সেখানে যেতে পারেন।